কিশোরদের যে সময় নিজের জীবন গড়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত করার কথা, সেই বয়সে তারা জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধের সঙ্গে। এ অপরাধের মাত্রাও আবার ক্ষুদ্র নয়, বরং খুনের মতো অপরাধের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছে তারা। এমন অপরাধীর সংখ্যাও ভেবে দেখার মতো। কারণ, র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সদ্য বিদায়ী পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. এমরানুল হাসান এ বিষয়ে যে তথ্য জানিয়েছেন, তা খুবই শঙ্কার।
চ্যানেল অনলাইনকে সম্প্রতি দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি জানান: গত তিন বছরে কিশোর গ্যাংয়ের প্রায় ৪শ’ সদস্যকে আটক করেছে র্যাব। এর মধ্যে চলতি বছর ১৭৪ জন এবং গত দুই বছরে ১৯০ জন কিশোর গ্যাং সদস্যকে আটক করে তারা।
চ্যানেল আই অনলাইনের প্রতিবেদনে জানা যায়, সর্বশেষ গত বুধবার রাতে কিশোর গ্যাংয়ের দুই গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মোহাম্মদপুর চান মিয়া হাউজিং সোসাইটিতে খুন হয় স্কুলছাত্র মহসিন।
এর আগে গত মঙ্গলবার গাজীপুরে কিশোর গ্যাং চক্রের হাতে নূরুল ইসলাম (১৫) নামে এক কিশোর খুন হয়। সিনিয়র এক কিশোর গ্যাং সদস্যকে ‘তুই’ বলে সম্বোধন করার জেরে নূরুল ইসলামকে কুপিয়ে ওই চক্রের সদস্যরা হত্যা করে বলে অভিযোগ।
এছাড়াও গত ৭ জুলাই বান্ধবীর সঙ্গে ছবি তোলার জেরে দুই গ্যাং গ্রুপের দ্বন্দ্বে শুভ আহমেদ (১৬) নামের নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়।
এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, কেন ক্রমেই ভ্রাতৃঘাতী হয়ে উঠছে কিশোর প্রজন্ম? এ বিষয়েও কথা বলেছেন র্যাবের সদ্য বিদায়ী এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন: মূলত কিশোর বয়সে একটা হিরোইজম চিন্তাভাবনা থেকেই গ্যাং কালচারটা গড়ে ওঠে। এরপর তারা কার বা বাইক রেস করে, মাদকে ঝুঁকে পড়ে, ছিনতাই, ইভটিজিং, বিভিন্ন সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ, দেয়াল লিখনে নিজেদের জানান দেয়।
এমরানুল হাসান বলেন: ২০১৭ সালে উত্তরায় আদনান হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে দেশে গ্যাং কালচারের পরিচিতি ঘটে। এরপর আমরা চেয়েছি এদেশে যেন কখনো পাশ্চাত্যের অনুকরণে গ্যাং কালচার গড়ে না উঠে। তবে আমরা এই গ্যাং কালচার গ্রুপকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি বিধায় এখনও হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটছে।
গ্যাং কালচারের বিস্তার রোধে র্যাবের এই প্রচেষ্টাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তবে এই কালচার বন্ধে র্যাব যে পুরোপুরি সফল হয়নি, তা স্পষ্ট। তাই এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। একইসঙ্গে কিশোররা মারাত্মক অপরাধের সঙ্গে যাতে জড়িত হতে না পারে সেজন্য সামাজিকভাবে এবং গণমাধ্যমে সচেতনতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।
সর্বোপরি একজন কিশোরকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পরিবারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এজন্য মা-বাবা এবং পরিবারের সবার ঠিকমতো সময় দিতে হবে সন্তানদের। কিন্তু নানা কারণে মা-বাবা কিংবা পরিবারের অন্য সদস্যরা এখন আর সন্তানদের ঠিকমতো সময় দেন না বা দিতে পারেন না। এর ওপর সোশ্যাল মিডিয়াসহ ইন্টারনেটে আসক্তির বিষয়ও রয়েছে। তাই এসব বিষয়গুলো আমলে নিয়ে গ্যাং কালচার বন্ধে এগিয়ে আসতে আমরা সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।