কানাডার ২৪তম জাতীয় নির্বাচন নিয়ে উৎসাহ-উদ্দিপনার শেষ নেই। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সারা দেশ ঘুরে নির্বাচনী সমাবেশগুলোতে যোগ দিয়েছেন প্রধান তিনটি দলের নেতা। নির্বাচনে আছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত খালিশ আহমেদ, তিনি ক্যালগরি থেকে এনডিপির পক্ষে নির্বাচনে লড়ছেন।
বিভিন্ন জরিপ বলছে নির্বাচন হবে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। আর তা মূলত ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি, সংসদের বিরোধী দল নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) এবং লিবারেল পার্টি এ তিন দলের মধ্যে। নির্বাচনে ৩৩৮টি আসনে লড়ছে ১,৭৯২ জন প্রার্থী। গত একমাসে যতগুলো নির্বাচনী জরিপ হয়েছে এতে লিবারেল পার্টি সবচেয়ে এগিয়ে। সিবিসি নিউজ ৭টি বড় জনমত জরিপকে এক করে দেখেছে ৩৬.৫% লিবারেল, ৩১.১% কনজারভেটিভ আর ২২.২% এনডিপি ভোট পাবে। আসন সংখ্যায় যথাক্রমে ১৪১, ১২০ ও ৭১।
বাঙালী অধ্যুষিত টরন্টোর সাউথ স্কারবোরো ও বিচেস ইস্ট এলাকায় বাংলাদেশী কানাডিয়ান কোনো প্রার্থী নেই। প্রায় লক্ষাধিক বাংলাদেশী এখন কানাডায় বসবাস করছেন। এদের প্রায় অর্ধেকই ভোটার। কেউ কেউ ইতোমধ্যে অগ্রিম ভোট দিয়েছেন গত সপ্তাহে। বাকিরা ১৯ অক্টোবর দেবেন।
ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা স্টিফেন হারপার পরপর তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। গত নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টি ৩৯.৬২% পেয়ে ১৬৬টি আসন, এনডিপি ৩০.৬৩% পেয়ে ১০৩টি এবং লিবারেল পার্টি ১৮.০১% পেয়ে মাত্র ৩৪টি আসন অর্জন করেছিলো। বর্তমানে কানাডার পার্লামেন্টে (হাউস অব কমন্স অব কানাডা) ৩৩৮টি আসন রয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হলে একটি দলকে ১৭০টি আসন পেতে হবে। গত জাতীয় নির্বাচনে আসন সংখ্যা ছিল ৩০৮টি। এবার তা বৃদ্ধি করে ৩৩৮টি করা হয়।
এবারের নির্বাচনে যে ইস্যুগুলো বেশ জোরালো হয়ে দেখা দিয়েছে তা হলো বিল সি-৫১, বিল সি-২৪, ইমিগ্রেশন এবং মুসলিম নারীদের হিজাব পরার অনুমোদন। বিল সি-২৪ কানাডায় ইমিগ্র্যান্টদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করেছে বলে অভিযোগ।
কনজারভেটিভ পার্টির নির্বাচনী শ্লোগান হচ্ছে- স্ট্রং কানাডা/স্ট্রংগার ইকোনমি। লিবারেল পার্টির রিয়েল চেইঞ্জ। আর এনডিপির রেডি ফর চেইঞ্জ।
