একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত বাগেরহাটের শেখ সিরাজুল হক ওরফে কসাই সিরাজ এবং খান আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে সাত অভিযোগ আনা হয়। ট্রাইব্যুনালে আনা সাত অভিযোগের মধ্যে ছয়টি প্রমাণিত হয়েছে।
শেখ সিরাজুল হক ওরফে কসাই সিরাজের বিরুদ্ধে প্রমাণিত অভিযোগসমূহ
অভিযোগ-১
১৯৭১ সালের ১৩ মে দুপুর ২টার দিকে রাজাকার বাহিনীর বাগেরহাটের ডেপুটি কমান্ডার শেখ সিরাজুল হক ওরফে কসাই সিরাজ ও রজব আলী ফকিরের নেতৃত্বে ৫০-৬০ জন রাজাকার জেলার রঞ্জিতপুর গ্রামে ঘিরে ফেলে। সিরাজুল হক ও তার সহযোগীরা প্রায় ৪০-৫০ জন হিন্দুকে হত্যা করে। এরপর তারা বিভিন্ন বাড়িতে লুটপাট চালিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। ঘটনায় সিরাজের বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা, লুটপাট ও অগ্রিসংযোগসহ অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়।
তার এ অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
অভিযোগ-২
মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের শরণার্থী শিবিরে যাওয়ার জন্য বাগেরহাট জেলার রামপাল থানার ডাকরার কালী মন্দিরে জড়ো হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের দুই-তিন হাজার মানুষ। খবর পেয়ে তাদের হত্যার উদ্দেশ্য কসাই সিরাজ ও রজব আলী ফকিরের নেতৃত্বে ৪০-৫০জন সশস্ত্র রাজাকার ওই গ্রামে যায় এবং নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ছয় থেকে সাতশ জনকে হত্যা করে তারা। ১৯৭১ সালের ২১ মে বেলা ৩টা থেকে ৫টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। পরে সে ওই এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে লুটপাট চালায় এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় সিরাজের বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা, লুটপাট ও অগ্নি সংযোগের অভিযোগ আনা হয়।
তার এ অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
অভিযোগ-৩
মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৮ জুন সকাল ১০টার দিকে সিরাজের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন পাকিস্তানি সেনা সদস্য এবং ৩০-৩৫ জন সশস্ত্র রাজাকার বেসরগাতী, কান্দাপাড়া গ্রাম এবং কান্দাপাড়া বাজার থেকে ২০ জনকে অপহরণ করে। সিরাজ ও তার সহযোগীরা তাদেরকে কান্দাপাড়া বাজারে আটকে রেখে নির্যাতন করে। সেই নির্যাতনে ১৯ জন নিহত হয়। ঘটনায় সিরাজের বিরুদ্ধে খুন, অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়।
তার এ অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
অভিযোগ-৪
একাত্তরের ১৪ অক্টোবর সকালে সদর থানার চূলকাঠি গ্রাম, চুলকাঠি বাজার, গণশেমপুর ও আশপাশের এলাকায় হামলা করে সিরাজ ও রজব আলী ফকিরের নেতৃত্বে ১০০-১৫০ জন সশস্ত্র রাজাকার। এ সময় তারা ৪২টি বাড়িতে লুটপাট চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে সিরাজ মাস্টার ও তার সহযোগীরা সাত ব্যক্তিকে অপহরণ করে তাদেরকে চুলকাঠি বাজারে আটকে রাখে। পরে তাদের নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় সিরাজের বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতনসহ অন্যান্য অভিযোগ আনা হয়।
তার এ অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
অভিযোগ-৫
৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ৫ নভেম্বর দুপুরে সিরাজ, স্থানীয় রাজাকার নেতা খান আকরাম হোসেন ও আবদুল লতিফ তালুকদারসহ ৫০-৬০জন রাজাকার মিলে কচুয়া থানার শাঁখারিকাঠি হাটে হামলা চালায়। এ সময় তারা ৪০ জন হিন্দু এবং দুই স্বাধীনতা সমর্থককে আটক করে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে এবং গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে অপহরণ, হত্যাসহ অন্যান্য অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। তার এ অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
খান আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে প্রমাণিত অভিযোগসমূহ
অভিযোগ-৭
মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান শিকদার অন্য চার মুক্তিযোদ্ধাকে মোড়েলগঞ্জ থানার তেলিগাতীতে খান আকরাম হোসেন ও আবদুল লতিফ তালুকদারসহ রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা আটক করে। পরে মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানের ওপর নির্যাতন করে নদীর পাশে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায় খান আকরাম হোসেন ও আব্দুল লতিফ তালুকদারের বিরুদ্ধে অপহরণ ও খুনের অভিযোগ আনা হয়।
তার এ অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
তাদের দু’জনের বিরুদ্ধে আনিত ৬ নম্বর অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হয় নাই।