বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ বলেই প্রতিবছর এই দেশের কৃষকরা নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়। এর ওপর আছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বন্যা ঘূর্ণিঝড় খরা নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ দেশের কৃষকরা সারাজীবনই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এদেশের বিভিন্ন খাতে উন্নয়ন দৃশ্যমান হলেও কৃষিখাতে বস্তুত এখনও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। প্রযুক্তি নির্ভর হলেও কিছুটা ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি কৃষকের। কৃষকেরা সারাবছর ঋণ কিংবা পাইকারদের হাতের মুঠোয় নিষ্পেষিত হতে থাকে।
বাংলাদেশের কৃষকদের ভাগ্যের উন্নতি হয়নি। সেই পুরনো মলিন ছবি। তার ওপর এ বছর করোনা মহামারিতে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে গেছেন। সরকার বিভিন্নভাবে কৃষকদের দুর্ভোগ লাঘবে কিছু উদ্যোগ নিলেও সেটা খুব বেশি কার্যকর হয়নি। কোনো মধ্যস্বত্বভোগি ছাড়া সরাসরি প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে সরকার গত কয়েক বছর যাবৎ ধান কিনে আসছে। এতে এ দেশের অবহেলিত অথচ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত কৃষকদের সামান্য হলেও উপকার হয়।
আসন্ন আমন মৌসুমে দুই লাখ মেট্রিক টন ধান, ছয় লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল এবং ৫০ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল কিনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রান্তিক কৃষকদের নিকট থেকে সরাসরি ও অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে ধান, ৩৭ টাকা কেজি দরে সিদ্ধ চাল এবং ৩৬ টাকা কেজিতে আতপ চাল কেনা হবে বলে সচিবালয়ে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জানান: ৭ নভেম্বর থেকে ধান এবং ১৫ নভেম্বর থেকে সিদ্ধ ও আতপ চাল সংগ্রহ শুরু হবে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এসব খাদ্যশস্য সংগ্রহ করা হবে। গত বছর আমন মৌসুমে ২৬ টাকা দরে ৬ লাখ মেট্রিক টন আমন ধান, ৩৬ টাকা দরে ৩ লাখ ৩৮ হাজার মেট্রিকটন সিদ্ধ চাল এবং ৩৫ টাকা দরে ৪৩ হাজার ৪০১ মেট্রিক টন আতপ চাল সংগ্রহ করেছিল সরকার। প্রান্তিক কৃষকের ধানের ন্যায্য দাম প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে সরকার প্রতি বছর বোরো মৌসুমে ধান ও চাল সংগ্রহ করলেও আগে আমন মৌসুমে শুধু চাল সংগ্রহ করা হত। গত বছর থেকে আমন মৌসুমে চালের পাশাপাশি ধানও সংগ্রহ করা হচ্ছে।
আমরা চাই সরকারি এই সিদ্ধান্ত যেন কোনো ফিতায় কৃষকের গলায় ফাঁস হয়ে না যায়। এ ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রতি বছরই এই চাল কেনা নিয়ে কেলেংকারি হয়। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে সরকারকে প্রমাণ দিতে হবে সরকার প্রকৃত কৃষি বান্ধব। প্রকৃত প্রান্তিক কৃষক যেনো উপকৃত হয় এইসব উদ্যোগে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। নতুবা সব কথার কথা হয়ে যাবে। কৃষক কোনদিন তার ন্যায্য শ্রমের বিনিয়োগের মূল্য পাবে না।