নির্বাচনী জরিপের ফলাফল যদি সত্যি হয় তবে লিবারেলের এর নেতা জাস্টিন ট্রুডো হবেন কানাডার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। তরুণ এ নেতার জন্ম ১৯৭১ সালের ২৫ ডিসেম্বর। আমাদের বিজয়ের ঠিক নয়দিন পর। ২০১৩ সালের ১৩ এপ্রিল দলের নেতা নির্বাচিত হয়ে মাত্র দু’বছরে দলকে এগিয়ে এনেছেন, ভোটারদের মন জয় করেছেন, এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। সাহিত্য ও শিক্ষায় ব্যাচেলর ডিগ্রীধারী জাস্টিন কর্মজীবন শুরু করেছিলেন স্কুলে শিক্ষকতা দিয়ে। দুই পুত্র আর এক কন্যার জনক জাস্টিনের স্ত্রী সোফিয়া। তাঁর পিতা পিয়েরে ট্রুডো ৭০ ও আশির দশকে প্রায় ১৫ বছর কানাডার একজন সফল প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
তিনি কানাডায় বহুজাতিক অর্থাৎ মাল্টি কালচারের জনক। অভিবাসীদের নেতা হিসেবে সুপরিচিত। বাংলাদেশ সরকার তাঁকে মুক্তিযুদ্ধের সন্মাননা দিয়েছে।
ফেসবুক এবং কানাডার নির্বাচন
শুধু ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্ট আর মন্তব্য নিয়ে অনেক প্রার্থীকে প্রার্থীতা প্রত্যাহার বা ক্ষমা চাইতে হয়েছে। কনজারভেটিভের অগাস্টিন আলীর প্রার্থীতা প্রত্যাহার করা হয় ৭ আগস্ট। শুধুমাত্র এনডিপি নেতা মুলক্লেয়ারের ছবি শেয়ার করার জন্য। একই দলের উইলিয়াম মাগরাবি ২৪ আগস্ট তার ফেসবুক একাউন্ট বন্ধ করে দেন, যখন বুঝতে পারেন অনেক আপত্তিকর ছবি তিনি পোস্ট করেছিলেন। ফেসবুকে একজনকে ‘মনস্টার’ মন্তব্য করে ৮ সেপ্টেম্বর চাকুরী হারিয়েছেন কনজারভেটিভের সু ম্যাকডোনেল। দলের আরেক প্রার্থী রবার্ট স্টিকল্যান্ড ফেসবুকে একটা পোস্টের জন্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছেন।
নিজের ফেসবুকে ইসরাইলের সমালোচনা করায় গত ১০ আগস্ট পদত্যাগে বাধ্য হন এনডিপি প্রার্থী মরগান হুইলডন। একই দলের এলেক্স জনস্টন ৭ বছর আগে তার ফেসবুক একাউন্টে একটা মন্তব্য করার জন্য ২২ সেপ্টেম্বর দুঃখ প্রকাশ করেন। মারিজুয়ানা পারিবারিক সংঘর্ষ কমায়, ফেসবুকে এ মন্তব্য করায় ১০ সেপ্টেম্বর লিবারেলের দলীয় প্রার্থীতা থেকে পদত্যাগ করতে হয় জয় ডেভিসকে। ল্যাংফোর্ডে লিবারেলের প্রার্থী মারিয়া মান্না ২৮ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেন টুইন টাওয়ারে হামলা সংক্রান্ত ফেসবুকে তার মন্তব্যের জন্য। নিজের ফেসবুক একাউন্টে ইসলাম-বিরোধী মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে হয় ব্লক কুইবেক প্রার্থী সান্টালের।
কানাডিয়ান পার্লামেন্টে ভারতীয় বংশোদ্ভূত সাংসদ আগে থেকেই আছেন, এই নির্বাচনেরও তিন প্রধান দলই ভারতীয় কানাডিয়ান প্রার্থী দিয়েছে। বাংলাদেশী-কানাডিয়ান প্রার্থীও আছেন এই নির্বাচনে। এই নির্বাচনকে ঘিরে বাঙালি কমিউনিটিতে আগ্রহ-আলোচনার শেষ নেই। অভিবাসন-কর্মসংস্থান বিষয়ে নতুন সরকার কী করেন আর প্রার্থীদের আশ্বাস বেশ ভালোভাবেই লক্ষ করছেন তারা।
স্বভাবতই এখানে বাঙালীদের মধ্যেও এখন আলোচনার বিষয় একটি, কে জিতবে এ নির্বাচনে?
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)