‘লাখে লাখে সৈন্য মরে, কাতারে কাতার’, এই লেখাটি শুরু সোনাভানের পুঁথি থেকে একটি বাক্যকে ধার করে। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে পুঁথি বাংলা অঞ্চলজুড়ে অসম্ভব জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। আজ বিশ্ব মহামারিতেও দেশে দেশে লাখে লাখে মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। যাকে আমরা ডাকছি- করোনাকাল! সেরকম একটি ঘোরগ্রস্থ পৃথিবীতে করোনাভাইরাসে কাবু একটি অঞ্চল থেকে কিছু ভাবনা হাজির করতে যাচ্ছি। যা কোভিড-১৯ অতিমারীকে বৈশ্বিক থেকে স্থানীয় দৃষ্টিতে দেখার প্রয়াস।
বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঠিক দুই মাস শেষ হলো। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, সমাজে একটা উল্লেখযোগ্য করোনা নিয়ে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। এই ভয় অতিমারীকে আরো জটিল করে তুলছে। যার সাথে যুক্ত হয়েছে অতিরিক্ত তথ্যের প্রবাহ এবং সমাজে যোগাযোগ সমন্বয়হীনতা। ফলে, ভয়ের উৎস, কার্যকরী যোগাযোগ কৌশল, এবং সাম্প্রতিক করোনাক্রান্তি অনুসন্ধানের লক্ষ্যে একটি অনুসন্ধান প্রচেষ্টা করছি আমি কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে। এরই মধ্যে আজ (২৪শে মে ২০২০) ভোরে হাতে এলো নিউইয়র্ক টাইমসের প্রথম পৃষ্ঠার লেআউট! অবিশ্বাস্য ডিজাইন! আবারো প্রমাণিত হলো, করোনাক্রান্তিতে বদলে গেলো সাংবাদিকতা! করোনা অভূতপূর্ব এক অবস্থা। এটি শুধু এপিডেমিক বা প্যানডেমিক পরিভাষাতেই সীমিত নয়, একটি জ্বাজ্জল্যমান ইনফোডেমিকের উদাহরণও বটে! জনস্বাস্থ্য এবং যোগাযোগবিদ্যার গবেষণায় আজকের নিউইয়র্ক টাইমস একটি ঐতিহাসিক ডিজাইন। কমিউনিকেশন স্টাডিজে আগ্রহীরা জানেন, সাংবাদিকতার মানেই হচ্ছে মানুষকে নতুন কিছু বলা, এমন কিছু বলা যেটা মনোযোগ আকর্ষণ করবে, তাদের ধরে রাখবে। সারা পৃথিবীতেই করোনাক্রান্তি চলছে। পৃথিবীর জ্বর এখন। এই জ্বরে আক্রান্ত পৃথিবীর সংবাদপত্রগুলোও। এই অভিনব যুদ্ধের আঁচ পড়েছে সমাজের সবকিছুতেই। বাদ পড়েনি সাংবাদিকতা, নিউজপেপারের ফ্রন্ট পেইজেও রেখে গেছে কোভিড-১৯ তথা করোনাভাইরাসের প্রভাব। জনস্বাস্থ্যের এই বৈশ্বিক সংকট উঠে আসছে দেশে দেশে সংবাদপত্রগুলোর প্রথম পাতায়। সংবাদপত্রের প্রথম পৃষ্ঠা একটি সংবাদপত্রের প্রাণ। সকল পাঠক প্রথমেই নজর দেয় পত্রিকার প্রথম পাতায়। সারা দুনিয়াজুড়ে খবরের কাগজের প্রথম পাতার কদর বেশি, কেননা দিনের খবরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয় সংবাদগুলো প্রথম পৃষ্ঠায় থাকে। তাই সংবাদ জগতের প্রবেশদ্বারই হল পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠা। সেই প্রথম পৃষ্ঠা তৈরিতে সংবাদ কর্তৃপক্ষকে দিতে হয় বাড়তি মনোযোগ।
