কেয়ামত হলে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। তা কি করে হবে, এ নিয়ে তর্ক বির্তক আছে। তবে সারা দুনিয়াতে এখন যা হচ্ছে তা কেয়ামতেরই নমুনা। লিখতে গিয়ে কলম থেমে যায়। কী হবে এ চিন্তায় কাটে প্রতিটি মুহুর্ত। কর্মহীন হয়ে সারাবিশ্ব আর চাইছে না ঘর বন্দি থাকতে। কোভিড-১৯ এর থেকে বড় আতংক দুর্ভিক্ষ। সকল দেশের সরকার চেষ্টা করছে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে। সফলতা আসেনি এখনো।
এমন ক্রান্তিকালে থমকে যাওয়া জীবনের গল্পগুলো সবার বোধ করি একই। কিন্তু সে গল্পের মাঝে নতুন করে জীবন বোধকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ সমাজে অনিয়ম, দুর্নীতি, ছলচাতুরী বিদ্যমান।
বাংলাদেশের জন্ম লগ্নে বংগবন্ধু যেমন তার হিসাবের কম্বলটা পায়নি, তেমনি এখনো ত্রাণের হিসাবে গড়মিল। সময়ের স্রোত দেশ বদলেছে, কিন্তু বদলায়নি মানুষের চরিত্র। তাই একদিকে যেমন ত্রাণ চুরি হয়। অন্যদিকে ত্রাণ পেয়েও অনেকে বলে, ‘আমি কোন সাহায্য পাইনি।’ তখন নিজের হাতটাকেও মিথ্যে মনে হয়। কারণ এ হাতে দিয়ে কাকে ত্রাণ দিলাম এ প্রশ্ন জাগে মনে। সব ত্রাণ চুরি হয়নি এটা যেমন সত্য আবার সবাই ত্রাণ পেয়েছে তাও সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে সিস্টেমের ভুলে আজও মানুষের স্বভাব বদলায়নি এদেশে।
ভাতের ক্ষুধার কাছে নীতিকথা অর্থহীন মনে হয়। বাঁচার জন্য খাবার সঞ্চয় করতে মানুষ মিথ্যে বলছে এটা হয়ত মানা যায়।কিন্তু এ সময় স্তব্ধ হতে হয় প্রশাসনের দুর্নীতি দেখে। কোভিট ১৯ এমন এক ব্যাধি যার চিকিৎসা করতে চিকিৎসকের নিজের সাবধানতাতে একমাত্র হাতিয়ার হলো পিপিই (মাস্ক-গ্লাভস-গাউন-গগলস)। এ জিনিসগুলো ছাড়া একজন চিকিৎসক রোগীর কাছে যাওয়া মানে মৃত্যুকে আহ্বান করা। অথচ দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নতুন দুর্নীতির ইতিহাস রচনা করল মাস্ক নিয়ে।
স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি কত গভীরে তা আজ সুস্পষ্ট। আবার এ নিয়ে কথা বললে চিকিৎসক,নার্সরা শংকিত হয় চাকরি নিয়ে। চিকিৎসা সেবা বলতে দেশে কিছু নেই, তা প্রমান করলো কোভিড-১৯। অথচ দেশের বাজেটের বিশাল অংশ বরাদ্দ হয়ে স্বাস্থ্যখাতে। আর সে বাজেটের টাকা লুটপাট করে রাঘব বোয়ালরা।
কেবল কোভিড-১৯ নয় বরং সাধারণ চিকিৎসা দেয়ার মত উপযুক্ত হাসপাতাল নিয়ে কেন – এ প্রশ্নের উত্তর চাওয়ার এখনই সময়। ঢাকা শহর নির্ভর চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নয়নশীল বাংলাদেশে কাম্য নয়।
দুর্নীতিবাজ ধনীরা চিকিৎসা করতে চলে যায় বিদেশে। একবার কিভাবে কেন এদেশের চিকিৎসক সঠিক চিকিৎসা দিতে পারে না। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার যন্ত্রপাতি নেই এদেশের হাসপাতালে। জেলা উপজেলার হাসপাতালগুলোতে ভেন্টিলেটর নেই, তা শুনে অবাক হবার কিছু হয় না। কারণ এমন ও হাসপাতাল আছে যেখানে একটা এক্স-রে মেশিন নষ্ট হলে বছর পার হয়ে যায় ঠিক হতে। আর ভেন্টিলেটর থাকা কল্পনাতীত ব্যাপার।
কোভিড-১৯ এদেশে হঠাৎ করে আসেনি। অন্যদেশ থেকে জানা গেছে এর চিকিৎসা পদ্ধতি কী। তাই সারাদেশে যেসব হাসপাতালকে কোভিড-১৯ এর জন্য নির্ধারণ করা হলো তা যাচাই বাছাই বিহীনভাবে করা হয়েছে। আইসিইউয়ের জন্য চট্রগ্রামের বেসরকারি ১২টি হাসপাতালকে বরাদ্দ করা হলেও তা নিয়ে নানা খবর আসছে গণমাধ্যমে ইতমধ্যে।
এসব বেহাল দশাতে প্রধানমন্ত্রীকে ভিডিও কনফারেন্সে সব সুষ্ঠু আছে বলে মিথ্যা তথ্য দেয়া বন্ধ করা খুব দরকার। আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী নয়। আর এর জন্য দায়ী কতিপয় অর্থলোভী দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যক্তি। আর এদের ভয়ে সত্যকে তুলে ধরতে পারেনা ক্ষমতার বাইরে থাকা মানুষরা। কারণ সরকারের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়ানো রয়েছে এসব দুর্নীতিবাজরা কালে কালে।
করোনা ভাইরাস কারো জন্য পৌষ মাস, কারো জন্য সর্বনাশ। সুতরাং মৃত্যু নিয়ে খেলা করা দুর্নীতিবাজদের জন্য কোভিড-১৯ কতটা পৌষ মাস আর কতটা সর্বনাশ সেটা দেখার পালা এখন। আর জনগণের পক্ষ থেকে এ বিচারের দায়ভার রইল সরকারের কাছে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)