আবুল কাশেম হৃদয় : কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নারী ভোটাররাই এখন বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচনে জয়লাভ করতে তাদের সমর্থন পাওয়াই এখন প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর টার্গেট। নারী প্রার্থী হওয়ায় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আন্জুম সুলতানা সীমা এদিক থেকে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী সদ্য সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর নারী ভোটার সমর্থকও কম নয়।
গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রগুলোতে পুরুষ ভোটারের চেয়ে নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে মোট ভোটার ২ লাখ ৭ হাজার ৫৬৬ জন, এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ২ হাজার ৪৪৭ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ৫ হাজার ৫৬৬ জন । পুরুষ ভোটারের চেয়ে নারী ভোটার সংখ্যা তিন হাজারের বেশি।
তবে গত নির্বাচনে নারী ভোটারের চেয়ে এবারের নির্বাচনে নারী ভোটার কমেছে। গত নির্বাচনে পুরুষ ভোটারের চেয়ে নারী ভোটার পাঁচ হাজার বেশি ছিল।
নারী ভোটারদের প্রথম পছন্দ আমি, এ দাবি করে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আন্জুম সুলতানা সীমা বলেন, উপজেলা নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছিলাম। ৮০ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলাম। সংরক্ষিত ওয়ার্ডেও নির্বাচন করেছি। সেখানেও নারীরাই আমাকে নির্বাচিত করেছে। আমার সমর্থকদের মধ্যে নারী ভোটারই বেশি।
অপর দিকে ২০ দলীয় জোটের মনোনীত প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু বলেন, নারী হলে যে নারী ভোট পাওয়া যাবে এমনটা নয়। নারায়ণগঞ্জে মেয়র আইভি ভোট পেয়েছেন নারী প্রার্থী এ কারণে নয়। তিনি ভোট পেয়েছেন কাজের কারণে। আর তার কাছে সেখানকার মানুষ নিরাপত্তা পায়। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কেউ চাঁদা নেয় না। ধানের শীষের ভক্ত নারী বেশি। কুমিল্লার নারী ভোটারদের বেশির ভাগ আমাকে সমর্থন করে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের একজন ভোটার আনোয়ারা বেগম জানান, শহরের পূর্বাঞ্চলের এবং দক্ষিণাঞ্চলের নারী ভোটাররা নির্বাচনে প্রধান ফ্যাক্টর। তারা লাইন ধরে ভোট দিতে যায়। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের টার্গেট থাকে তাদের কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া। যে যত বেশি নারী ভোটার কেন্দ্রে নিতে পারবে ফলাফল তার দিকেই বেশি ঝুঁকবে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটারদের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১ নং ওয়ার্ডের মোট ভোটার সংখ্যা ৬৫৭৭ জন, এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩২২০জন এবং মহিলা ভোটার ৩৩৫৭জন। ৪নং ওয়ার্ডের মোট ভোটার সংখ্যা ৭১৫২জন, এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩৪৩৪জন এবং মহিলা ভোটার ৩৭১৮জন। ৭নং ওয়ার্ডের মোট ভোটার সংখ্যা ৭৭৯১জন, এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩৮২৬জন এবং মহিলা ভোটার ৩৯৬৫জন। ৮নং ওয়ার্ডের মোট ভোটার সংখ্যা ৮২৯৩জন, এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩৯৩১জন এবং মহিলা ভোটার ৪৩৬২জন। ১০নং ওয়ার্ডের মোট ভোটার সংখ্যা ৯৭৭৩জন, এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪৬৬০জন এবং মহিলা ভোটার ৫১১৩জন।
১২নং ওয়ার্ডের মোট ভোটার সংখ্যা ৬৭০৩জন, এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩২৫৬জন এবং মহিলা ভোটার ৩৪৪৭জন। ১৩নং ওয়ার্ডের মোট ভোটার সংখ্যা ১১০৩৫জন, এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫২১৯জন এবং মহিলা ভোটার ৫৮১৬জন। ১৪নং ওয়ার্ডের মোট ভোটার সংখ্যা ৭৭৯২জন, এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩৭০৮জন এবং মহিলা ভোটার ৪০৮৪জন। ১৫নং ওয়ার্ডের মোট ভোটার সংখ্যা ৬৪২৬জন, এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩০৯৭জন এবং মহিলা ভোটার ৩৩২৯জন। ১৬নং ওয়ার্ডের মোট ভোটার সংখ্যা ৮৩৭৪জন, এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪০৩০জন এবং মহিলা ভোটার ৪৩৪৪জন। ১৭নং ওয়ার্ডের মোট ভোটার সংখ্যা ৯৭০৯জন, এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪৭৪৪জন এবং মহিলা ভোটার ৪৯৬৫জন। ১৮নং ওয়ার্ডের মোট ভোটার সংখ্যা ৯৫৮৩জন, এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪৬৫১জন এবং মহিলা ৪৯৩২ জন ভোটার।
অপরদিকে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সদর দক্ষিণ উপজেলার ২১ নং ওয়ার্ডের মোট ভোটার সংখ্যা ১১১৯৮জন, এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫৫৪২জন এবং মহিলা ভোটার ৫৬৫৬জন।
এসব ভোটার পরিসংখ্যান সামনে রেখে প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থী ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের লক্ষ্য এখন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাওয়া। তাদের আকৃষ্ট করতে বা তাদের ভোট আদায়ে কৌশল নির্ধারণ করে আগামী ৩০ মার্চের নির্বাচনে জয়লাভ করতে কাজ করে যাচ্ছেন নৌকা-ধানের শীষের প্রার্থী-সমর্থকরা।