ইন্দো-বাংলা মিডিয়া এডুকেশন নেটওয়ার্কের মিডিয়া গবেষক, যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ সরকারের তথ্য কমিশনের সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার অধ্যাপক ডঃ গোলাম রহমানের মতে, নিউইয়র্ক টাইমস আজ সাংবাদিকতার ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য একটি কাজ করেছে। তারা কোভিড-১৯ এই মহামারীটিকে ঐতিহাসিক তাৎপর্য দেওয়ার লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক লক্ষ প্রাণ হারানো জনগণের একটি নতুন উপস্থাপনা হাজির করেছে। আমরা জানি, করোনাকাল ইতিহাসের এমন এক বিরাট বিয়োগান্তক ঘটনা যা বিশ্ব পরিস্থিতিকে মারাত্মক এক ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতির সম্মুখীন করেছে। যে মানুষ বিশ্বজুড়ে মহামারী মোকাবেলায় তাদের সীমিত প্রচেষ্টা নিয়ে অসহায় অবস্থায় আছে।
এই প্রসঙ্গে ভারতের বিহার রাজ্যের প্রখ্যাত ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ বিহারের গণযোগযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রফেসর ডঃ অতীশ প্রশর’র মতে- নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রথম পৃষ্ঠার একটি চিত্র আজ বিশ্ব ও ভারতীয় সাংবাদিকতার সাথে তুলনা করতে হবে। ওরা আজ এই সত্যটি প্রতিষ্ঠা করেছে যে, সাহসী সাংবাদিকতার কোনো ডিজাইনের, কোনো আকর্ষণীয় বিন্যাসের প্রয়োজন হয় না। নকশা এবং গ্রাফিক্সের শ্রেণিকক্ষে প্রাথমিক আলোচনার বিপরীতে, সাহসী এবং ন্যায়বিচার সাংবাদিকতা আকর্ষণ করে এবং আসলে রঙ, গ্রাফিক্স, স্টাইল, প্যাটার্ন, শেড ইত্যাদির প্রয়োজন হয় না।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ মাস কমিউনিকেশন এর সিনিয়র প্রফেসর অধ্যাপক ডঃ মৃণাল চ্যাটার্জির মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক লক্ষ করোনার মৃত্যুর কাছাকাছি আসায় নিউইয়র্ক টাইমসের প্রথম পৃষ্ঠাটি আজ একটি ঐতিহাসিক সংখ্যা। এই উদ্ভাবনী পৃষ্ঠা ডিজাইনের মাধ্যমে, কাগজটি বড় আকারের মানববিপর্যের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছে। মৃতরা যে কেবল সংখ্যা নয়, তাঁরাও মানুষ- যেমনটি আপনি, আমি, আমরা সকলে।
পশ্চিমবঙ্গের বিশ্বভারতী শান্তিনিকেতনের গণজ্ঞাপন ও সাংবাদিকতা কেন্দ্রের অধ্যাপক ডঃ মৌসুমী ভট্টাচার্যের মতে, এই ধরণের সাংবাদিকতা বৈশ্বিক মহামারীকে বিশেষভাবে তুলে ধরে। এই ধারার কাজগুলো গবেষণার মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আমাদের কর্তব্য।
