চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

কূটনৈতিক পাড়ায় ইতালীয় খুনে কে সেই ষড়যন্ত্রী!

আমাদের দশা যেন সেই মিথ্যেবাদী রাখালের ‘বাঘ আসছে’ ‘বাঘ আসছে’ বলে চিৎকারের মতো। যেদিন সত্যিকারের বাঘ আসে, সেদিন কেউ আর সাড়া দেয় না!

আমাদের দেশে একটা চক্র আছে যারা অন্ধকারের অপশক্তি। এরা ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছু বোঝে না। এরা সব সময়ই চায়, দেশে অস্থিতিশীলতা বজায় থাকুক। জল ঘোলা হোক। দেশ, দেশের ভাবমূর্তি, এমনকি জনগণ পর্যন্ত রসাতলে যাক। তারা ঘোলা জলে মাছ শিকারের জন্য মুখিয়ে থাকে।

আর আরেক দল মানুষ আছে যারা যেভাবে, যা করা উচিত-তা করে না। অপকর্ম-পাপকে তারাও উৎসাহের সঙ্গে সমর্থন করে। নিজেরাও অনাচারকেই আচার বলে মনে করে। নিজেদের পাপ, ব্যর্থতা আর অপকর্ম ঢাকতে তারা সারাক্ষণই অজ্ঞাত ষড়যন্ত্রকারীর উপরই দায় চাপায়। যা কিছু ঘটুক, সব ষড়যন্ত্র, ষড়যন্ত্রকারীরা ঘটিয়েছে-এমন একটা প্রচার চালানো হয়। কিন্তু অজ্ঞাত ষড়যন্ত্রকারীদের ধরে লোক চক্ষুর সামনে আনা, তাদের ষড়যন্ত্র প্রমাণ করার কাজটি কখনও হয় না।

এতে প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীরা উৎসাহ পায়, শক্তিশালী হয়। তারা নির্বিঘ্নে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে চলে। ‘যত দোষ নন্দ ঘোষের’ মত ষড়যন্ত্রকারীদের উপর সব সময় সব কিছুর দায় চাপানোর প্রবণতার কারণে মানুষও এখন ‘ষড়যন্ত্র’কে আর ষড়যন্ত্র মনে করে না। ষড়যন্ত্র যেন অক্ষম অনাচারপ্রিয় শাসকদের কারো কারো কাছে এখন ‘বাদ্যযন্ত্রে’ পরিণত হয়েছে !

অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর বানচাল করতে নানা ধরনের ষড়যন্ত্রের জাল বোনা হচ্ছিল। না হলে বাংলাদেশ যখন সবচেয়ে বেশি শান্তিপূর্ণ সময় পার করছে, তখন অস্ট্রেলিয়া কর্তৃপক্ষ কেন জঙ্গি ইস্যুতে নিরাপত্তার অজুহাত তুলবে? নিশ্চয়ই তাদের কাছে নেতিবাচক কোনো বার্তা কোনো না কোনো মহল থেকে তোলা হয়েছে! কিন্তু তারা কারা ?

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাম্প্রতিক পারফরমেন্সে অস্ট্রেলিয়ান ভয় পেয়ে নিরাপত্তার অজুহাত তুলেছে-এমনটি মনে করা হবে বাতুলতা মাত্র। কারণ অস্ট্রেলিয়া দীর্ঘদিন ধরে প্রফেসনাল ক্রিকেট খেলে এবং ক্রিকেট দুনিয়ায় রাজত্ব করছে। তারা বাংলাদেশের মতো উদীয়মান ক্রিকেটশক্তির ভয়ে নিরাপত্তার ঝুঁকির মতো এমন একটা গুরুতর অভিযোগ আনবে-সেটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।

