হলিউডের বৈজ্ঞানিক কল্পনার জগতে ‘প্ল্যানেট অব দ্য এপস’ সিরিজের চলচ্চিত্রগুলো দর্শকদের মধ্যে তুমুল সাড়া জাগিয়েছিলো। এই সিরিজের চলচ্চিত্রের সর্বশেষ দুই সংযোজন ২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘রাইজ অব দ্য প্ল্যানেট অব দ্য এপস’ এবং তার সিকুয়াল ২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ডন অব দ্য প্ল্যানেট অব দ্য এপস’ মুভিটিতে মানুষদের নিকটবর্তী প্রজাতির মানুষের মতোই জীবন-ধারণ দর্শকদের মধ্যে একধরনের সম্মোহন জাগায়।
রুপার্ট ওয়াটের পর ম্যাট রিভসের পরিচালিত এই মুভি দুটিতে বানরপ্রজাতিদের মধ্যে মানুষের মতো সমাজ গড়ে বসবাস এবং তাদের মুখে মানুষের ভাষা দর্শকদের মুগ্ধকর সম্মোহনের জগতে নিয়ে গেলেও বাস্তবে এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখিন হওয়ার চিন্তা কারও সুদূর কল্পনায়ও আসার কথা নয়।
কিন্তু গরিলাদের জগতে “তারকা খ্যাতি” পাওয়া কোকো বিশ্বের নতুন এক বিস্ময়ের সাক্ষি হয়েছে। মানুষের সাথে দীর্ঘ চল্লিশ বছর বসবাস করে স্ত্রী প্রজাতির এই গরিলাটি রপ্ত করেছে মানুষের মতো অসাধারণ ইশারা ভাষা।
পশ্চিমের নিম্নভূমি অঞ্চলের এই গরিলাকেই শুধু প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিলো। এই তথ্যে হয়তো হলিউডের সাড়াজাগানো ছবিগুলোর সাথে সামঞ্জস্য খুঁজে পাচ্ছেন। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন’এর প্রায়োগিক মনস্তত্ত বিভাগের জসেফ ডেভলিন ভাষার বিকাশ নিয়ে গবেষণা করেছেন।
কোকো’র এই বিস্ময়কর প্রতিভা সম্পর্কে তিনি বলেন, মানুষেরা যতো বৈচিত্রময় কাজের সামর্থ্য রয়েছে তাই তাদের অন্যান্য প্রাণী প্রজাতির থেকে আলাদা করে। কিন্তু এমন অনেক প্রমাণের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা ক্রমেই আমাদের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে যে ভাষার ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় সক্ষমতার প্রতিটি না হলেও বেশকিছু বৈশিষ্ট অন্যান্য প্রজাতির মধ্যেও রয়েছে। যা খুবই আগ্রহের বিষয়।
ডেভলিন বলেন, কোকো আমাদের মতো সচেতনভাবে তার নিঃশ্বাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নির্দেশনা মতো কাশি দিতে পারে, যা বিস্ময়কর।
সর্বাধিক জনপ্রিয় এই গরিলাটি বিশ্বে প্রচলিত ভাষার প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ইঙ্গিত ব্যবহার করে। একটি প্রভাবশালী ওয়েবসাইটের সুত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
“সে এমন ইঙ্গিত ব্যবহার করে যাতে মনে হয় সে কথা বলতে সক্ষম।” এমন চমক জাগানো তথ্যই জানিয়েছে একটি পত্রিকা। কিন্তু এই কথার সত্যতা কতটুকু?
গরিলাটি তার স্বরযন্ত্রের নিপুণ ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন রকম শব্দ করতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়; সে মানুষের মতোই কাশতে পারে। তার এ ক্ষমতা আপনাদেরকে তেমন নাড়া না দিলেও বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গেছে ভাষার বিকাশের ক্ষেত্রে এটাও একটি অগ্রগতির পর্যায়।
কোকো কে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা যু্ক্তরাষ্ট্রের ম্যাডিসনের ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন এর মার্কাস পার্লমেন গরিলাটির কিছু অসাধারণ স্বরক্ষমতা লক্ষ্য করেন। কোকোর ৭১ ঘন্টার একটি ফুটেজ দেখে তিনি এই নতুন আবিষ্কারটি করেন।
যদিও তার মূল উদ্দেশ্য ছিলো কোকোর ইশারাগুলো দেখা। তার কৃত্রিম কাশি, হাঁচি এবং ফোন ব্যবহার করে কথা বলার চেষ্টা সবই এই ইঙ্গিত দেয় যে সে তার স্বরযন্ত্রও এবং নিঃশ্বাসকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণী যেমন; শিম্পাঞ্জি এবং গরিলারা তাদের স্বরতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না বলে দীর্ঘ সময় ধরেই একটা ধারণা বিরাজমান। এ ধরনে প্রাণীরা নতুন শব্দের ব্যবহার শিখতে পারে তাও ছিলো অবিশ্বাস্য।
পার্লম্যানের মতে আমাদের পূর্বপুরুষদের ভাষার ব্যবহার হয়তো বেশিমাত্রায় ইশারা ভিত্তিকই ছিলো।
সূত্র: বিবিসি