কুমিল্লার শহরতলীর পশ্চিম চাঁন্দপুরের স্কুল রোডের কবরস্থান সংলগ্ন
‘ড্রিমস’ নামের তিন তলা বাড়ির দোতলায় ত্রিশ বছর ধরে বসবাস করেন চট্টগ্রাম
পুলিশের সাবেক আরআই মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম। স্ত্রী জেবুন্নাহার ইসলাম জমিলা ও
দুই ছেলে এবং এক মেয়ে নিয়ে তার পরিবার।
বড় ছেলে মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর। ছোট ছেলে মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। সে স্যামসাং ইলেকট্রনিকস
এ চাকুরি করেন। মেয়ের নাম সামিয়া ইসলাম। বিয়ের পর সে ঢাকাতেই থাকেন। জাহিদ দুই মেয়ের জনক।
রোববার সরেজমিনে ঐ বাড়িতে গেলে বাড়ির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভাড়াটিয়া জানান, ‘ড্রিমস’ নামের তিন তলা বাড়িটির দোতলায় থাকেন পুলিশের সাবেক আরআই মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী। ছেলে মেজর জাহিদুল আসতেন মাঝে মাঝে। সর্বশেষ গত ৭/৮ মাস আগে সে এসেছিলো। কিন্তু বাসা থেকে বের হতো না। বছর দুয়েক আগে এবং কয়েকমাস আগে সে কানাডা গিয়েছিলে। এলাকার সবাই জানতো সে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণে কানাডায় গিয়েছেন।
ওই ভবনে গিয়ে দেখা যায়, দোতলার সব দরজা তালাবদ্ধ। ভাড়াটিয়ারা জানান, শুক্রবার সকালে হার্টের চিকিৎসার কথা বলে পুলিশের সাবেক আরআই মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী ঢাকা চলে গেছেন। এখনো ফিরেন নি।
নাম প্রকাশ না করে এলাকাবাসী জানান, মেজর জাহিদুল কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। সেনাবাহিনীতে চাকুরীর পর সে কুমিল্লা শৈলরানী দেবী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রাক্তণ প্রধান শিক্ষক মো: মমিনুল হকের ছোট মেয়ে শিলাকে বিয়ের করেন। কুমিল্লাতেই সে বিয়ের অনুষ্ঠান হয়।
জাহিদুল বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির ৪৩ লং কোর্সে প্রশিক্ষণ শেষে ২০০০ সালে সেনাবাহিনীতে কমিশন পান। পদাতিক বাহিনীতে সে কর্মরত ছিলো।
এলাকাবাসী জানান, পত্রপত্রিকায় মেজর মুরাদ বলে যার ছবি দেখেছেন তারা তাকে জানেন এবং চিনেন মেজর জাহিদ হিসেবেই। এলাকাতে সে ভাল ছেলে হিসেবেই পরিচিত। শান্ত স্বভাবের। নামাজ পড়েন। এক এগারো এর সময় পার্বত্য জেলায় অভিযানে সফলতা দেখানন তিনি। গত কোরবানী ঈদে সে নিজেই গরু জবাই করেন। একটি প্রাইভেটকার নিয়ে বাড়ি আসতেন। কিন্তু বাসা থেকে তেমন বের হতেন না। শেষ তাকে ৭/৮ মাস আগেই দেখেছিল।
তারা জানান, তার বাবা মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম স্থানীয় মসজিদে নামাজ পড়া ছাড়া কারো সাথে মিশতেন না। গত বছর ঢাকায় তার হার্টের রিং পড়ানো হয়। তিনি মসজিদের সবাই বলেছেন তার ছেলে কানাডায় গেছে।
প্রতিবেশীরা আরও জানান, কানাডা যাওয়ার পর ব্যাপক পরিবর্তন আসে জাহিদুলের মধ্যে। স্ত্রী শিলা ও দুই মেয়েকে ধর্মীয় অনুশাসনে চলতে বাধ্য করেন। স্ত্রী শিলাকে বলেন চোখ ছাড়া আর কিছু দেখা যাবে না এমন পোষাক পড়তে। এ নিয়ে দ্বন্দ্বও হয়। কিন্তু সংস্কৃতিমনা শশুর বাড়ির লোকদের আপত্তি সত্ত্বেও তা মেনে নিতে হয়।
স্থানীয়রা আরো জানান, ত্রিশ বছর আগে ১৯৮৫ সালে জাহিদের বাবা কুমিল্লা শহরতলী পশ্চিম চাঁন্দপুর স্কুল রোডে বাড়ি করেন। তাদের গ্রামের বাড়ি সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে।
ভাড়াটিয়া আবদুল বারেক, জয়নাল আবেদীন ও তন্বী আক্তার জানান, তারা জাহিদকে এ বাড়িতে খুব কমই দেখেছেন। কেননা তিনি আসার পর বাড়ি থেকে তেমন একটা বের হতেন না।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন জানান, জাহিদের বাবা মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম সর্বশেষ চট্টগ্রাম থেকে অবসরে যান। তিনি সেখানে আরআই ছিলেন। তার দুই ছেলে এক মেয়ে। মেজর জাহিদ সবার বড়। এলাকার লোকজন তাদের সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না। কারণ তারা পরবর্তিতে এখানে স্থায়ী হয়েছেন। আমরা তার সম্পর্কে আরো অনুসন্ধান করছি।
মেজর জাহিদ সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়া কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার উপপরির্দশক (এসআই) শাহীন জানান, ছবি দেখে স্থানীয়রা নিহত জঙ্গিকে জাহিদ বলে শনাক্ত করেছেন।