মহামারি করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং সরকারের নির্ধারিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ‘সম্প্রসারণমুখী’ নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তবে ঘোষিত মুদ্রানীতির লক্ষ্য অর্জনে বেশকিছু ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা রয়েছে বলে মনে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে নতুন মুদ্রানীতির এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
গত দেড় দশক ধরে সাধারণত সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মুদ্রানীতি ঘোষণা করে আসছেন। কিন্তু করোনার কারণে এবার কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই শুধু ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে মুদ্রানীতি।
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি ৬ মাসের আগাম মুদ্রানীতি ঘোষণা করলেও গত অর্থবছর থেকে তা ১ বছর পর পর করছে।
চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতি কর্মসূচির উদ্দেশ্যগুলো অর্জনে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উভয় দিক থেকেই কিছু ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন গভর্নর ফজলে কবির।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, করোনা মহামারি, বন্যা, বিশ্ব অর্থনীতির মন্দাভাব এবং আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতার ঝুঁকি বিবেচনায় এ মুদ্রানীতি করা হয়েছে।
যেসব ঝুঁকি, অনিশ্চয়তা
১. করোনার দীর্ঘসূত্রতা ও অনিশ্চয়তার কারণে দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুনরুদ্ধারে গতি-প্রকৃতি বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
২. করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব প্রণোদনা, ঋণ ও বিনিয়োগ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, সেগুলো যথাযথভাবে উৎপাদন এবং কর্মসৃষ্টি সহায়ক উপায়ে বাস্তবায়িত না হলে মন্দ ঋণ বাড়তে পারে। এবং অনাকাঙ্ক্ষিত মূল্যস্ফীতির সম্ভাবনা রয়েছে।
৩. বৈশ্বিক চলমান অর্থনৈতিক মন্দার দীর্ঘসূত্রতার কারণে দেশের রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
৪. প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশেষ করে চলমান বন্যার কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কা। এসব ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণে সর্বদাই সচেষ্ট থাকবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরের মুদ্রানীতি সম্প্রসারণমূলক ও সংকুলান মুখী। এর মূল কাজ হলো মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রেখে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক অর্থাৎ করোনা পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া।
এ জন্য অর্থের যোগান বাড়াতে রেপো (পুনঃক্রয় চুক্তি) ও রিভার্স রেপোর সুদহার আরও এক দফা কমিয়ে নতুন মুদ্রানীতিতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকগুলো যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ ধার করে, তখন তার সুদহার ঠিক হয় রেপোর মাধ্যমে। মুদ্রানীতিতে রেপোর হার ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ করা হয়েছে। রিভার্স রেপোর মাধ্যমে বাংকগুলো তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখে। এ ক্ষেত্রে সুদহার ৭৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৪ শতাংশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, চলতি অর্থবছরে নীট বৈদেশিক সম্পদের প্রবৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে কম হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তবে সম্প্রসারণমূলক ও সংকুলান মুখী মুদ্রানীতি ভঙ্গির কারণে নীট অভ্যন্তরীণ সম্পদ বৃদ্ধিরও সম্ভাবনা রয়েছে। সে হিসেবে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ। এর মধ্যে সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ।
এছাড়া নতুন মুদ্রানীতিতে চলতি অর্থবছরের জন্য বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি আগের বছরের মত অপরিবর্তিত রেখে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও গত অর্থবছরে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। গত অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির ছিল ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম।