করোনায় হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকায় এ খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় ২ কোটি মানুষ নানা সংকটে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতেও কোনো ব্যাংক এ খাতে ঋণ দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি।
সোমবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করে সমিতি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সমিতির নেতারা বলেন, করোনার আঘাতে রেস্তোরাঁ সেক্টর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কারণ ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত রেস্তোরাঁ ব্যবসা কখনো ৫০ শতাংশ আসনে বসিয়ে, কখনো অনলাইন বা টেকওয়ের মাধ্যমে ব্যবসা সীমিত রয়েছে। কিন্তু রেস্তোরাঁ ব্যবসা শুধুমাত্র অনলাইন ডেলিভারি বা টেকওয়ের উপর নির্ভরশীল হয়ে চালানো সম্ভব নয়। তাই এ খাতের ব্যবসায়ীরা এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত।
রেস্তোরাঁ মালিকরা বলেছেন, সারাদেশে প্রায় ৬০ হাজার রেস্তোরাঁ রয়েছে। সেগুলোতে ৩০ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত। প্রায় ২ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে এ খাতে। কিন্তু এখন তারা মানবেতর জীবন-যাপন করছে। কারণ দেশের ৮০ ভাগ রেস্তোঁরাই বন্ধ রয়েছে। ফলে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে হাহাকারের টেলিফোন আসছে। মালিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে হৃদয়বিদারক কষ্ট করছেন, তা ভাষায় বুঝানো সম্ভব নয়।
হোটেল ব্যবসায়ীরা বলেন, বর্তমানে টেকওয়ে, পার্সেল ও অনলাইন ডেলিভারি করছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা হোটেল-রেস্তোরাঁ অনুপাতে মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ। অতএব, আমরা মনে করি শুধু অনলাইন ডেলিভারির সুযোগ দিয়ে রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখার ঘোষণাটি দূরভীসন্ধি মূলক ও দেশীয় ব্যবসায়ীদের কোনঠাসা করার পথ। এখানে দেশি-বিদেশি স্বার্থন্বেষী মহলের হাত রয়েছে।
এছাড়া ইএফডি মেশিন স্থাপন এবং তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ভ্যাট আদায়ে হয়রানি চলছে। পঁচনশীল পণ্য বিক্রি করার ক্ষেত্রে ঋণ দেয়া যাবে না বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় রয়েছে। এ কারণে কোন ব্যাংক হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতে ঋণ দিচ্ছে না।
জাতীয় রাজস্ব খাতে রেস্তোরাঁ সেক্টরের অনেক অংশীদারিত্ব এবং পর্যটন শিল্পের প্রধান নিয়ামক শক্তি হওয়া সত্ত্বেও শিল্পের মর্যাদা পাচ্ছি না।
এমতাবস্থায়, বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কয়েকটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। যেমন-
১. স্বাস্থ্যবিধি মেনে, হোটেল রেস্তোরাঁ, তার স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী খোলা রাখতে চাই। তাও যদি সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ আসনে বসিয়ে হোটেল-রেস্তোরাঁ চালু করতে চাই।
২. হোটেল রেস্তোরাঁ ব্যবসাকে চলমান রাখার জন্য চলতি মূলধন হিসেবে এসএমই খাত থেকে এই সেক্টরে ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে সহজশর্তে স্বল্প সুদে জামানত বিহীন এবং দীর্ঘ-মেয়াদী ঋণ দিতে হবে।
৩. যেহেতু রেস্তোরাঁ খাতটি একটি সেবা খাত সেহেতু হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিক-শ্রমিকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনার টিকা দেয়া জরুরী।
৪. হোটেল রেস্তোরাঁ খাতে কর্মরত শ্রমিকদের প্রণোদনা দিতে হবে। এক্ষেত্রে শ্রমিকদেরকে মোবাইলের মাধ্যমে নগদ অর্থ অথবা নির্দিষ্ট কার্ড প্রদানের মাধ্যমে মাসিক ভাবে খাদ্য সাহায্য দেয়ার দাবি করছি।
৫. হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতকে শিল্পের মর্যাদা দিতে হবে। যেহেতু হোটেল-রেস্তোঁরা খাতটি পর্যটন শিল্পের প্রধান নিয়ামক শক্তি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কারখানা পরিচালনা করতে যে পরিমাণ নিয়ম-নীতি বাস্তবায়ন প্রয়োজন তার চেয়ে অধিক নিয়ম-নীতি বাস্তবায়ন হয়ে থাকে হোটেল- রেস্তোরাঁ খাতে। অপরদিকে হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতকে একাধিক মন্ত্রণালয়ের অধীনে না রেখে একটি নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে শিল্পের মর্যাদা দিতে হবে ও মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
৬. চালুকৃত ই-কমার্স টেকওয়ে, পার্সেল ও অনলাইন ডেলিভারীর ক্ষেত্রে বর্হিঃবিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কমিশন করা ও একটি সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন করে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বর্তমানে ডেলিভারী কোম্পানীগুলো স্বেচ্ছাচারীভাবে ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে, যা আমাদের ব্যবসায়িক স্বাধীনতার স্বকীয়তা বিনষ্ট করছে এবং আমরা মনে করি ইহাতে সার্বভৌমত্ব ভূ-লন্ঠিত হচ্ছে। এটাকে ইস্ট ইন্ডিয়ার নীল চাষের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। ইতোমধ্যে অনলাইনে পণ্য ডেলিভারীর ক্ষেত্রে সরকার একটি নির্দেশনা দিয়েছে, যা অতীব জরুরী ছিলো। সে অনুযায়ী হোটেল-রেস্তোরাঁর ই-ফুড ডেলিভারীর ক্ষেত্রেও সু-নির্দিষ্ট নীতিমালা দেয়া জরুরী ও মনিটরিং ব্যবস্থা জোরালোভাবে করতে হবে, যাতে উভয়পক্ষের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়।