করোনাভাইরাসের উপস্থিতি চিহ্নিত করার জন্য ডিজিটাল ম্যাপ তৈরির পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। মোবাইল ব্যবহারকারীর তথ্য থেকে জানা যাবে, কোন কোন এলাকায় সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এভাবেই এই ভাইরাসের সম্ভাব্য প্রাদুর্ভাবের চিত্র জানা যাবে।
সেলফ রিপোর্টিং পদ্ধতিতে মোবাইল ব্যবহারকারীরা একটি এসএমএস পাবেন তাদের মোবাইল অপারেটর থেকে। ফিরতি জবাবে তিনি তার শারীরিক কিছু তথ্য শেয়ার করবেন।
১৬ কোটিরও বেশি মানুষ রোববার সকাল থেকে এসএমএস পেতে শুরু করবেন। পরে তাদের *৩৩৩২# নাম্বারে কোনো চার্জ ছাড়াই ফিরতি কল করতে হবে।
ইন্টারঅ্যাকটিভ ভয়েস রেসপন্স (আইভিআর) পদ্ধতিতে ৯০ সেকেন্ডের কলে ব্যবহারকারী পাঁচটি প্রশ্নের জবাব দেবেন। তা হলো: তাদের বয়স, শ্বাসকষ্ট আছে কিনা, জ্বর বা কাশি আছে কিনা, সম্প্রতি বিদেশ থেকে ফেরা কারও সংস্পর্শে এসেছেন কিনা বা করোনা আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে এসেছেন কিনা।
গতকাল শনিবার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) মোবাইল অপারেটরগুলোকে সব ব্যবহারকারীকে এই এসএমএস পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছে।
অপারেটররা সেই সব তথ্য আইসিটি ডিভিশনের অধীনে ন্যাশনাল মনিটরিং সেন্টার এবং অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রজেক্টকে জানাবে প্রতি ছয় ঘণ্টা পর। পরে তারাই সেই ম্যাপ তৈরি করবে।
ব্যবহারকারীরা http://corona.gov.bd এই ঠিকানাতেও তথ্য জানাতে পারবেন বা আরো কিছু অ্যাপ্লিকেশন যেমন বিকাশ, জিপি, রবি, বাংলালিংক ও উবারের মাধ্যমেও তথ্য জানাতে পারবেন।
এটুআইয়ের নীতি উপদেষ্টা আনির চৌধুরী ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন: আমরা পরীক্ষামূলক ধাপে আছি এবং মোবাইল অপারেটর বিশেষ করে রবির সঙ্গে খুব কাছে থেকে কাজ করছি।
গত সপ্তাহে রবি মোবাইল ট্র্যাকিং সিস্টেম তৈরি করার বিষয়ে কিছু আইডিয়া শেয়ার করে যেটা সম্ভাব্য করোনা আক্রান্ত এলাকা চিহ্নিত করার কাজে আসবে।
আনির বলেন: গ্রাহকের কাছ থেকে সংগৃহীত তথ্য একটি ম্যাপ তৈরিতে সহায়তা করবে যা সরকারকে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনা করতে সাহায্য করবে। প্রযুক্তি নিয়েই আমাদের আরো কিছু পরিকল্পনা আছে কিন্তু সেসব ক্ষেত্রে গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য কখনোই ব্যবহৃত হবে না। তথ্য জানানোটা বাধ্যতামূলক করা হবে না কিন্তু আমরা গ্রাহককে অনুরোধ করবো করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে সরকারকে সাহায্য করতে।
‘এটুআই এই ধারণা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক এজেন্সিগুলোর কাছ থেকেই পেয়েছে। সেলফ রিপোর্টিং পদ্ধতিতে কলারের তথ্য পাওয়া যাবে সরকারের ৩৩৩ কল সেন্টার থেকে।এই কল সেন্টারটি দিনে এক লাখ কল গ্রহণ করতে পারবে।
অন্য আরও কিছু এজেন্সি প্রতিদিন হাজার হাজার কল রিসিভ করবে। এসব তথ্যই সরকারকে একটি রোডম্যাপ তৈরিতে সাহায্য করবে যেখান থেকে কিভাবে এই মহামারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা যাবে তা বিশ্লেষণ করা যাবে।’
তবে যেহেতু গ্রাহকের মোবাইল নাম্বার, অবস্থান অথবা তার মোবাইলের ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি (আইএমইআই) নাম্বার ব্যবহার করা হবে তাই তথ্য ওভারল্যাপ হবে না বলেই মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
মোবাইল ফোন অপারেটরের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, এসব তথ্যর ভিত্তিতে তৈরি ম্যাপটি ৯৫-৯৮ শতাংশই বিশ্বাসযোগ্য হবে।
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানান: গত এক সপ্তাহ ধরে এই বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। এতে এটুআই, ন্যাশনাল টেলিকমিউনকেশন মনিটরিং সেন্টার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং মোবাইল অপারেটরদের সংযুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন: আমাদের সেই পুঁজি ও তথ্য প্রযুক্তির সক্ষমতা রয়েছে। তথ্য প্রযুক্তিকে আমরা বড় তথ্য বিশ্লেষক হিসেবে ব্যবহার করতে পারি আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে এই প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর ধাপ হিসেবে।
এভাবে বড় তথ্য ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার কবে বেশ সাফল্য পেয়েছে সাউথ কোরিয়া। অন্যান্য দেশও করোনা মোকাবেলায় প্রযুক্তির দ্বারস্থ হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারও সেই পথেই হাঁটবে।
মোবাইল অপারেটরের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন: আমাদের সক্ষমতা আছে সরকারকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা সম্পর্কে জানানোর এবং ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার। ম্যাপ তৈরির পর কেউ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে বাইরে গেলেও আমরা সরকারকে জানাতে পারবো।
গত এক সপ্তাহে ১ কোটির বেশি মানুষ ঢাকা ছেড়ে গ্রামে বা অন্য শহরে গেছে। তাই মোবাইল অপারেটরদের জন্য ঢাকার বাইরে একইভাবে কাজ করা বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলেও মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের। তারপরও পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আছে বলেই মন্তব্য তাদের।