দেশে ও দেশের বাইরে কর্মক্ষেত্রে ব্যাপক চাহিদার ফলে মেধাবী শিক্ষার্থীরাও এখন কারিগরি শিক্ষায় ঝুঁকছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
মঙ্গলবার রাজধানীর বসুন্ধরায় ‘জাতীয় উন্নয়নে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি একথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আগে মেধাবী শিক্ষার্থীরা কারিগরি শিক্ষায় আগ্রহ দেখাতো না। আমি শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার সময় দেখি দেখি, মাত্র এক শতাংশ শিক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষায় আগ্রহ দেখাচ্ছে। এরপর আমরা কিছু প্রকল্প হাতে নিলাম। কারিগরি শিক্ষা নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি হলো। এখন ১৪ ভাগ শিক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষায় আসছে।’
শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গির এই পরিবর্তনকে অনেক বড় অর্জন বলে মনে করছেন শিক্ষামন্ত্রী। কারিগরি শিক্ষাকে জনপ্রিয় করতে তিনি প্রবাসিদের দেশে আনার কথা উল্লেখ করেন।
কারিগরি শিক্ষায় সরকারের নানা পদক্ষেপের মধ্যে ৬৫ শতাংশ বৃত্তিমূলক শিক্ষা, ২৫ শতাংশ নারী কোঠা, সব ছাত্রীকে বৃত্তি প্রদান, জাপান, সিঙ্গাপুর, চীনসহ উন্নত দেশে ট্রেনিংসহ নানা পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘ সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত ছাত্রের চাকরি পেতে অনেক সংগ্রাম করতে হয়। সেখানে প্রযুক্তি নির্ভর পৃথিবীতে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত ছাত্রের ব্যাপক চাহিদা।’
সার্টিফিকেট নির্ভর শিক্ষার চেয়ে কর্মমুখী শিক্ষার প্রতি অগ্রসর হওয়ার পরামর্শ দিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যুগের সাথে সম্পর্কিত বিশ্বমানের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষার গুণগত মান সবচে বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের শিক্ষার্থীরা চারবছর ধরে যেটা পড়ে, শেখে, পড়া শেষে দেখা যায় নতুন কোনো প্রযুক্তি চলে আসছে। ফলে কর্মক্ষেত্রে তারা অসহায় হয়ে পড়ে।’
দূরদর্শিতার মাধ্যমে যুগোপযোগী শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। বর্তমান সরকার শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দেশ থেকে আধুনিক ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করছে বলেও জানান তিনি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস চীন, জাপান, সিঙ্গাপুর ও সাউথ কোরিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষার তুলনামূলক চিত্র পেশ করেন। যাতে দেখা যায় সব দিক দিয়ে বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষা ব্যাপক পিছিয়ে আছে।
উন্নত দেশগুলো কারিগরি শিক্ষায় বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার ফলে দ্রুত উন্নতি করেছে জানিয়ে অশোক কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘১৯৬৫ সালে সিঙ্গাপুরের মাথাপিছু গড় আয় ছিল ৫১৬ ইউ এস ডলার। বর্তমানে তাদের মাথাপিছু গড় আয় ৫৬ হাজার ডলার। যা সাধিত হয়েছে কারিগরি শিক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার ফলে।’
গোল টেবিল বৈঠকে আলোচকবৃন্দ সরকারকে হাইস্কুল পর্যায় থেকে কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন। টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার দাবি জানান তারা।
দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক ও কথা সাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের সভাপতিত্বে গোল টেবিল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা সচিব মো. আলমগীর, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান, কারিগরি শিক্ষা কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. নাজমুল ইসলাম, বাংলাদেশ প্রাইভেট পলিটেকনিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ আনিসুর রহমান, ড্যাফোডিল গ্রুপের চেয়ারম্যান সবুর খান, ওয়ালটন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এস এম জাহিদসহ কারিগরি শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বর্গ উপস্থিত ছিলেন।