ভারত উপমহাদেশের উত্তরতম প্রান্তে অবস্থিত এক ভৌগোলিক এলাকা হচ্ছে কাশ্মির। মধ্য-উনবিংশ শতক অবধি ‘কাশ্মির’ বলতে শুধুই বিশাল হিমালয় পর্বতমালা ও পীর পঞ্জল পর্বতশ্রেণির মধ্যবর্তী এলাকা বোঝাত। বর্তমানে কাশ্মির বলতে ভারত-শাসিত জম্মু ও কাশ্মির (তিনটি বিভাগ: জম্মু, কাশ্মির উপত্যকা ও লাদাখ),পাকিস্তান-শাসিত আজাদ কাশ্মির ও গিলগিট-বাল্টিস্থান এবং চীন-শাসিত আকসাই চীন ও ট্রান্স-কারাকোরাম ট্র্যাক্ট বোঝানো হয়ে থাকে।
প্রথম সহস্রাব্দের শুরুতেই কাশ্মির হিন্দু ধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্মের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়। নবম শতক নাগাদ কাশ্মিরে শৈব ধর্ম (হিন্দু ধর্মেরই একটি শাখা) প্রবল হয়। ১৩৩৯ সালে শাহ মীর কাশ্মিরের প্রথম মুসলিম শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন, সূচনা করেন ‘সালাতিন-ই-কাশ্মির’ বা ‘শাহ মীর’ রাজবংশের। ১৫৮৬ থেকে ১৭৫১ নাগাদ কাশ্মির ছিল মোগল সাম্রাজ্যের অংশ। এরপর ১৮২০ সাল অবধি কাশ্মির আফগান দুররানী বংশের অধীনস্ত থাকে। ১৮২০ সালে শিখ রাজা রণজিত সিংয়ের নেতৃত্বে শিখরা কাশ্মিরকে নিজেদের আওতায় আনতে সক্ষম হয়। ১৮৪৬ সালে প্রথম এ্যাংলো-শিখ যুদ্ধে শিখরা পরাজিত হলে এবং বৃটিশরা এই অঞ্চল কিনে নেবার পর জম্মুর রাজা গুলাব সিং বৃটিশদের কাছ থেকে পুনরায় ‘অমৃতসর চুক্তি’-র আওতায় কাশ্মিরের নতুন শাসক বা রাজা হন। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ হওয়ার আগ পর্যন্ত গুলাব সিংয়েরা বংশধররাই এই অঞ্চলের রাজা থাকে।
১৯৪৭ সালে বৃটিশ শাসনের অবসান ও ভারত ভাগের সময়ে ৫৬২টি দেশীয় ও রাজ্যের উপর বৃটিশ সার্বভৌমত্ব শেষ হয়। এখন সরাসরি রাজ্যগুলোর উপরেই সিদ্ধান্ত নেয়ার দায় চাপে যে ভারত অথবা পাকিস্তান- কোন রাষ্ট্রে সে যোগ দেবে? জম্মু ও কাশ্মির ছিল এই রাজ্যগুলোর ভেতর সবচেয়ে বড়। তবে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই রাজ্যের হিন্দু রাজা হরি সিং মুসলিম প্রজাদের রোষের ভয়ে না ভারতে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন, আবার পাকিস্তানে যোগ দিলে হিন্দু ও শিখ প্রজারা বিপন্ন হবে বলেও শঙ্কা বোধ করছেন। কাজেই তিনি স্বতন্ত্র বা স্বাধীন থাকতে চাইলেন। ১৯৪৭-এর ১১ আগস্ট মহারাজা তার প্রধানমন্ত্রী রাম চন্দ্র কাককে বহিষ্কার করেন যিনি কিনা স্বাধীন কাশ্মিরী জাতিসত্ত্বার পক্ষে অনড় ছিলেন – ভারত ও পাকিস্তান কোন রাষ্ট্রেরই অন্তর্গত না হয়ে। রাম চন্দ্র কাকের বহিষ্কারে পাকিস্তানিরা প্রমাদ গুনল। রাজা না ভারতে যোগ দেন এবং দরকারে বলপ্রয়োগেও কাশ্মিরকে ছিনিয়ে নেবার কথা তারা ভাবতে থাকে।
