বৈশ্বিক মহামারী করোনা প্রতিরোধের জন্য সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় বলা হয়েছে। ফলে সাধারণ জনতা ঘরে বসে মোবাইলে কল কিংবা ভিডিও কলে পরিবার, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। কেউবা মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর যোগাযোগের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন প্যাকেজ ব্যবহার করছেন।
মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলছেন: বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের জন্য গত সাত-থেকে দশ দিনে গ্রাহকের কথা বলার চাহিদা কিছুটা হলেও বেড়েছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের গৃহিনী সারোয়ারা খান চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান, গত এক সপ্তাহ যাবৎ বাড়ির বাইরে বের হচ্ছি না। ছেলে-মেয়ে, আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা মুঠোফোনেই সেরে নিচ্ছি। কখনোবা ভিডিও কলে কথা বলছি।
শ্যামলীর গৃহিনী সানজিনা আক্তার বললেন, করোনাভাইরাসের জন্য বাড়িতে থাকতে হচ্ছে। নিজেরাই এখন প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে গেছি। সময় কাটাতে হচ্ছে নেটফ্লিক্সে সিনেমা দেখে, কিংবা মুঠোফোনে ফেসবুকিং আর চ্যাটিং করে। আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে হোয়াটস অ্যাপস, ম্যাসেঞ্জারে প্রয়োজনীয় কথা বার্তা শেষ করছি। আগে যেখানে দিনে তিন চার বার নিকট স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতাম এখন কমপক্ষে দশবার খোঁজ খবর নিচ্ছি।
মুঠোফোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলালিংকের চিফ কর্পোরেশন অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: দেশে কোভিড -১৯ প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে আমরা আমাদের গ্রাহকদের ডেটা ব্যবহারে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে সামগ্রিক বৃদ্ধি এখনও তাৎপর্যপূর্ণ হয়নি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্রাহকদের চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে আমরা উচ্চ ভলিউমসহ ডেটা প্যাকগুলি দিচ্ছি যা তুলনামূলক ছোট ডেটা প্যাকেজের চেয়েও দামে কম।
করোনাভাইরাস জনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলালিংক নানা রকমের কার্যক্রম পরিচালনা করছে জানিয়ে তাইমুর রহমান বলেন: করোনভাইরাস ছড়িয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার অংশ হিসাবে, আমরা আমাদের গ্রাহকদের জন্য হটলাইন নম্বর টোলমুক্ত এবং কিছু প্রয়োজনীয় ওয়েবসাইটকে শূন্য-রেটিং তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের নেটওয়ার্কের সক্ষমতাও বাড়িয়েছি।
‘করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করার জন্য সরকারের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করছি। আমরা নিজেরা একসঙ্গে আরও শক্তিশালী হয়ে কাজ করলে এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারব বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তাইমুর রহমানের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ফোনের এক্সটার্নাল কমিউনিকেশনের প্রধান মোহাম্মদ হাসান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: আমরা আমাদের নেটওয়ার্কে কিছুটা বেশি ট্রাফিক দেখেছি, তবে এই ট্র্যাফিকটি এখনও স্বাভাবিক ।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন মুঠোফোন ব্যবহারের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে করোনাভাইরাস। তাই দেশের দুই শীর্ষস্থানীয় মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা গ্রাহকদের ভাইরাস ধ্বংসের জন্য অ্যালকোহল মিশ্রিত টিস্যু (অ্যালকোহল ওয়াইপস) ব্যবহার করার পরামর্শ দিলেন।
গত এক বছরে দেশে নতুন মোবাইল গ্রাহক যুক্ত হয়েছেন ৮০ লাখ। এ নিয়ে বাংলাদেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বর্তমানে সাড়ে ১৬ কোটি ছাড়িয়েছে। চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশ টেলিকম নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি) তাদের ওয়েবসাইটে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যবহারকারীর মোট সংখ্যা প্রকাশ করেছে বিটিআরসি। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৬ কোটি ৫৫ লাখ ৭২ হাজার।