চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

বর্তমান সমাজ বাস্তবতায় অস্থিরতা, অসহিষ্ণুতা, ক্ষমতা প্রদর্শনের বাড়াবাড়ি যেন নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার আরও একটি নজির আমরা প্রত্যক্ষ করলাম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে নওশাদ আহমেদ নামের পঞ্চাশোর্ধ এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রোগীর স্বজন, চিকিৎসক এবং আনসার সদস্যদের ত্রিমুখী হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়ে এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চার চিকিৎসক, দুই আনসার সদস্য এবং রোগীর এক স্বজন। সংঘর্ষের জেরে দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রায় তিন ঘণ্টা বন্ধ ছিলো হাসপাতালটির জরুরী সেবা বিভাগ। রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি কোন পর্যায়ে গেলে তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি থাকতে হয়, তা সহজেই বোধগোম্য। এমন কারও চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুতে চিকিৎসকের অবহেলাকেই দায়ী করা যৌক্তিক নয় বলেই প্রতীয়মান। আজকের ঘটনাটিতেও কোন সুস্পষ্ট অভিযোগ ছাড়াই চিকিৎসকদের দোষ খুঁজতে চাওয়া বাড়াবাড়ি। অতীতের নানা সংবাদে চিকিৎসক ইমেজের উপর কালিমা পড়লেও আজকের ঘটনায় অসহিষ্ণুতা, বিচারহীনতার সংস্কৃতিই দায়ী বলে আমরা মনে করি। এমন পরিস্থিতিতে কোন রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে একজন চিকিৎসকের মনে দ্বিধা কাজ করলে তাকে কি দোষ দেওয়া যাবে? এমনটি কি কোন রোগীর জন্য মঙ্গলকর? প্রতিটি মৃত্যুই দুঃখজনক এবং তা এক গভীর শূন্যতা সৃষ্টি করে। এতে পরিবার-পরিজনদের বেদনাবোধও আমরা অনুভব করতে পারি। কিন্তু তাই বলে এমন আচরণ কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সংঘর্ষের ঘটনায় জরুরি বিভাগ বন্ধ থাকাকালীন সময়ে অন্যান্য রোগীদের দুর্ভোগের দায়ভার নেয়ার কেউ নেই। আজকের এই ঘটনা আমাদের বর্তমান অস্থির সমাজচিত্রেরই ঘোর অন্ধকার রূপ। এ ঘটনায়  মৃত রোগীর দুই স্বজনকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। এমন স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে, যেখানে কোন অচলাবস্থা মৃত্যুর কারণও হতে পারে, যেকোন অনিয়ম বন্ধ ও তার বিচারের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। একটি সুষ্ঠু বিচারের নিশ্চয়তাই পারে এমন ঘটনা কমিয়ে আনতে। মানববন্ধন-কালো ব্যাজ ধারণের মতো প্রতিবাদের প্রতীকী মূল্য থাকলেও তার কার্যকারীতার অসারতাও স্পষ্ট, আর এর মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অনীহাও একটা ভয়াবহ রোগ হয়ে উঠেছে। তাই আমরা চাই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হোক, দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনা হোক এবং কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। দোষীদের যথাযথ বিচারের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই এমন অসহিষ্ণু, অস্থির আচরণ সৃষ্ট গুরুতর অপরাধগুলো কমিয়ে আনা সম্ভব।