করোনাক্রান্তিতে একটি জনস্বাস্থ্য ও যোগাযোগবিদ্যা নিয়ে একটি গবেষণা নিবন্ধের যোগসূত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অফ পাবলিক হেলথ এর মহামারী গবেষক ডঃ পর্ণালী ধর চৌধুরীর সাথে আমার কাজের যোগসূত্র হয়। জন্মসূত্রে কলকাতার বাঙালি এই গবেষকের মতে- ‘লকডাউনকে কার্যকর ও ফলপ্রসু করতে যোগাযোগে ভাষা জরুরি একটি বিষয়। কোভিড-১৯ এর সময় কোনো ভাষায় সমাজকর্তারা কথা বলছেন, সেটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুত কোভিড-১৯ এপিডেমিওলজিকাল গ্রাফের অতিদ্রুত ক্রম ঊর্ধ্বমুখী বৃদ্ধিকে একটু সমান্তরাল করে দিয়ে পৃথিবীকে সুস্থ করে তোলা এখন সময়ের দাবি। কিন্তু আমরা কি সঠিক যোগাযোগ কৌশল নিতে পেরেছি গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে? ভবিষ্যতে করোনাভাইরাসের সাথে ‘সহাবস্থান’যদি অনিবার্য হয়ে উঠে, তখন সোসাইটিতে ‘কমিউনিকেশন স্ট্র্যাটেজি’কেমন হবে? কমিউনিকেশন, ইনফরমেশন, পাবলিক হেলথ এবং মহামারী নিয়ে যারা কাজ করেন, তাঁদের বিশেষ ভাবনা দাবী করছে করোনা।
ঠিক যেদিন নিউইয়র্ক টাইমস পুরো পৃষ্ঠাজুড়ে করোনাক্রান্তির ব্যাতিক্রমী ডিজাইন হাজির করলো, সেদিন পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দৈনিক সংবাদপত্রও বৈশ্বিক এই জনস্বাস্থ্যের সংকটকে গুরুত্ব দিয়ে বৈচিত্র্যময় উপস্থাপনায় সাজিয়েছে। দিন পেরুলেই মুসলিমদের বড় ধর্মীয় উৎস ঈদ। কিন্তু করোনাক্রান্তির ঈদ নিয়ে আসছে না কোন উৎসবের আমেজ। বাংলাদেশের ‘আমাদের সময়’ পত্রিকা একটি অভিনব কাণ্ড ঘটিয়েছে। পত্রিকার লোগো (নামাঙ্কন)-তে মধ্যে কয়েকটি শব্দ জুড়ে দিয়ে পত্রিকাটির নামকরণের যথার্থতা প্রমাণ করেছে। যেমন: পত্রিকাটির মাস্টহেডে লেখা হয়েছে- আমাদের (প্রিয় জনের সঙ্গে এই ঈদে ঘরে) সময় (কাটাবো আনন্দে)। অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী ‘স্টে হোম’কে পপুলার করার চেষ্টা। সমসাময়িক ইস্যুতে মাস্টহেড পরিবর্তন করা বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে নবতর সংযোজন। প্রায় একই কাজটি করেছে বাংলাদেশের প্রচারসম্মানীয় অপর একটি দৈনিক ‘সমকাল’। এখানে ‘স ম কা ল’ চারটি বর্ণকে পৃথক করেছে তিনটি বার্তা। যা বর্তমান প্রেক্ষাপটে জনমনে তৈরী হওয়া সচেতনতাকে ইঙ্গিত দেয়। দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ যেন বলে দেয়া হলো মাস্টহেডেই। যেখানে সমকাল এর প্রতিটি অক্ষরের পরপর লেখা হয়েছে ‘সঠিক তথ্য জানুন’, দূরত্ব বজায় রাখুন’, ঘরে থাকুন সুস্থ থাকুন’। পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম জনপ্রিয় ‘সংবাদ প্রতিদিন’ ব্যানার শিরোনামের চাইতেও দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে খোদ পত্রিকারই লোগোটি। যা মেকাপটিকে প্রথাগত সাংবাদিকতা থেকে আলাদা করেছে ‘সংবাদ’ এবং ‘প্রতিদিন’ এই দুটি শব্দের মাঝে সোশ্যাল ডিসট্যান্স রাখার অভিনব আইডিয়াও সাংবাদিকতার নবতর সংযোজন। এরকম মাস্টহেডের বৈচিত্র্য একইসাথে সচেতনতামূলক বার্তা ও সৃজনশীলতাকে নির্দেশ করে।
