চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

কাঁদলেন অঞ্জন, লিখলেন গান

অঞ্জনের গানে, কথায় ও সুরে উঠে এলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা

রঞ্জনা, বেলা বেলা বোস, মালা, মি. হল, আলীবাবা, জেরেমি অথবা দার্জিলিং, কাঞ্চনজংঘা, ৩৬ চৌরঙ্গী লেন, লাকী আখন্দ কিংবা ঢাকার বেইলি রোড তুলে আনা আদ্যোপান্ত শিল্পী অঞ্জন দত্ত। শুক্রবার পুরোটা দিন তিনি ঢাকায়। গেল এক সপ্তাহে দুইবার! ‘লেবু লজেন্সের শিশি হাতে’ ইস্টিশনে বসে থাকা সহজ মানুষটি কত চরিত্র কিংবা স্থান কথায় সুরে গিটারে চিনিয়েছেন বাংলা গানকে। আর এবার তার গানে, কথায় ও সুরে উঠে এলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

ইতিহাস পড়ে বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের গল্প এতোদিন জেনে এসেছেন। কিন্তু এবার সেই ইতিহাস যেনো ছুঁয়ে দেখলেন ভারতীয় জনপ্রিয় নির্মাতা, অভিনেতা ও সংগীতশিল্পী। অন্তত ঢাকার দর্শকদের সামনে এমনটাই জানালেন অঞ্জন।

৩১তম বিসিএস আয়োজিত মুজিববর্ষ ও চাকরিতে যোগদানের ৭ম বর্ষ পূর্তির এই অনুষ্ঠানে গাইতে আমন্ত্রণ জানানো হয় অঞ্জন দত্তকে। গাওয়ার প্রসঙ্গ আসলেই ছেলে নীল দত্ত হোন বাবার সঙ্গী। এ যাত্রায়ও তাই। নীলকে সঙ্গে নিয়ে শুক্রবার সকালেই ঢাকা পৌঁছেন তিনি। এসেই গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবহ ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে। ঘুরে ঘুরে সেই বাড়িটি দেখেছেন! সন্ধ্যার পর যখন শত শত দর্শক অঞ্জনের অপেক্ষায়, তখন মঞ্চে এসে এসব গল্পই বলছিলেন ‘রোমিওকে হোমিওপাতির দোকান খুলে দেওয়া ‘জানলাকে আকাশ’ মানা এই শিল্পী!

১৯৯৮ সালের এপ্রিলে প্রথমবার ঢাকায় এসেছিলেন অঞ্জন। জাতীয় যাদুঘরে আয়োজিত সেই অনুষ্ঠানটি ছিলো গানের। হল ভর্তি দর্শকের সামনে অঞ্জন গেয়েছিলেন। আর সে অনুষ্ঠানেই তাঁর পরিচয় হয়েছিলো দেশের প্রয়াত কিংবদন্তী শিল্পী লাকী আখন্দের সঙ্গে! গড়ে উঠেছিলো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। পরবর্তীতে লাকী আখন্দকে নিয়ে একটি গানও লিখেছিলেন অঞ্জন। সেইসব আবেগও যেন স্পর্শ করে গেলো শুক্রবারের আয়োজনটিতে। কারণ, এবারের আয়োজনটিও ছিলো জাতীয় যাদুঘরের মূল মিলনায়তনে!

সদ্য সমাপ্ত ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের অষ্টাদশ আসরে দেখানো হয়েছে পরিচালক অঞ্জন দত্তের ছবি ‘ফাইনালি ভালোবাসা’। বাংলাদেশে নিজের ছবি নিয়ে প্রথম সফর বললেন তিনি। গেল ১৮ জানুয়ারি ছবিটির প্রদর্শনী হয়েছে। কাকতালীয়ভাবে সেটিও হয়েছে জাতীয় যাদুঘরের মূল মিলনায়তনে! এতো এতো কাকতালের ঘটনায় দর্শকের তুমুল করতালি পড়ে।

এবার গাইবার পালা। গিটার হাতে মঞ্চে একা অঞ্জন। গেয়ে উঠলেন, ‘আমার জানলা দিয়ে একটুখানি আকাশ দেখা যায়/ একটু বর্ষা একটু গ্রীষ্ম একটুখানি শীত/ সেই একটুখানি চৌকো ছবি আঁকড়ে ধরে রাখা/ আমার জানলা দিয়ে আমার পৃথিবী’!

