৭৩ বছর বয়সে যখন অনেকের পক্ষে স্বাভাবিক হাঁটাচলা করাও দুস্কর, তখন এই বয়সে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাগারে বন্দি অবস্থায় রয়েছেন। প্রায় ২ মাস হতে চলেছে তার কারাজীবনের। বেশ কয়েকবার জামিন হতে হতেও হয়নি। তার বিরুদ্ধে চলমান রয়েছে আরও কয়েকটি মামলার কার্যক্রম।
২৮ মার্চ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কারাগার থেকে আদালতে হাজির করার কথা থাকলেও হাজির করেনি কারা কর্তৃপক্ষ। অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে খালেদা জিয়াকে কারা কর্তৃপক্ষ আদালতে হাজির করেনি দাবি করে শুনানির পরবর্তী তারিখ চান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। সে অনুযায়ী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত জিয়া চ্যারিটবেল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন বহাল রয়েছে।
খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা দাবি করছেন, কারা কর্তৃপক্ষ অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করেনি। কী অসুখ তা কারা কর্তৃপক্ষ জানায়নি। আর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়টি আড়াল করেছেন।
বৃহস্পতিবার বিকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তিনি যাননি।
না যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ম্যাডামের অসুস্থতার কারণে আজকে দেখা করতে যাওয়ার কর্মসূচি স্থগিত করেছি। তবে খালেদা জিয়ার কী অসুখ সে বিষয়ে কিছু জানাননি মির্জা ফখরুল।
এ বিষয়ে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)-এর মহাসচিব ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন: ম্যাডামের বয়স হয়েছে। তার আগে থেকেই নানা ধরনের অসুখ আছে। নতুন করে কী অসুখ হয়েছে আমরা জানি না। গত বুধবার আদালতে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তাকে আদালতে হাজির করেনি কারা কর্তৃপক্ষ। তাদের উচিত ছিলো ম্যাডামের কী অসুখ তা জানানো এবং যথাযথ চিকিৎসার পদক্ষেপ গ্রহণ করা। তারা তা করেনি। রাষ্ট্রপক্ষও ম্যাডামের অসুখের কথা আড়াল করেছে। এর পেছনে তাদের কী উদ্দেশ্য আছে আমরা জানি না।
ডা. জাহিদ বলেন: আপনারা জানেন বেগম খালেদা জিয়া নানা রোগ আছে। তার শ্বাস কষ্ট আছে। হাঁটুতে সমস্যা। আবার চোখেরও অপারেশন হয়েছে । সে বিষয়ে জানা প্রয়োজন। কিন্তু জানতে পারছি না। কিছু বলাও হচ্ছে না। কারাগারে তাকে নির্জনে রাখা হয়েছে। তার সঙ্গে শুধু গৃহকর্মী ফাতেমা ছাড়া আর কেউ নেই। এই অবস্থায় মানসিকভাবেও তিনি দুর্বল হয়ে পড়তে পারেন।
“ম্যাডামের পারিবারিক যে ডাক্তার আছেন তার কারাগারে যাওয়ার অনুমতির জন্য চেষ্টা করছে পরিবার। ৩/৪ দিন হয়ে গেলেও এখনো অনুমতি মেলেনি। এই অবস্থায় আমরা পুরোপুরি অন্ধকারে আছি। কী হচ্ছে না হচ্ছে আমরা নিশ্চিত নই”, বলছিলেন ডা. জাহিদ।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা বিষয়ে অবগত নন বলে জানিয়েছেন।
এর আগে গত ৫ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপার্সনের শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন বিএনপিপন্থী চিকিৎসকরা। অধ্যাপক ডা. এ কে এম আজিজুল হক, অধ্যাপক ডা. রফিকুল কবির লাবু, অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, অধ্যাপক ডা. মোস্তাক আহমেদ, ডা. হারুন উর রশিদ, ডা. শহিদুল আলম, ডা. গাজী আব্দুল হক, ডা. মোঃ আব্দুস সালাম, ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল প্রমুখের নেতৃত্বে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া অনেক রোগে আক্রান্ত।
‘‘উনি বক্ষব্যাধিতে আক্রান্ত বহু বছর ধরে, বিশেষ করে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে। ২০ বছর ধরে ডায়াবেটিসে ভুগছেন। জরাজীর্ণ পরিবেশ, একাকীত্ব এবং সরকারের মানসিক নির্যাতনে তার রক্তের শর্করা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে অথবা কমে যেতে পারে, যা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। নির্জন কারাগারের অব্যবস্থাপনার মধ্যে এই পর্যবেক্ষণ কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। ফলে যেকোন সময় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে পারে। এজন্য সরকারকেই দায়ী থাকতে হবে।’’
তারা আরো বলেন: খালেদা জিয়া একজন হার্টের রোগী। বিগত ১০ বছর ধরে তিনি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। পরিত্যক্ত জরাজীর্ণ পরিবেশ এবং একাকীত্বের কারণে উনি যেকোন সময় একিউটর হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এছাড়া কিছুদিন আগে বিদেশ থেকে তিনি চোখের অপারেশন করে ফিরেছেন। এ অবস্থায় ওনার চোখের নিবিড় পরিচর্যা প্রয়োজন। জরুরি ভিত্তিতে তার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
ডাক্তাররা বলছেন: খালেদা জিয়ার সবচেয়ে বড় সমস্যা হাঁটু সংক্রান্ত রোগ। তিনি ৩০ বছর ধরে অষ্টিও আর্থাইটিস রোগে ভুগছিলেন, যা তার স্বাভাবিক চলাফেরায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছিল এবং হাঁটুর ব্যাথায় ভুগছিলেন।
সচেতন চিকিৎসক সমাজের ব্যানারে বিএনপিপন্থী ডাক্তারেরা দ্রুত বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিম পাঠিয়ে শারীরিক অবস্থার সার্বিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা ও সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য তারা জোর দাবি জানান।
পুরনো ঢাকার কশিবাজার আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা জিয়া চ্যারিটবেল দুর্নীতি মামলার শুনানির পরবর্তী দিন ৫ এপ্রিল।