সত্যজিত রায়ের বিখ্যাত ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন’ সিনেমায় ভাষার দরদ বোঝাতে একটি ঐতিহাসিক গান ব্যবহৃত হয়েছিলো- ‘ভাষা এমন কথা বলে বোঝেরে সকলে, উঁচা নিচা ছোট বড় সমান’। কেবল মুখের ভাষা ও সুর দিয়েই রাজার মন জয় করেছিলো গুপি আর বাঘা। যোগাযোগবিদ্যার তাত্ত্বিক প্রয়োগের এক বিস্ময়কর ঘটনা এই সিনেমা। যোগাযোগ বিষয়ে আধুনিক নিয়মকানুনের এক আশ্চর্য প্রতিফলন ঘটেছে সিনেমাটিতে। জনস্বাস্থ্যের এই বৈশ্বিক মহামারিতেও আমাদের ভাবতে শেখায় গুপি-বাঘা- মন জয় করার জন্য এমন ভাষা চাই, এমন শব্দ চাই যেখানে আছে শুধু সারকথা, সারমর্ম। কথায় আছে, ‘অল্প কথায় কাজ হইলে বেশি কথার দরকার কী’। যে অবিশ্বাস্য দ্রুততায় পৌরাণিক নারদ মুণির মতো ‘করোনাভাইরাস’ বিশ্বভ্রমণে বেড়িয়েছেন, সেখানে ভাষা নিয়ে আমরা কতটা দক্ষতা ও যোগাযোগের প্রমাণ দিচ্ছি? যোগাযোগ ও জনস্বাস্থের আন্ত:সম্পর্ক বিশ্লেষণের মোক্ষম একটি সময় এখন বহমান। সেজন্যই আমাদের এই গবেষণার প্রচেষ্টা। যোগাযোগবিদ্যার আগ্রহী গবেষক শিক্ষার্থী হিসেবে সমাজচিত্রটি খেয়াল করলে নতুন কিছু দেখবো আমরা। যেমন: ‘লক ডাউন’, হোম কোয়ারেন্টাইন এবং আইসোলেশন শব্দগুলোটির একটি আঞ্চলিক পরিভাষা থাকা দরকার ছিল। আমাদের যেমন টেলিভিশন ও সংবাদপত্রসেবীদের মধ্যবিত্ত কেন্দ্রিক চিন্তা ও চর্চার ফলে বিরাট একটা জনপদ, জনগোষ্ঠীকে আমরা এসব শব্দকে ঠিকবভাবে পৌঁছে দিতে পারিনি। সমাজকর্তারা, গণমাধ্যম অনেক বলছে, কিন্তু যাদের শোনা দরকার- তারা কি কেউ শুনছেন? উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠির কাছে পৌঁছে দেয়ার যে ভাষা এবং যোগাযোগ স্থাপন করার যে উপায় সেটা আমরা অবলম্বন করছি না। আমাদের চলমান গবেষণা কাজে আমরা কৌতুহলী হয়ে দেখতে চাইছিলাম ‘করোনাভিধানে’ কোন কোন শব্দ যুক্ত হলো?
যদি সংবাদপত্রের দিকে চোখ দিই, তাহলে দেখবো পশ্চিমবাংলা এবং বাংলাদেশে হঠাৎ করে কিছু শব্দ ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন: আইসিইউ, নমুনা, নভেল করোনাভাইরাস, কোভিড ১৯, কোয়ারেন্টিন, সোশ্যাল ডিসটেন্স, আইসোলেশন, লকডাউন, কাশি শিষ্টাচার, মাস্ক, গ্লাভস, সোপ, স্যানিটাইজার, ডিজইনফেক্টেন্ট, ব্লিচিং পাউডার, নিকোটিন প্যাচ, পিপিই, থার্মাল স্ক্যানার, কেরালা মডেল, উহান মডেল, মহামারি, প্যানডেমিক, কমিউনিটি ট্রান্সমিশন, ফিল্ড হাসপাতাল, সিডিসি, পজিটিভ, নেগেটিভ, পিসিআর টেস্ট কিট, রেপিড টেস্ট কিট, এন্টিবডি, টেস্ট এন্টিজেন, টেস্ট ভেন্টিলেটর, করোনা ইব্রাহিম হুজুর, মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা, বিশ সেকেণ্ড, স্টে হোম, প্রোটিন, ভিটামিন সি, হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন, ইমিউনিটি, জনস হপকিন্স, হার্ড ইমিউনিটি, রেসপিরেটোরি সিস্টেম, কোমরবিডিটি, গরম