করোনার এই দুঃসময়ে বসে নেই দুইবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জনকারী অভিনেত্রী নিপুণ আক্তার। যে চলচ্চিত্র তার খ্যাতি এনে দিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজের সামর্থ অনুযায়ি সেই চলচ্চিত্রের অসচ্ছল মানুষদের মুখে হাসি ফুটানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। শুধু চলচ্চিত্রের মানুষের পাশেই নয়, সম্প্রতি পুলিশের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেও শিরোনাম হন তিনি। শুক্রবার বিকেলে চিত্রনায়িকা নিপুণ কথা বলেছেন চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে:
করোনাভাইরাসের শুরু থেকেই আপনাকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে…
প্রথমে শুরু করেছি মেকআপ আর্টিস্ট দিয়ে। পরে শিল্পী সমিতিতে ডোনেশন দিয়েছি। এফডিসির বাইরে প্রতিদিন রাস্তায় ১২ জনকে ইফতার দেই। আলাদাভাবে বিভিন্ন ট্রাফিক সিগনালে পুলিশের পাশাপাশি আনসার থাকেন তাদেরও ইফতার দেই। বনানী আমার বাসার পাশে চেকপোস্টে দেখেছি দিন নেই রাত নেই তারা ডিউটি করে যাচ্ছেন। আমার মেয়ের একটা কুকুর আছে। তাকে নিয়ে হাঁটতে বের হই। তখন রিকশাওয়ালাদের সাথে কথা বলি। জানতে পারি তারা খুব সমস্যায় আছে। সেখান থেকে প্রায় ২৫ জন রিক্সাওয়ালাকে সাহায্য চেষ্টা করি। এ সবের বাইরে অনেক মানুষ আছেন, যাদের বেতন হয়নি তাদের সাহায্য করছি। বাসায় খাবার দিয়েছি যাতে কমপক্ষে ১৫ দিন তারা ভালো থাকে। এছাড়া বাসার নিচে সিকিউরিটি আছে তাদেরও দেখছি। সবমিলিয়ে প্রতিদিন ৩৫-৪০ জনের ইফতার দিচ্ছি। মানে আমি সর্বোচ্চভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি মানুষের পাশে থাকার।
মানুষের জন্যই ছোটাছুটি করছেন। নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন তো?
এমনিতেই আমি অনেক নিট এন্ড ক্লিন মানুষ। আর করোনার ফলে আরও সচেতন হয়েছি। শতভাগ নিরাপদে চলাফেরা করছি। ওয়ান টাইম হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক ব্যবহার করি। বাইরে থেকে এলেই পরিধানের কাপড় গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করছি। জুতাও বাসার মধ্যে ঢুকাই না। এছাড়া আমার গাড়িতেও সুরক্ষার স্প্রে রেখেছি।
আপনার পার্লারটি মার্চ থেকে বন্ধ। ব্যবসায়িকভাবেও তো ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন?
২৩ মার্চ থেকে সবকিছু বন্ধ। ৩ জন থাই কর্মচারীসহ সবমিলিয়ে ৩০ স্টাফ রয়েছে। প্রতিমাস খরচ হয় ১০ লাখ টাকার বেশি। পহেলা বৈশাখে পুরোপুরি বন্ধ ছিল। আগামী ঈদেও বন্ধ থাকবে। প্রত্যেক স্টাফ ছুটিতে আছে। থাই মেয়েদের বাসা ভাড়াও বহন করছি। অন্যরা নিয়মিত বেতনসহ সব সুবিধা পাচ্ছে। একেবারে বছরের পিক টাইমে সবকিছু বন্ধ রাখতে হয়েছে। এই সময়টা দম ফেলার টাইম ছিল না। লক্ষাধিক টাকা টার্গেট থাকতো। সেটা অতিক্রম হতো। বৈশাখ, পূজায় বন্ধ থাকায় ক্ষতির পরিমাণ কোটির উপর যেতে পারে।
আপনি ফান্ড তৈরি করে ব্যবস্থাপক সমিতির পাশে দাঁড়াচ্ছেন। আরও সিনিয়র শিল্পীদের সাথে নিয়ে ফান্ড বড় করা যেত না?
আমি তো আর অন্যদের বলতে পারিনা আমার ফান্ডে টাকা দেন। তাদেরকেই নক করে ফান্ড গড়েছি যারা আমার কথা ফেলতে পারবেন না। এখানে আমার নিজের টাকা নেই। নায়িকা সোনিয়া, নায়ক মুন্না এই ফান্ডে যুক্ত হয়েছেন। আমার বন্ধু সার্কেল থেকেও হেল্প পেয়েছি। ৭০ হাজার টাকা দিয়েছি ব্যবস্থাপক সমিতিতে।
করোনার কারণে লকডাউন আরও বাড়তে পারে। কী করবেন বলে ভেবেছেন?
জানি সব অন্ধকার একদিন কেটে যাবে। যেভাবে চেষ্টা করছি মানুষকে উপকার করার সেভাবেই কাজ করে যাবো।
করোনাভাইরাস থেকে কোনো শিক্ষা পেলেন?
করোনা থেকে অনেক বড় শিক্ষা হয়েছে। সবচেয়ে বড় যে শিক্ষা দিয়েছে তা হলে মানুষ কীভাবে মানুষের পাশে থাকবে। করোনা আমাদের মানবিক জায়গাটা জাগ্রত করেছে। করোনা শিক্ষা দিল টাকা, ক্ষমতা কিছুই কাজে আসবে না। যতক্ষণ না সঠিক মানুষ হওয়া যাবে। আমাদের পরিবেশক যে কী পরিমাণে দূষণ হচ্ছিল আমরা বুঝতে পারছিলাম না। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দেখি দুপাশের গাছগুলো কত সজীব। দেখেই মনটা ভালো হয়ে যায়।
ছবি: দ্য ডেইলি স্টার