‘আছি আমি এই তো তোমার
নাকছাবিটির মুক্তো যেমন
জ্বলছে কেবল জ্বলছে কেবল।’
নিজের লেখা স্বদেশ কবিতার মতোই জ্বলজ্বলে সত্য আর অনিবার্য মৃত্যুকে মেনে প্রিয়কবিতা, প্রিয়মানুষ আর প্রিয়দেশকে ছেড়ে জীবন থেকে বিদায় নিলেন কবি বেলাল চৌধুরী।
কবি হিসেবে পরিচিত পেলেও ১৯৩৮ সালে ১২ই নভেম্বর ফেনীর শর্শদিতে জন্ম নেওয়া বেলাল চৌধুরী ছিলেন বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী। তিনি একাধারে ছিলেন প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও সাংবাদিক। দীর্ঘদিন সাপ্তাহিক সচিত্র সন্ধানী ও ভারতবিচিত্রা সম্পাদনায় যুক্ত ছিলেন।
বেলাল চৌধুরীকে বলা হয় ষাটের দশকের কবি। আবার কেউ কেউ বলেন, পঞ্চাশ এবং ষাট দশকের কবিদের সঙ্গে পরবর্তী প্রজন্মের সেতুবন্ধন বেলাল চৌধুরী। তবে এমন সব আলোচনা ছাপিয়ে তার রেখে যাওয়া কাজই সাক্ষ্য দেয়; দেশের কাছে, দেশের মানুষের জন্য কতোটা দায়বদ্ধ ছিলেন তিনি।
৫২’র ভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়ে কারাভোগের পর পাকিস্তানী শাসকদের নানা নির্যাতনের মুখে পড়তে হয়। এক পর্যায়ে তিনি বাধ্য হয়েছিলেন দেশ ছেড়ে কলকাতায় গিয়ে থাকতে। কলকাতার সেই জীবনেও তাকে বহু কষ্টের মধ্যেই দিন পার করতে হয়েছিল। যদিও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়সহ কলকাতার অন্য কবি-সাহিত্যিকদের সহযোগিতায় শেষ পর্যন্ত কোনো রকম ভালো ছিলেন।
দেড় দশক পর ১৯৭৪ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসা বেলাল চৌধুরীকে নিয়ে অপপ্রচারও কম হয়নি। কষ্টের বিষয় সেই অপপ্রচারে তারাই ছিলেন, যারা নানা বিপদে এই বেলাল চৌধুরীর কাছ থেকে সাহায্য পেয়েছেন।
আপদমস্তক সজ্জন ব্যক্তি ছিলেন তিনি। বাম রাজনীতিতে অনুরক্ত কবি ছিলেন রাজনীতি সচেতন। তাইতো তার লেখায় বলতেন গণতন্ত্র কথা। গণতান্ত্রিক অধিকারের কথা। তিনি চাইতেন মানুষকে অধিকার সচেতন করে তাদের ঘুম ভাঙাতে।
অামরা মনে করি, সবকিছুর ঊর্ধ্বে তার সৃষ্টিই তাকে অামাদের মধ্যে চিরদিন বাঁচিয়ে রাখবে। বিদায় বেলাল চৌধুরী।