থামলেন অঞ্জন। সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চে তার সঙ্গে যোগ দিলেন ছেলে নীল দত্ত। তার হাতেও এবার গিটার। একটু গম্ভীর কণ্ঠে অঞ্জন বললেন, বিশেষ একটা ভাবনা কিংবা চিন্তা থেকে আমি কখনো গান লিখিনি। লিখতে পারিনি। আয়োজকদের অনুরোধেও আমি তাদের আশাহত করেছিলাম…।

এরপর স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে অঞ্জন বললেন, শুক্রবার কলকাতা থেকে এসেই সোজা বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর বাড়িতে গিয়েছি। ঢাকায় যতোবারই এসেছি, বঙ্গবন্ধুর নামে যাদুঘরটিতে একাধিকবার গেলেও সেই স্মৃতিবিজড়িত বাড়িতে কখনো যাওয়া হয়নি। এবার আয়োজকদের কল্যাণে সেখানে যাওয়া হলো। শুক্রবার সকালে যখন ৩২ নম্বর বাড়িতে গেলাম, এবং সেই রাতের (১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট) ঘটনা শুনতে শুনতে আমার মাথায় গানটা এসে গেলো।

এই বলে গিটারের টুংটাং শব্দসমেত অঞ্জন গেয়ে উঠেন: ‘এখনো মুক্তি পায়নি অনেক মন/ এখনো চলছে মানুষের হাহাকার/ তাই স্বাধীন চিন্তা যতোবারই হবে খুন/ মনে পড়ে যায় বন্ধু আমার। মনে পড়ে যায় সেই রাতের কথা/ দশ বছরের রাসেলের চিৎকার/ আমার স্বাধীনতার দিনে তুমি হলে শহীদ/ মনে পড়ে যায় বন্ধু আমার।/ মনে পড়ে যায় তোমাকে চে গুয়েভারা/ মনে পড়ে যায় রবী ঠাকুর/ মনে পড়ে যায় মার্টিন লুথার কিং/ মনে পড়ে যায় তোমাকে মুজিবুর।’

গান শেষ হওয়ার আগেই শ্রোতা-দর্শকের তুমুল কড়তালিতে যেন ফেটে পড়ে মিলনায়তন। তার মাঝেই ৩১ তম বিসিএস-এর প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ আল হাদী মাইক্রোফোন হাতে বলে উঠেন: আমরা যখন অঞ্জন দত্তকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে গেলাম কিছুক্ষণ ঘুরে দেখার পর দেখলাম অঞ্জন দত্তের চোখে জল। এটা অভূতপূর্ব এক দৃশ্য ছিলো! সেই অনুভূতির কিছুটা হলেও তাঁর গানে উঠে এসেছে।

এরপর প্রায় দেড় ঘন্টা উপস্থিত দর্শকদের গান গেয়ে শোনান অঞ্জন ও নীল দত্ত।

বিসিটিআই-এর প্রাক্তনী সংসদ আয়োজিত চলচ্চিত্র বিষয়ক একটি সভায় অংশ নেন অঞ্জন

এরআগে শুক্রবার বিকালে জাতীয় যাদুঘরের একটি সেমিনার কক্ষে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (বিসিটিআই)-এর প্রাক্তনী সংসদ আয়োজিত চলচ্চিত্র বিষয়ক একটি সভায় অংশ নেন অঞ্জন। সেখানে তিনি তার চলচ্চিত্র নির্মাণ ভাবনা, অভিনয়শিল্পী জীবনের অতীত আর বর্তমান কালের কথা তুলে ধরেন আড্ডার মেজাজে।