পানি, আদা, গোলমরিচ, লং, দারুচিনি, এলাচ, মধুযুক্ত লাল চা, স্যুপ, থানকুনি পাতা, রসুন, কালোজিরা,এজিথ্রোমাইসিন এভিগান, রেমিডিসিভির ডক্সিসাইক্লিন, ইবরমেক্টিন, প্লাজমা থেরাপি, ফ্রন্টলাইন ওয়ারিয়র/করোনাযোদ্ধা, আইইডিসিআর, গণস্বাস্থ্য, গুজব, ফেক নিউজ, ইনফোডেমিক! ভাষা সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। ভাষা দিয়েই ফলপ্রসু যোগাযোগ সম্ভব। কিন্তু, কতটা সফল হয়েছি আমরা উপরের পরিভাষাগুলোকে সঠিকভাবে উপস্থিত করতে? সমাজের চিত্রই তা বলে দিচ্ছে।
সভ্যতাঘাতি দুটো বিশ্বযুদ্ধ সাংবাদিকতার জগতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। যুদ্ধের ফলাফল দ্রুত পৌঁছে দিতে সংবাদ পরিবেশন পদ্ধতিতে এসেছিল পরিবর্তন। মানুষের কাছে কত আগে যুদ্ধের সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ খবরটি পৌঁছে দেওয়া যায় সে জন্য ইউরোপ-আমেরিকার কাগজে দেখা দিয়েছিল পৃষ্ঠসজ্জার নানান রূপরেখা। বিশ্বব্যাপী চলমান সমস্যাটি মূলত অদৃশ্য ভাইরাস মোকাবিলায় ব্যক্তিদের আচরণ ও মনোভাবের ভিত্তিতেই মোকাবেলা করতে হবে। যোগাযোগবিদ্যার জায়গা থেকে মানুষের আচরণগত দিক যেমন এখন নতুন করে ভাবনার দাবি রাখে, তেমনি এই সংকটময় পরিস্থিতিতে জনগণের আচরণ পরিবর্তনের জন্য আমাদের মিডিয়া কতটা কার্যকরভাবে বিষয়টি সামাধান করতে পারে, সেটাও দেখার বাকি রয়ে গেছে। আজ করোনাক্রান্তির প্রভাব পড়েছে সমাজের সবদিকে। জনস্বাস্থ্য নিয়ে পৃথিবীর সব দেশ একযোগে এতটা উদ্বেগ আগে কখনো দেখায়নি। করোনার সময় ‘যোগাযোগ’ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। পৃথিবীজুড়ে আলোচিত কোভিড-19 মহামারীকে জনস্বাস্থ্যের পাশাপাশি যোগাযোগবিদ্যার জায়গা থেকে দেখতে আগ্রহী। কোনো সমাজ জীবন্ত আছে কিনা সেটা বোঝার উপায় হলো সেই সমাজে পারস্পরিক যোগাযোগ প্রবাহ সজীব আছে কিনা, তার ওপর। জনস্বাস্থ্যের হুমকি বিবেচনায় রেখে বলা যায়- বদলে যাওয়া সাংবাদিকতা আমাদের ফলপ্রসু যোগাযোগবার্তারই ইঙ্গিত দেয়। এসব নতুনতর ভাবনা নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার। কমিউনিকেশন, ইনফরমেশন, পাবলিক হেলথ এবং মহামারী নিয়ে যারা কাজ করেন তারা এগিয়ে আসবেন আরো বেশি, সমাজকে দু’টো ‘নিন্দামন্দ’ করার আগে ‘দায়’টা তাই আমাদের বেশি!
কৃতজ্ঞতায়
ডঃ পর্ণালী ধর চৌধুরী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অফ পাবলিক হেলথ এর মহামারী গবেষক এবং সীমু নাসের, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী বাংলাদেশি প্রবাসী সাংবাদিক ও রম্যলেখক। বিশেষ ধন্যবাদ- চবি যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী জাওয়াদ হোসাইন, তাসনুভা তাহসিন ও কাজী সানজিদাকে গবেষণা এবং নিবন্ধে তথ্যদানের জন্য।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)