মানসম্মত কারিগরি শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা উন্নয়নই পারে তরুণদের যুগোপযোগী কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে পারে। করোনা পরবর্তী সময়ে তরুণরাই দেশকে এগিয়ে নেবে বলে মত প্রকাশ করেছেন বিশিষ্টজনরা।
‘বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস’ উপলক্ষে উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক আয়োজিত ‘মহামারীতে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি’ শিরোনামের এক ওয়েবিনারে এসব বিষয় আলোচিত হয়েছে।
বৈশ্বিক করোনা মহামারীর মোকাবেলায় সবাই যেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছে, সেখানে হাতে কলমে কারিগরি শিক্ষার প্রশিক্ষনের সুযোগ কমে এসেছে অনেকাংশেই। এমন কঠিন সময়ে গেল ১৫ জুলাই তরুণ্যের দক্ষতা উন্নয়নকে গুরুত্ব দিয়েই অন্যান্য বছরের মতোই সারাবিশ্বে পালিত হলো। দিবসটি উদযাপনে ব্র্যাক শুক্রবার ১৭ জুলাই ওয়েবিনার আয়োজন করে।
ওয়েবিনারে মূলত দক্ষতা প্রশিক্ষণের জন্য নতুন পন্থা, নতুন সম্ভাবনা ও চাকুরিক্ষেত্রে দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগ নিয়ে আলোচনা করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তারা মূলত আলোচনা করেন বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ কে ঘিরে বর্তমান পরিস্থিতিতে কর্মসংস্থানের প্রভাব এবং পরিত্রানের সম্ভাব্য উপায়গুলো নিয়ে। দেশের যুব সমাজকে করোনা পরিস্থিতিতেও দক্ষতা উন্নয়নে নিজ নিজ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে সচেতনতা গড়ে তুলতে তারা তাদের বক্তব্যে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে অংশ নেন প্রথম আলোর যুব কর্মসূচির প্রধান মুনির হাসান, বিডি জবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম মাশরুর, সেবা এক্সওয়াইজেড এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আদনান ইমতিয়াজ হালিম এবং ব্র্যাকের দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচির প্রধান তাসমিয়া রহমান।
আয়োজনের সঞ্চালক ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, ‘করোনা পরবর্তী সময়ে শিক্ষা, দক্ষতা ও কর্মসংস্থান নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। প্রচলিত চাকুরির বাজার সংকুচিত হলেও সেখানে নতুন ধরণের কর্মসংস্থানের অনেক সুযোগ রয়েছে।’ নিজেকে নিজেই দক্ষ করে গড়ে তুলে চাকরির বাজারে দৃশ্যমান পার্থক্য তৈরীতে নজর দিতেও তরুনদের প্রতি আহবান জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, ‘এই মুহুর্তে ডিজিটাল, আইটি, স্বাস্থ্য সেবা খাতগুলোতে দক্ষতা অর্জন করার পাশাপাশি উদ্যোক্তা হয়েও তরুণরা সফল হতে পারেন। যদি সেই সুযোগ না পাওয়া যায় তবে অলস বসে না থেকে যেকোনো ধরনের কাজে ইন্টার্ণ কিংবা স্বেচ্ছাসেবক হয়ে অংশগ্রহন করা উচিত।’
প্রথম আলোর যুব কর্মসূচীর প্রধান মুনির হাসান বলেন, ভবিষ্যতে জাতির কর্মদক্ষতা ও আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে হলে গুণগত মানসম্পন্ন কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটাতেই হবে। এটা যত তাড়াতাড়ি সবাই উপলব্ধি করবেন, ততই মঙ্গল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে, কারিগরি শিক্ষা তরুনদের দোরগোড়ায় পৌছে দিতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানান সেবা এক্সওয়াইজেড এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আদনান ইমতিয়াজ হালিম। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘করোনা পরবর্তী সময়ে কর্মসংস্থানের সংকটকে মাথায় রেখেই তরুণদের কিভাবে দক্ষ ও যোগ্য করে তোলা যায় সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।’
বিডি জবসের প্রধান নির্বাহী অফিসার ফাহিম মাশরুর বলেন, আমাদের গ্রামমুখী অর্থনীতির দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। করোনার কারণে যেসব দক্ষতা গ্রামে ফিরে গেছে বা যারা বিদেশ থেকে দেশে চলে এসছে সেসব তরুণদের কর্মসংস্থানের দিকে নজর দেয়ার সময় এসেছ।
এসময় ব্র্যাকের দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচির প্রধান তাসমিয়া রহমান, করোনা পরবর্তী ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত আর সেকারণেই আমাদের তরুণদের বিশেষ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে না গড়ে তাদের সমসাময়িক দক্ষতা অর্জনে আগ্রহী করে তুলতে হবে। করোনার প্রভাবকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে না নিয়ে এটিকে একটি সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করে তরুণদের এগিয়ে যাওয়ার আহবান জানান তিনি। আর তা করতে পারলেই তরুণরা দ্রুত সফলতার মুখ দেখবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তাসমিয়া।
ব্র্যাকের দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচী মূলত দেশের অবহেলিত তরুণ সমাজ ও প্রবাসে যেতে ইচ্ছুক এবং প্রবাস ফেরতদের দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করে থাকে। ২০১২ সাল থেকে আজ অবধি এই কর্মসূচিটি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত প্রায় ৭৮,১৬৮ জনকে দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং ৫৭,৬৮০ জনের কর্মসংস্থান তৈরিতে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা দিয়েছে।