করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে আর্থিক সংকট মোকাবিলায় চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে কৃষকদের জন্য ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকা ঋণ বরাদ্দ রেখেছে ব্যাংকগুলো। যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ বেশি।
বুধবার নতুন অর্থবছরের জন্য কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা এবং কর্মসূচি প্রণয়ন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগ। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নীতিমালায় বলা হয়, টেকসই উন্নয়নের নির্ধারিত লক্ষ্যের প্রথম ও প্রধান ৩টি লক্ষ্য হচ্ছে দারিদ্র্য বিমোচন, ক্ষুধা মুক্তি এবং গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন।
তাই করোনা মহামারির আর্থিক সংকট মোকাবিলায় এবং সরকারের কৃষি ও কৃষকবান্ধব নীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে টেকসই এই ৩টি খাতের উন্নয়নের জন্য পল্লী অঞ্চলে ব্যাপকহারে কৃষি ঋণ বিতরণ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
চলতি অর্থবছরে ঘোষিত ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণের মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংক ঋণ বিতরণ করবে ১১ হাজার ৪৫ কোটি টাকা। এছাড়া বেসরকারি ও বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ঋণ দেয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে ১৫ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যাংকগুলো মোট ২২ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণ করেছে, যা ওই অর্থবছরে মোট লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ বা এক হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা কম। গত অর্থবছরে কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৪ হাজার ১২৪ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাবে দেশের অন্যান্য খাতে মন্দা দেখা দিলেও সচল রয়েছে কৃষি খাতের উৎপাদন। তাই মহামারিতে ঋণ বেশি প্রয়োজন ছিল কৃষকের। কিন্তু ব্যাংকগুলো তাদের সঠিক সময় ঋণ সহায়তা দিতে পারেনি। ফলে প্রথমবারের মতো কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে ব্যাংকগুলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে কৃষি ও পল্লী ঋণ পেয়েছেন মোট ৩০ লাখ ৬৬ হাজার ৭৮৬ জন সুবিধাভোগী। যার মধ্যে ব্যাংকগুলো নিজস্ব নেটওয়ার্ক ও এমএফআই লিঙ্কেজের মাধ্যমে ১৫ লাখ ১৪ হাজার ৩৬৭ জন নারী প্রায় ৮ হাজার ৩৫৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ পেয়েছেন। আর ২৩ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮৮ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ১৬ হাজার ২৫০ কোটি টাকা পেয়েছেন। এছাড়া চর, হাওর প্রভৃতি অনগ্রসর এলাকার ৭ হাজার ১৭৯ জন কৃষক কৃষি ও পল্লী ঋণ পেয়েছেন প্রায় ২১ কোটি ২১ লাখ টাকা।
পরিবেশবান্ধব ও টেকসই কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলে জনসাধারণের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে উদ্ভূত সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং কৃষকদের নিকট কৃষি ঋণ সহজলভ্য করার লক্ষ্যে
বর্তমান কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালায় সময়োপযোগী বপশ কিছু বিষয় যুক্ত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যেমন-
১. গয়াল ও তিতির পাখি পালনের জন্য ঋণ প্রদান এবং এ সংক্রান্ত ঋণ নিয়মাচার সংযোজন।
২. বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে ঋণ প্রদান।
৩. কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের আওতায় গরু মোটাতাজাকরণে ঋণ প্রদান।
৪. ঋণ নিয়মাচারে একর প্রতি ফসলের ঋণ সীমা বাড়ানো হয়েছে।
বর্তমানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় কৃষিখাতে চলতি মূলধন সরবরাহের উদ্দেশে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৫ হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম পরিচালিত হচ্ছে।
এছাড়াও সুদ-ক্ষতি সুবিধার আওতায় তেল ও মসলা জাতীয় ফসল ও ভুট্টা ছাড়াও শস্য ও ফসল খাতে স্বল্প সুদে (৪ শতাংশ হারে) কৃষকদের অনুকূলে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরজুড়ে বিদ্যমান থাকবে।