ফ্রান্সে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে শুরু হওয়া ‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলন ভয়ানক আকার ধারণ করেছে। বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট পর্যন্ত ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে।
প্রধানমন্ত্রী এদুয়ার্দ ফিলিপে বুধবার জানুয়ারিতে নতুন কর আরোপের পরিকল্পনা বাতিল ঘোষণার পরও বিক্ষোভ না কমে বরং বাড়ছে।
বিবিসি জানায়, শনিবার দেশটির রাজধানী প্যারিসের সিটি সেন্টারে প্রায় ১০ হাজার বিক্ষোভকারী সরকারবিরোধী আন্দোলনের জন্য অবস্থান নেয়। দেশজুড়ে এই সংখ্যাটি ১ লাখ ২৫ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিক্ষোভ শুরুর পরপরই আন্দোলনকারীদের দিকে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে দাঙ্গা পুলিশ। তারপরও বিক্ষোভকারীরা পিছু না হটায় আরও তীব্র সংঘর্ষ শুরু হয় তাদের সঙ্গে পুলিশের। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ভিড় লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছোড়ে।
এখন পর্যন্ত হাজার খানেক আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশসহ এ পর্যন্ত ১২৬ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
প্যারিসের পরিস্থিতি ফ্রান্সের অন্য যে কোনো জায়গা থেকে অনেক বেশি সহিংস। সেখানে অনেকগুলো গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। আন্দোলনের মাঝে একদলকে দোকানপাট ভেঙে লুটপাট করতেও দেখা গেছে।
১৯৬৮ সালের মে মাসে হওয়া দাঙ্গার পর শনিবারই প্যারিসে সবচেয়ে ভয়াবহ দাঙ্গার ঘটনাটি ঘটল।
ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলন মূলত জ্বালানি তেলের ওপর আরোপিত করের পরিমাণ বাড়ানোর প্রতিবাদে শুরু হলেও এখন আন্দোলনটি ‘অতি-উগ্র’ বিক্ষোভকারীদের দখলে চলে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন ফরাসি মন্ত্রীরা।
শনিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে ফিলিপে বলেন, সরকারের ব্যবস্থাপনার পরও ‘অনিষ্টকারীরা’ এখনো সক্রিয় আছে। তিনি দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য সরকার ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের আহ্বান জানান।
‘সংলাপ শুরু হয়ে গেছে। এখন জরুরি জাতীয় ঐক্যের পুনর্গঠন,’ বলেন তিনি।
অন্যদিকে দেশটির জ্বালানি মন্ত্রীর অভিযোগ, আন্দোলনে উগ্রপন্থীরা রসদ যোগাচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁর প্রশাসনের অধীনে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির প্রতিবাদে কয়েক সপ্তাহ ধরে ছুটির দিনগুলোতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে আসছে ‘ইয়েলো ভেস্ট’ নামে পরিচিতি পাওয়া আন্দোলনের আন্দোলনকারীরা।
হাই-ভিজিবিলিটি (স্বল্প আলোতে উজ্জ্বল দেখা যায়) জ্যাকেটের মতোই একটি হলদে-সবুজ জ্যাকেট পরে বিক্ষোভকারীরা আন্দোলনে নেমেছে বলে এর নাম হয়েছে ‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলন। ফরাসি আইন অনুসারে যে কোনো যানবাহনে এই পোশাকটি থাকা বাধ্যতামূলক।
নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনে প্রথমে শুধু আরেক দফা জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার প্রতিবাদ করা হলেও সময়ের সাথে সাথে অভিযোগের ডালপালা ছড়াতে থাকে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের প্রতি জনগণের আরও সুদূরপ্রসারী ক্ষোভ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বর্তমানে এটি রূপ নিয়েছে সরকারবিরোধী আন্দোলনে।