এদিকে মহারাজার মন জয়ের জন্য পাকিস্তান প্রচুর চেষ্টাও চালায়। ১৯৪৭-এর জুলাইয়ে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ স্বয়ং মহারাজাকে ‘সব ধরণের অনুকুল ব্যবহারের প্রতিশ্রুতি’ দিয়ে চিঠি লেখেন। তবু মহারাজ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে থাকেন দেখে মুসলিম লীগ পুঞ্চ এলাকায় স্থানীয় মুসলিমদের ভেতর সশস্ত্র বিদ্রোহ সংগঠিত করার চেষ্টা চালায়। উল্লেখ্য মুসলিম প্রজাদের ভেতরে রাজ বংশের চাপানো চড়া কর নিয়ে কিছু ক্ষোভ ছিলই। প্রায় ৭৭ শতাংশ মুসলিম প্রজার অধিকাংশই কৃষক ও কারিগর শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ছিল বলে চড়া কর তাদের জন্য যতটা কষ্টকর ছিল যেটা বাকি অধিবাসীদের (উচ্চ বর্ণ পণ্ডিত, ডোগরী রাজপুত বা ক্ষত্রিয় শ্রেণি ও শিখদের) জন্য হয়ত ততটা কষ্টের ছিল না। মূলত ১৯৩০-এর দশক থেকেই কাশ্মিরী মুসলিমরা বিক্ষুব্ধ হতে শুরু করে এবং এসময়েই জম্মু ও কাশ্মিরের প্রথম প্রধান রাজনৈতিক দল ‘দ্য ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি)’ গঠিত হয় আর তরুণ রাজনীতিবিদ শেখ মুহাম্মদ আবদুল্লাহর আত্মপ্রকাশ হয়। মহারাজার বিরুদ্ধে ‘কাশ্মির ছাড়ো’ আন্দোলনও তিনিই সূচনা করেন। মুসলিম প্রজাদের এই ক্ষোভকে কাজে লাগিয়েই পুঞ্চে মুসলিম লীগ যখন সশস্ত্র বিদ্রোহ সংগঠন করার চেষ্টা করছে, একই সময়ে পাক অধিকৃত পাঞ্জাব সীমান্তবর্তী কাশ্মিরে জ্বালানী ও আরো নানা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির সরবরাহ বন্ধ করে এই স্বাধীন রাজ্যের বিরুদ্ধে আর একটি ‘ব্যক্তিগত যুদ্ধ’ চালু করেছে। ইতোমধ্যে আগস্টের ১৫ তারিখ গোটা জম্মু বিভাগে দেশভাগের সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সত্যি বলতে ১৯৪৭-এর মার্চ নাগাদই রাওয়ালপিন্ডি ও শিয়ালকোট থেকে প্রচুর পরিমাণে হিন্দু ও শিখ পালিয়ে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় চলে আসছিল। তাদের মুখে ‘মুসলিম অত্যাচারে’র কথা শুনে জম্মু ও কাশ্মিরের মুসলিমদের উপরেও প্রবল আক্রমণ শুরু হয় (সূত্র: গবেষক ইলিয়াস চাঠটা)।
সেপ্টেম্বর নাগাদ জম্মুর পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলোয় ভয়ানকভাবে মুসলিম নিধন শুরু হয় যা রাজ্যের ডোগরা ক্ষত্রিয় বাহিনী, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সদস্যসহ স্থানীয় হিন্দু এবং ইতোমধ্যে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে প্রাণ হাতে পালিয়ে আসা বিক্ষুব্ধ হিন্দু ও শিখরা এই নিধনে অংশ নেয়। মহারাজা হরি সিং নিজেও এই হত্যাযজ্ঞে সংশ্লিষ্ট ছিলেন বলে অভিযোগ আছে। অসংখ্য মুসলিম সত্যিই নিহত হন। প্রচুর মুসলিম পশ্চিম পাকিস্তানে পালিয়ে যান এবং এই পলায়নরতদের একটি অংশ পশ্চিমের পুঞ্চ ও মীরপুর জেলায় গিয়ে ইতোমধ্যে শুরু হওয়া বিদ্রোহে অংশ নেন। প্রচুর মুসলিম বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে মহারাজা নিজেই এই হত্যাযজ্ঞে জড়িত ছিলেন। যা পশ্চিম পাকিস্তানের মুসলিমদের পুঞ্চে বিদ্রোহ সংগঠন ও আজাদ কাশ্মির গড়ে তোলার জন্য উত্তেজিত করে। জম্মুর পশ্চিমের জেলাগুলোয় সর্দার ইব্রাহিম নামে এক মুসলিম কনফারেন্স নেতার নেতৃত্বে বিদ্রোহী শক্তিগুলো সংগঠিত হয়। ১৯৪৭-এর ২২ অক্টোবর নাগাদ কাশ্মিরের পশ্চিম অংশগুলোর অধিকাংশের নিয়ন্ত্রণ তারা নেয় এবং ২৪ অক্টোবর পালান্দ্রি নামক স্থানে ‘আজাদ কাশ্মির’ গঠিত হয়।
দীর্ঘ ইতিহাস হুবহু অনুবাদ করতে হলে যে পরিসর প্রয়োজন তা এখানে সম্ভব নয়। তাই এর পরের ইতিহাস একটি সংক্ষিপ্ত ক্রমপঞ্জির আকারে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। অন্তর্জালে প্রাপ্ত তিনটি ক্রমপঞ্জির ভেতরে কাশ্মিরের পণ্ডিত নেটওয়ার্ক ও বাবা উমর নামে একজনের সৃষ্ট ক্রমপঞ্জির তুলনায় ‘কোয়ার্টাজ ইন্ডিয়া’-য় মানবী কাপুরের প্রদত্ত ক্রমপঞ্জিটি অধিকতর নির্মোহ, নিরাবেগ মনে হওয়ায় আমি নিচে মানবীর ক্রমপঞ্জি থেকেই অনুবাদ করছি: ‘আগস্ট ১৯৪৭: বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের হাত থেকে ভারতের স্বাধীনতা লাভ। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানের জন্ম। ভারতের তিনটি রাজা শাসিত প্রদেশ- জুনাগড়, হায়েদ্রাবাদ ও জম্মু এবং কাশ্মিরের ভাগ্য অমীমাংসিত- ভারত না পাকিস্তানে যোগ দেবে অথবা স্বাধীন থাকবে? ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বল্লভ ভাই প্যাটেল অনিশ্চিত অবস্থানে পড়া দেশীয় রাজ্যগুলোর রাজাদের ভারতে যোগ দেবার জন্য দেন-দরবার করতে থাকেন। মহারাজা হরি সিং পাকিস্তানের সাথে একটি ‘অচলাবস্থা চুক্তি’ স্বাক্ষর করেন যাতে স্থিতাবস্থার পক্ষে আগ্রহ প্রকাশ করা হয়।
অক্টোবর ১৯৪৭: মহারাজার সাথে স্বাক্ষরিত চুক্তি বিদ্যমান সত্ত্বেও পাকিস্তান থেকে সশস্ত্র পাহাড়ি গোত্রের যোদ্ধারা কাশ্মিরে ঢুকে পড়ে। হরি সিং বুঝতে পারেন যে তার ভারতের সাহায্য দরকার। প্রধামন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর সাথে যোগাযোগ করলে নেহেরু ও প্যাটেল উভয়েই এই শর্তে সৈন্য পাঠাতে রাজি হন যে মহারাজা ভারতের পক্ষে ‘সংযোজন চুক্তি’ স্বাক্ষর করবেন। এর ফলে ভারতের হাতে কাশ্মিরের প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র ও যোগাযোগের দায়িত্ব ন্যস্ত হবে। হরি সিং চুক্তি স্বাক্ষর করেন ও ভারতীয় সৈন্য প্রবেশ করে। সশস্ত্র সংঘাত (ভারত ও পাকিস্তানের ভেতর) অব্যাহত থাকে।
জানুয়ারি ১৯৪৮: ভারত জাতিসংঘে /রাষ্ট্রপুঞ্জে কাশ্মির ইস্যু নিয়ে যায় এবং কাশ্মিরের কিছু অংশে পাকিস্থানের সশস্ত্র উপস্থিতি বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ইউএন গণভোট আয়োজনের পরামর্শ দিলেও ভারত বা পাকিস্তান কেউই অঞ্চলটিতে কিভাবে বেসামরিকীকরণ করা হবে, সে প্রশ্নে একমত হতে পারে না। ১৯৪৮ পর্যন্ত এ নিয়েই সংঘাত চলে।
মার্চ ১৯৪৮: জম্মু ও কাশ্মিরে হরি সিং একটি অন্তর্বর্তী সরকার চালু করেন। শেখ আব্দুল্লাহকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়।
জানুয়ারি ১৯৪৯: জাতিসংঘ ভারত ও পাকিস্তানের ভেতরে যুদ্ধ বিরতির মধ্যস্থতা করে-এটা করাচি চুক্তি নামেও পরিচিত- যার ফলে দুই দেশই ইতোমধ্যে যার যার দখলকৃত ভূখণ্ডে নিয়ন্ত্রণ রাখার অনুমতি পায়। তখনো গণভোট বিষয়ে কোন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি।
জুলাই ১৯৪৯: হরি সিং তার পুত্র করণ সিংকে রাজ সিংহাসন দেবেন বলে নিজে সিংহাসন ছেড়ে দেন। শেখ আব্দুল্লাহ ও তার তিন সহকর্মী ভারতীয় জাতীয় সংসদে ‘অনুচ্ছেদ ৩৭০’ বিষয়ে আলোচনা করতে যোগ দেন। তখনো এই অনুচ্ছেদটি রচিত হচ্ছিল।
১৯৫০: ভারতীয় সংবিধান কার্যকরী হয়। এতে অনুচ্ছেদ ১ জম্মু ও কাশ্মিরকে ভারতের একটি প্রদেশ বা অঙ্গরাজ্য হিসেবে ঘোষণা করে এবং অনুচ্ছেদ ৩৭০-এর আওতায় কাশ্মিরকে বিশেষ মর্যাদা বা স্পেশাল স্ট্যাটাস দেয়া হয়।
১৯৫১: জম্মু ও কাশ্মিরের প্রাদেশিক সংবিধান রচনার জন্য প্রদেশটির প্রাদেশিক সংসদ কাজ শুরু করে। সংসদের সব সদস্যই শেখ আব্দুল্লাহর ন্যাশনাল কাউন্সিলের সদস্য।
১৯৫২: কাশ্মিরী নেতৃবৃন্দ ‘ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়া’-র সাথে প্রদেশের সম্পর্ক কেমন হবে সে বিষয়ে জম্মু ও কাশ্মির প্রাদেশিক সংসদ বা আইনসভায় আলাপ করেন যার প্রেক্ষিতে ‘সামগ্রিক দিল্লি চুক্তি (কম্প্রিহেন্সিভ দিল্লি এগ্রিমেন্ট)’ স্বাক্ষরিত হয়।
১৯৫৩: মন্ত্রীসভার সমর্থন হারানোর অভিযোগে শেখ আব্দুল্লাহকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে অপসারিত করা হয় এবং বকশী গুলাম মুহাম্মদ তার স্থলাভিষিক্ত হন।
১৯৫৪: রাষ্ট্রপতির একটি অধ্যাদেশ-এর মাধ্যমে ভারতীয় সংবিধানের আরো কিছু প্রবিধান জম্মু ও কাশ্মিরের সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
১৯৫৬: জম্মু ও কাশ্মির নিজস্ব সংবিধান গ্রহণ করে ও নিজেকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে।
১৯৫৭: জম্মু ও কাশ্মির তার প্রথম আইনসভার নির্বাচন অনুষ্ঠান করে। জম্মু ও কাশ্মির গণপরিষদ বাতিল হয়ে বিধানসভা গঠিত হয়। ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গোবিন্দ বল্লভ শ্রীনগর সফর করেন এবং বলেন জম্মু ও কাশ্মির এখন পুরোটাই ভারতের অংশ। ফলে গণভোটের আর কোন সম্ভাবনা থাকে না।
১৯৬০: ভারতের সুপ্রীম কোর্ট ও নির্বাচন কমিশন উভয়েই জম্মু ও কাশ্মিরের উপর তাদের অধিক্ষেত্র বা জুরিসডিকশন প্রসারিত করে। একটি সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে সেটা করা হয়।
১৯৬২: চীন-ভারতের সাথে একটি যুদ্ধের পরে জম্মু ও কাশ্মিরের একটি এলাকা নিজ নিয়ন্ত্রণে নেয়। এই এলাকাই বর্তমানে ‘আকসাই চীন’ নামে পরিচিত।
মে ১৯৬৫: কাশ্মিরে এতদিন প্রচলিত ‘প্রধানমন্ত্রী’ ও ‘সদর-ই-রিয়াসাত’ পদদ্বয় ‘মুখ্যমন্ত্রী’ ও ‘রাজ্যপাল (গভর্ণর)’ পদে বদলে দেয়া হয়।
জুন ১৯৬৫: আব্দুল্লাহর রাজনৈতিক দল ‘এনসি’ এ বছর ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসে’র সাথে একীভূত হয়।
আগস্ট ১৯৬৫- জানুয়ারি ১৯৬৬: ভারত ও পাকিস্তানের ভেতর আবার যুদ্ধ। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ও পাক রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান যুদ্ধের সমাপ্তি সূচক ‘তাসখন্দ চুক্তি’ স্বাক্ষর করেন।
১৯৬৬: জম্মু ও কাশ্মিরে পুনরায় গণভোটের দাবিতে আবার কিছু সশস্ত্র দল আত্মপ্রকাশ করে। এদের ভেতর উল্লেখযোগ্য ছিল ‘গণভোট ফ্রন্ট’ এবং ‘জম্মু ও কাশ্মির ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট (জেকেএলএফ)।
১৯৭১: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের ভেতর পুনরায় যুদ্ধ শুরু হয়।
১৯৭২: ভারত ও পাকিস্তান ‘সিমলা চুক্তি’ স্বাক্ষর করে যা যুদ্ধবিরতির রেখাকে ‘লাইন অফ কন্ট্রোল’ বা ‘নিয়ন্ত্রণ রেখা’ হিসেবে পরষ্পর মেনে নেয়।
১৯৭৫: প্রধানমন্ত্রী ইন্ধিরা গান্ধি ও শেখ আব্দুল্লাহ ‘কাশ্মির চুক্তি’ স্বাক্ষর করেন যা অনুচ্ছেদ ৩৭০-কে পুনরায় জোর দিয়ে জম্মু ও কাশ্মিরকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ঘোষণা করে। ভারতীয় ইউনিয়ন ও কাশ্মিরের প্রাক-১৯৫৩ সম্পর্ক বিষয়ে শ্রীমতি গান্ধি বলেন, ‘ঘড়ির কাঁটা পেছনে ফেরানো যায় না’ এবং এর মাধ্যমে তিনি বোঝান যে গণভোট আয়োজন সম্ভব নয়। শেখ আব্দুল্লাহ গণভোটের দাবি ছেড়ে দিয়ে জম্মু ও কাশ্মিরের মুখ্যমন্ত্রী পদে কংগ্রেসের সমর্থনে পুনর্বহাল হন।
১৯৭৭: কংগ্রেস-জম্মু ও কাশ্মির ন্যাশনাল কাউন্সিল সম্পর্কে ফাটল ধরে; কংগ্রেস শেখ আব্দুল্লাহ সরকারের উপর সমর্থন প্রত্যাহার করে যা কেন্দ্রীয় শাসনের পথ সুগম করে।
জুলাই ১৯৭৭: জম্মু ও কাশ্মিরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, শেখ আব্দুল্লাহ পুনঃর্নিবাচিত।
১৯৭৭ থেকে ১৯৮৯: জম্মু ও কাশ্মিরে সশস্ত্র নানা দলের অবিচলতি উত্থান, পরপর কয়েকটি নড়বড়ে সরকার ও সশস্ত্র যুবকদের গ্রেপ্তার ও হত্যা শুরু হয়।
১৯৯০: কাশ্মিরী যুবকেরা ভারতীয় শাসনের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এসে ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে শ’য়ে শ’য়ে আত্মাহুতি দেয়। ‘জম্মু ও কাশ্মির লিবারেশন ফ্রন্টে’র মত সশস্ত্র দলগুলোর কর্মকাণ্ড বাড়ায় কেন্দ্রীয় শাসন ঘোষণা। তারপরও অসংখ্য কাশ্মিরী পণ্ডিত (ব্রাহ্মণ) ও শিখরা ইসলামী গোষ্ঠিগুলোর সশস্ত্র কর্মকাণ্ডে হাজার বছরের মাতৃভূমি ত্যাগ করে। প্রায় পাঁচ থেকে দশ লাখ হিন্দু ও শিখ উপত্যকা ত্যাগ করে। কেন্দ্রীয় সরকার ‘আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার্স এ্যাক্ট’ প্রণয়ন করে এবং যা কিনা ভারতের সেনাবাহিনীকে কাশ্মিরে সশস্ত্র জঙ্গি গ্রুপগুলোকে দমনে অদৃষ্টপূর্ব ক্ষমতা দান করে।
১৯৯০-৯৫: কাশ্মিরে সশস্ত্র মুসলিম গ্রুপগুলোর বিদ্রোহ অব্যাহত। ইয়াসীন মালিকসহ বেশ কিছু এমন যুব নেতাকে গ্রেপ্তার। ভারত সরকার জম্মু ও কাশ্মিরের নানা স্তরের নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপের উদ্যোগ নেয়। গঠিত হয় ‘সর্বদলীয় হুররিয়াত কনফারেন্স’ যা কিনা ছিল মূলত: ২৬টি সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের একটি জোট বা প্ল্যাটফর্ম। ১৯৯৩ সালে এই মোর্চা গঠিত হয়। বেসামরিক ব্যক্তি-সেনা সদস্য-জিহাদি যোদ্ধারা ক্রমাগত নানা ভয়ানক সংঘর্ষে নিহত হয়।
১৯৯৫: প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিমহা রাও সংসদে এই আশ্বাসবাণী সহকারে বক্তৃতা দেন যে অনুচ্ছেদ ৩৭০ কখনোই ভারতীয় সংসদ থেকে বিলুপ্ত হবে না। তিনি পুনরায় এই মত ব্যক্ত করেন যে জম্মু ও কাশ্মির ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং তিনি অচিরেই কাশ্মিরে রাষ্ট্রপতির শাসনের অবসান চান।
ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬: ভারত ‘জম্মু ও কাশ্মির লিবারেশন ফ্রন্ট’-কে বাতিল করে।
সেপ্টেম্বর ১৯৯৬: জম্মু ও কাশ্মিরে আইন পরিষদ নির্বাচন পুনরায় অনুষ্ঠিত। ফারুক আব্দুল্লাহ পুনরায় সরকার গঠন করেন।
নভেম্বর ১৯৯৬: কেন্দ্র থেকে জম্মু ও কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টি পর্যালোচনা করতে একটি কমিটি নিয়োগ দেয়া হয়।
১৯৯৭: ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন’-এর ‘জম্মু ও কাশ্মির চ্যাপ্টার’ খোলা হয় যাতে করে সেখানকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর যথাযথ তদন্ত সম্ভব হয়।
১৯৯৮: ভারত ও পাকিস্তান পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করে।
ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯: ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী পাকিস্তান সফর করেন।
জুন ১৯৯৯: ভারত ও পাকিস্তান কারগিলে পাক আক্রমণের মুখে যুদ্ধ শুরু করে।
ডিসেম্বর ১৯৯৯: ভারতীয় বিমান আইসি-৮১৪ দিল্লি থেকে কাঠমান্ডু উড্ডয়নের পথে কাশ্মিরী জিহাদিদের হাতে হাইজ্যাক হয়। ভারত বিমানের যাত্রীদের নিরাপদে দিল্লি পাঠাতে তিনজন সশস্ত্র কাশ্মিরী কারাবন্দীকে মুক্তি দেয়।
অক্টোবর ২০০১: শ্রীনগরের আইন পরিষদে হামলা।
ডিসেম্বর ২০০১: সশস্ত্র জিহাদিরা নয়া দিল্লিতে ভারতের জাতীয় সংসদ ভবনে হামলা চালায়।
২০০৪: দশকব্যাপী অস্থিরতার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক খানিকটা স্বাভাবিক হয়। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং পাক রাষ্ট্রপতি জেনারেল পারভেজ মোশাররফের সাথে দেখা করেন।
২০০৫ থেকে ২০০৮: জম্মু ও কাশ্মিরে সেনা বাহিনী ও সশস্ত্র নানা গ্রুপ এবং প্রতিবাদকারী বেসামরিক ব্যক্তিবর্গের ভেতর নানা সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে। তবে সেটা ১৯৯০-এর দশকে জিহাদি আন্দোলনের তুঙ্গ মুহূর্তে যে পরিসরে ছিল, অতটা ব্যাপ্তি আর ধারণ করে না ।
নভেম্বর ২০০৮: লস্কর-ই-তৈয়বা নামক জঙ্গি গ্রুপের সদস্যরা ভারতের বন্দর নগরী মুম্বাইয়ের নানা জনগুরুত্বপূর্ণ স্থান বিশেষত: বিলাসবহুল হোটেলগুলোয় হামলা চালায়।
২০১০: এক তরুণ জিহাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে জম্মু ও কাশ্মিরে বিক্ষোভ উত্তাল পরিস্থিতি।
২০১১: জম্মু ও কাশ্মিরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ ১.২০০ পাথর নিক্ষেপকারীকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। ‘নিয়ন্ত্রণ রেখা’র পাশে ভারতীয় মানবাধিকার কমিশন ২,০০০ অচিহ্নিত গণকবরের হদিস পায়।
২০১৩: ২০০১ সালে ভারতীয় জাতীয় সংসদে হামলার জন্য কাশ্মিরী ইসলামী নেতা আফজাল গুরুকে ফাঁসি প্রদান।
মার্চ ২০১৩: জম্মু ও কাশ্মিরে ‘পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি’র সাথে বিজেপি প্রথমবারের মত সরকার গঠন করে।
এপ্রিল ২০১৬: মুখ্যমন্ত্রী মুফতি মোহম্মাদ সাঈদের মৃত্যুর পর তার কন্যা মেহবুবা মুফতি কাশ্মিরের মুখ্যমন্ত্রী হন।