কানাঘুষা শোনা যাচ্ছে যে, নারী ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফরের কারণে নাকি অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের প্রতি নাখোশ হয়েছে। এই যুক্তিও মেনে নেয়া কঠিন। বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফর নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মাথা ঘামানোর কথা নয়। কেননা পাকিস্তান ক্রিকেটকে এক ঘরে করার কোনো মিশন বর্তমানে চালু আছে-এমন কোনো আলামৎ কোথাও দেখা যায়নি। তবে পাকিস্তানে কেন নারী ক্রিকেটারদের পাঠানো হলো, না পাঠালে কী ক্ষতি হতো, (আল্লাহ না করুক) যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, তবে তার দায় কে নেবে-এসব প্রশ্ন জোরেশোরে আলোচিত হচ্ছে। সরকার এবং ক্রিকেট বোর্ডের কর্তাব্যক্তিদের পাকিস্তান সফরের ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা কোথায় তা কেউ বলতে পারে না। নিশ্চয়ই গোপন কোনো মহৎ উদ্দেশ্য আছে, যা আমরা জানি না, কর্তাব্যক্তিরাও তা প্রকাশ করতে চাচ্ছেন না। তবে ‘পবিত্র গোপনীয়তা’ বলে একটা কথা আছে !

যা হোক, অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে পুড়িয়ে, দফায় দফায় মিটিং-সিটিং করে, সব ধরনের আবদার মেনে, সর্বোচ্চ নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে অস্ট্রেলিয়ান কর্তৃপক্ষকে যাও একটা ইতিবাচক দিকে নিয়ে আসার চেষ্টা চলছিল, ঠিক তখন আবার বিনা মেঘে বজ্রপাত। আকস্মিকই কূটনৈতিক পাড়ায় একজন বিদেশী নাগরিক খুন হয়েছেন! রাজধানীর গুলশানে মিসরীয় দূতাবাসের কাছে সোমবার সন্ধ্যায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ইতালির এক নাগরিক মারা গেছেন।

এই ঘটনার আগে পরে অস্ট্রেলিয়া এবং তাদের জ্ঞাতি ভাই যুক্তরাজ্য তাদের নাগরিকদের জন্য ভ্রমণ সতর্কতা জারি করছে। যুক্তরাজ্যের দ্যা ফরেন এন্ড কমনওয়েলথ অফিসের (এফসিও) এক বিবৃতিতে এ সতর্কতা জারি করা হয়।

এই ঘটনাটি বাংলাদেশের শান্তি-স্থিতি ও নিরাপত্তার জন্য অশনিসংকেত। এই খুন কোনো সাধারণ হত্যকাণ্ড নয়। এর পেছেনে সত্যি সত্যি বড় ষড়যন্ত্র আছে। এখন এই ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করা সরকারের দায়িত্ব।

আমাদের দেশের আইন শৃংঙ্খলা পরিস্থিতি যে ভালো, এখানে কারও নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই, এটা প্রমাণ করার জন্য যা করা দরকার তার সবই করতে হবে। ‘ষড়যন্ত্রী’ সাহেবদের লীলা বোঝা ভার। তারা যে দেশের ভাবমূর্তিকে ধুলায় মিশিয়ে দিতেই এমন একটি ঘটনা ঘটিয়েছে তা বলাই বাহুল্য। এ ঘটনায় পুলিশ ও গোয়েন্দা ব্যর্থতা আছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। কূটনৈতিক পাড়ায় গুলি করে মানুষ খুনের দায় প্রশাসনকেই নিতে হবে। কিন্তু সবার আগে দরকার খুনিদের গ্রেপ্তার ও ষড়যন্ত্রের জাল উদ্ধার করা। তাদের বিষদাঁত উপড়ে ফেলা। এটা করতে না পারলে সব অর্জন বিফলে যাবে। অন্ধকারের অপশক্তির কাছে আমরা হেরে যেতে পারি না। সরকারকে এই খুনের ঘটনার প্রতিকারে যত দ্রুত সম্ভব সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

শুধু বুলি নয়, কর্মে ও আচরণে প্রমাণ করতে হবে, দেশে নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিঘিন্ত হওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি ঘটেনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণের একটি সুযোগ এসেছে। দেশবাসী আশা করে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফরের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগেও ঘটনাটির একটি যৌক্তিক পরিণতি টানা হবে। সব সমালোচনা ও ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ‘ক্রিকেট যুদ্ধ’ অনুষ্ঠিত হবে।