প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হক কারো মন্তব্যেই অস্বাভাবিকতা দেখছেন না আইন বিশেষজ্ঞরা। দুজনের বক্তব্যকেই তারা ‘যৌক্তিক’ বলেছেন।
তাদের মতে, সুশাসন এবং নাগরিক অধিকারের খাতিরে রাষ্ট্রের অঙ্গগুলোর (আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ এবং নির্বাহী বিভাগ) মধ্যে মাঝেমধ্যে ‘দন্দ্ব’ হতে পারে। প্রধান বিচারপতির বক্তব্য ও তার পরিপ্রেক্ষিতে আইনমন্ত্রীর মন্তব্যে ‘দন্দ্বের’ বিষয়টা স্পষ্ট উল্লেখ করে তারা বলেছেন, দ্বন্দ্ব হলেও রাষ্ট্রের অঙ্গগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।
মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি বলেন: বিচার বিভাগের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করছে সব সরকার। তারা বিচার বিভাগকে নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে।
পরদিন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন: মাননীয় প্রধান বিচারপতির প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল হয়ে বলব, কোন দেশে কিন্তু বিচারকার্য ছাড়া মাননীয় প্রধান বিচারপতিরা এত উষ্মা, এত কথা পাবলিকলি বলেন না। উনার যদি কোনো দুঃখ-কষ্ট থেকে থাকে এসব কথা যদি উনি পাবলিকলি না বলে আমাদের জানান তাহলে আমরা হয়তো সেগুলো শোধ করার চেষ্টা বা সুরাহা করার চেষ্টা করতে পারি।
আইনমন্ত্রী এবং প্রধান বিচারপতি– দুজনই ‘যৌক্তিক কথা বলেছেন’ মন্তব্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন সুশাসন, গণতন্ত্র ও নাগরিক অধিকার রক্ষায় রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের (আইন, বিচার ও নির্বাহী) মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যের কথা বলেন।
তিনি বলেন: আমাদের গণতান্ত্রিক দেশে লিখিত সংবিধান আছে। সেখানে সরকারের তিন অঙ্গ: আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগ। এই তিন বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া, সহযোগিতার সমন্বয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। এই তিন বিভাগের মধ্যে দন্দ্ব হতে পারে। এই দন্দ্ব আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য হতে পারে, নাগরিক অধিকারের জন্য হতে পারে।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্নে প্রধান বিচারপতির ভূমিকার প্রশংসা করেন হাফিজুর রহমান। বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টাকেই দন্দ্বের মূল কারণ বলে মত দেন তিনি।
তিনি বলেন, সরকারের দুটি অঙ্গ আইন/সংসদ এবং নির্বাহী/প্রশাসন-এর নিয়ন্ত্রণ করেন রাজনীতিবিদরা। তারা বিচার বিভাগকেও নিয়ন্ত্রণ করতে চান। এদের অনেকেই প্রধান বিচারপতির কাজকে পছন্দ করছেন না। তাই সাম্প্রতিক এই ‘দন্দ্ব’ হচ্ছে।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতার গুরুত্বের কথা বলতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদাহরণ দেন এই অধ্যাপক।
তিনি মনে করিয়ে দেন: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কয়েকটি নির্বাহী আদেশ দেশটির আদালত স্থগিত করে দেন, ট্রাম্পের উদ্যোগগুলো নাগরিক অধিকারের ব্যত্যয় ঘটাতো বলেই স্বীকৃত।
‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশ, র্যাব জনগণের অধিকার লঙ্ঘনের মতো কাজ করলে রক্ষাকবচ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রয়োজন। সুশাসন, ন্যায়বিচার, নাগরিক অধিকার রক্ষার জন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বিকল্প নেই।’