জুলাই ২০১৬: বুরহান ওয়ানী, অপর এক তরুণ সশস্ত্র ইসলামী নেতা, সেনাবাহিনীর সাথে গুলি বিনিময়ের সময় নিহত হন। জম্মু ও কাশ্মিরে বিক্ষোভের অগ্নিগিরি। কয়েক মাসের জন্য কারফিউ আরোপ।
সেপ্টেম্বর ২০১৬: বিক্ষুব্ধ এই প্রদেশের উরিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ঘাঁটিতে সশস্ত্র জিহাদিদের হামলা। উত্তরে ভারতীয় সেনাবাহিনী ‘নিয়ন্ত্রণ রেখা’র চারপাশে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালায়।
জুলাই ২০১৭: জম্মু ও কাশ্মিরের হাজার হাজার অধিবাসী পথে নেমে বুরহান ওয়ানীর মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপন করে। অমরনাথ তীর্থযাত্রার পথে হিন্দু তীর্থযাত্রীদের উপর জিহাদিরা হামলা করে।
জুন ২০১৩: বিজেপি সরকার পিডিপির সাথে মৈত্রী থেকে সরে যায়।
নভেম্বর ২০১৮: গভর্নর সত্য পাল মালিক বিধানসভা বিলুপ্ত করেন।
ডিসেম্বর ২০১৮: রাজ্যে কেন্দ্রীয় শাসন ঘোষণা ।
ফেব্রুয়ারি ২০১৯: বিষ্ফোরক দ্রব্যে ঠাসা একটি গাড়ির সাথে ভারতীয় প্যারামিলিটারি একটি কনভয়ের সংঘর্ষ হলে ৪০ ব্যক্তি প্রাণ হারান। ভারত এর উত্তরে পাকিস্তানের বালাকোট এলাকায় নিয়ন্ত্রণ রেখার চারপাশে জঙ্গি শিবিরগুলোয় প্রতিশোধমূলক হামলা চালায়। পাকিস্তান ভারতীয় বিমান বাহিনীর এক পাইলটকে গ্রেপ্তার করলেও পরে ছেড়ে দেয়।
মে ২০১৯: বিজেপি দ্বিতীয়বারের মত ভারতীয় লোকসভা নির্বাচনে বিপুলভাবে বিজয়ী।
জুলাই ২০১৯: মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প কাশ্মির প্রশ্নে ভারত ও পাকিস্থানের ভেতর মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দেন।
আগস্ট ২০১৯: বিভিন্ন প্রতিবেদন মতে কিছুদিন ধরেই প্রচুর সংখ্যক ভারতীয় সেনা জম্মু ও কাশ্মিরে সরিয়ে নেয়া হচ্ছিল। অমরনাথের তীর্থযাত্রীদের ফিরতে বলা হয়। কারণ তীর্থযাত্রীদের যাবার পথে পাক চিহ্ন সম্বলিত স্থলমাইন পাওয়া যায়।
আগস্ট ৪: প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ ও বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবাব ফারুক সহ গুরুত্বপূর্ণ কাশ্মিরী নেতৃবৃন্দকে গৃহবন্দী করা হয়। কাশ্মিরে ইন্টারনেট ও মোবাইল সার্ভিস রদ করা হয় ও ১৪৪ ধারা জারি করা হয় যার বদৌলতে জন পরিসরে একসাথে চার জনের বেশি ব্যক্তি জমায়েত হতে পারবে না।
আগস্ট ৫: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অনুচ্ছেদ ৩৭০ ও ৩৫ক বাতিলের জন্য একটি ‘রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ’ জারি করেন। জম্মু ও কাশ্মিরকে দ্বিখণ্ডিত করে লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত এলাকা এবং জম্মু ও কাশ্মিরকে তার বিধানসভা সহই পূর্বের মত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ভারতের বিরোধী দলগুলো সংসদে প্রতিবাদ করেছে আর কাশ্মির উপত্যকায় বর্তমানে পুরো অচলাবস্থা বিরাজমান।
অনুবাদকের বক্তব্য: খুবই স্বল্পায়তন পরিসরে এখানে কাশ্মিরের রাজনৈতিক ইতিহাস শুধুই ঘটনাপঞ্জির আকারে সাজানো হয়েছে। কিন্ত কাশ্মিরের মর্মদেশ নিয়ে আলোচনাই বাকি রয়ে গেল। ১৩০০ শতকে ইসলাম ধর্ম প্রথম প্রবেশের পর দেশভাগের সময় নাগাদ মুসলিম জনসংখ্যা কি করে ৭৭ শতাংশ হলো? ১৩০০ থেকে ১৮৪৬ অবধি সাড়ে পাঁচশো বছরের মুসলিম শাসনে বলপ্রয়োগ বা রাজধর্ম গ্রহণের স্বাভাবিক প্রবণতা থেকে এত মানুষ ধর্মান্তরিত হয়েছে নাকি হিন্দু ধর্মের বর্ণাশ্রমও একটি বড় কারণ? নাকি কিছুটা বলপ্রয়োগ, কিছুটা অন্ত্যজ শ্রেণিগুলোর স্বেচ্ছা ধর্মান্তরিত হওয়া, কাশ্মিরে হিন্দু ভক্তিবাদী ও ইসলামী সুফিবাদের মিলিত জোয়ারে দীর্ঘদিনের সমন্বয়বাদী লোকসাহিত্য (নারী কবি লাল্লেশ্বরী বা লাল ডেড/লালা আরিফা যে ভাবান্দোলনের অন্যতম পুরোধা ছিলেন ও আজো কাশ্মিরী ভাষা ও সাহিত্যের ৩০ শতাংশ শব্দভাণ্ডার এই নারীকবির ভক্তিমূলক নানা পদাবলী বা ‘ভখ’-এর উপর দাঁড়িয়ে আছে বলে হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের গবেষকরাই মনে করেন) সৃষ্টি ও সুফী দরবেশদের হাতে গণ ধর্মান্তর, কিছুটা বহিরাগত মুসলিম পুরুষ বা কাশ্মিরী হিন্দু থেকেই ধর্মান্তরিত পুরুষের সাথে প্রেম তথা বিয়ের মাধ্যমে ধর্মান্তর (বিজেপি আজ যাকে বলছে ‘লাভ জিহাদ’)? ১৩০০ থেকে ১৯৪৭ নাগাদ সাড়ে ছ’শো বছরে ৭৭ শতাংশ মানুষ মুসলিম হতে প্রতি এক শতাব্দীতে ১০-১২ শতাংশ মানুষকে ধর্মান্তরিত হতে হয়েছে। আবার দেশভাগের সময় ২০ শতাংশ হিন্দু ও শিখের অধিকাংশই পন্ডিত ও ডোগরি রাজপুত? ব্রাম্মণ ও ক্ষত্রিয়? সাড়ে পাঁচশো বছরের মুসলিম শাসনের পরও…ধরে নিচ্ছি শুদ্র বা কৃষক/কারিগর শ্রেণি থেকে ধর্মান্তরিত মানুষগুলো তখনো দরিদ্র ও ক্ষুব্ধ? মুসলিম শাসন বা ধর্মান্তর তবে তাদের অর্থনৈতিক ভাগ্য বদলায় নি? সেই ক্ষোভ যা উপযুক্ত সাম্যবাদী না হোক, ন্যুনতম কোন ভাষা ও জাতীয়তাবাদ ভিত্তিক আন্দোলন পেলে অসামান্য এক বিদ্রোহের সূতিকাগার হতে পারত, ভুল ধর্মীয় উন্মাদনায় পরিচালিত হয়ে এমন ভয়ানক স্লোগান গলায় তুলে নিল যে ‘পন্ডিত নারী চাই/ তাদের পুরুষদের ছাড়া?’ পাল্টা ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতেও হত্যা ও ধর্ষণযজ্ঞ শুরু হলো? কংগ্রেস সরকার থেকে শুরু করে আজকের বিজেপি সরকার- দেখা যাচ্ছে কংগ্রেস সরকারই খেলেছে বেশি- ক্ষমতায় বেশিদিন ছিল বলেই! বিজেপি ত’ সেদিনের ছেলে। ফারুক আব্দুল্লাহর পরিবারের প্রতিও শ্রদ্ধা জাগছে না। ক্ষমতার লোভে কেন্দ্রীয় ভারত সরকারের হাতে পুতুল হয়ে থাকছে। বরং ভুল পথে পরিচালিত হলেও যে যুবকগুলো নিজেদের বন্দুক হাতে জীবন উজাড় করে দিচ্ছে, তাদের আবেগ হয়ত মিথ্যে নয়।
প্রথম এই পর্বের পর আরো দু’টো পর্ব যদি লিখি তবে তার একটি সেনাবাহিনী ও জিহাদি উভয়ের হাতে বিপক্ষের নারী নিগ্রহ নিয়ে একটি সিরিজ ও কাশ্মিরী ভাষা-জাতীয়তা-ধর্ম-সমন্বয়বাদের ঐতিহ্য এসব নিয়ে আর একটি সিরিজ থাকবে। থাকবে লাদাখের নবনির্বাচিত ৩৪ বছরের বৌদ্ধ এমপির প্রসঙ্গও। তারও একটি যৌক্তিক ক্ষোভ আছে যে ৩৭০ অনুচ্ছেদের আওতায় কাশ্মিরে গত ৭০ বছর ধরে মাত্র এক শতাংশ মানুষের মুখের ভাষা উর্দু ছিল একমাত্র অফিসিয়াল ভাষা যদিও লাদাখের মানুষের আছে নিজস্ব ভাষা ও বর্ণমালা।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)