দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিটি করপোরেশন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র এডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। শিল্পনগরী গাজীপুরের সাধারণ মানুষের আস্থার নাম জাহাঙ্গীর আলম। আর তার প্রতিফলন ঘটে দ্বিতীয় মেয়াদে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন তিনি। গাজীপুর সিটি মেয়র এডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের ব্যক্তিজীবন সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। তার পিতা মোঃ মিজানুর রহমান আর মা মোসাম্মদ জায়েদা খাতুন। ৭ মে ১৯৭৯ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এলএলবি এবং ভাওয়াল বদরে আলম সরকারী কলেজ থেকে স্নাতক ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি তার। একই গ্রামের মক্তব থেকে পবিত্র কোরআন ও হাদিস অধ্যয়ন রপ্ত করেন। চান্দনা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাস করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ মুখে ঘোষণার মাধ্যমে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে লালিত পারিবারিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা তার। মামার হাত ধরে চান্দনা উচ্চ বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসাবে রাজনীতির হাতেখড়ি। ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক হিসাবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ গাজীপুর জেলা শাখার সহ সভাপতি। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সহ সম্পাদক ও বাংলাদেশ ছাত্র লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সহ সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর সদর ও টঙ্গী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। দশ লাখেরও বেশী ভোটের ব্যবধানে তিনি বিজয়ী হন। তিনি পর পর তিনবার ভাওয়াল বদরে আলম সরকারী কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলেন। মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর মহানগর ইমাম সমিতি ও বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশন গাজীপুর মহানগর ৩২টি সংগঠন এর প্রধান উপদেষ্টা। গাজীপুর জেলা সমবায় ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক সভাপতি। গাজীপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সহ সভাপতি। বাংলাদেশ অনলাইন মিডিয়া এসোসিয়েশন বিওএমএ এর সিনিয়র সহ সভাপতি।
জাহাঙ্গীর আলম শিক্ষা ফাউন্ডেশন এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। প্রতিষ্ঠানটি গাজীপুর তথা দেশের মেধাবী ও সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের নগদ আর্থিক সহায়তা, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, যানবাহন, শিক্ষা উপকরণ দিয়ে সহায়তা করে থাকে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এবং সড়ক যোগযোগ ও সেতুমন্ত্রী জননেতা মো: ওবায়দুল কাদের ৫০ হাজার শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে বিশাল মহাসমাবেশের মাধ্যমে ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম শুভসূচনা করেন। বর্তমানে ফাউন্ডেশন থেকে ৫৫০জন শিক্ষার্থীর উচ্চ শিক্ষার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বহন করা হয়। গাজীপুর মহানগর কেজি স্কুল এসোসিয়েশন নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক, খালেক স্মৃতি শিক্ষা ফাউন্ডেশন’ এর প্রধান উপদেষ্টা। গাজীপুর মহানগরে ৪৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আজীবন দাতা সদস্য। ধীরাশ্রম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আজীবন দাতা সদস্য। ব্যবসায়ী হিসাবে জাহাঙ্গীর আলম অত্যন্ত সফলতার সাক্ষর রেখেছেন। তিনি অনারেবল টেক্সটাইল এন্ড কম্পোজিট লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাছাড়া জেড আলম অ্যাপারেলস প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দীর্ঘ ২২ বছর যাবৎ অত্যন্ত সুনামের সাথে দেশের বাজারে ও বিদেশে তৈরী পোশাক ক্রয় বিক্রয় করে। তিনি নিয়মিত আয়কর প্রদান করেন।
সম্প্রতি জাহিদ নেওয়াজ খানের পরিকল্পনা ও রাজু আলীমের পরিকল্পনায় চ্যানেল আই এর টু দ্য পয়েন্ট অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে আসেন তিনি। ৩০ হাজার কিট দিয়েছেন, ১ লাখ মাস্ক এনেছেন এবং ৮ হাজার পিপিই দিয়েছেন। সরকার বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে কাজটি পারলো না, তিনি কিভাবে তা করে ফেললেন; এমন প্রশ্নের উত্তরে জাহাঙ্গীর আলম বলেন- ‘সরকার তো অবশ্যই করছে। সরকারের যিনি প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘরে বসে ১৭ কোটি মানুষকে দেখেন। মানুষের পাহারাদার হিসেবে তারা ভালো আছেন নাকি মন্দ আছেন তা জননেত্রী ভাবেন। যে সময়ে যে ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার তা তিনি নিচ্ছেন। আর আমরা যে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছি; সরকার তো অবশ্যই সহযোগিতা করে। এখন যে অবস্থা সারা পৃথিবীতেই করোনা ভাইরাস নিয়ে সারাবিশ্বে প্রচার মাধ্যমে আমরা শুনছি। আমাদের দেশেও সবশেষে এটা আসলো। সেই হিসাবে আমাদের জায়গা থেকে নিজেরা সতর্কতা অবলম্বন করেছি। আমরা বিশেষ করে আমি আমার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে ৮০টি মাইক দিয়ে মাইকিং করেছি। এখানে ৯০ পারসেন্ট মুসলমান। পঁচিশশো মসজিদের ইমাম খতিবদের নিয়ে বসেছি। বসে তাদেরকে বলে দিয়েছি তাদের দায়িত্ব কি হবে? কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান, সরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের সাথে সচেতনতামূলক কাজ করছি। সবশেষ আমাদের সিটি কর্পোরেশন থেকে ৬৫ টি কমিটি করে দিয়েছি। ’ সচেতনতার পাশাপাশি কিটের সমস্যা সমাধান করার ব্যাপারে মেয়র বলেন, ‘ডাক্তার এবং বিশেষজ্ঞ তারা জানেন এই ব্যাপারে। চায়নাতে যখন এই রোগ আসলো তখন চায়নাকে সহযোগিতা করেছিলাম। ২০ লাখের মত মাস্ক ও কিট দিয়েছি চায়নাকে বন্ধু দেশ হিসাবে। আবার যখন আমরা বিপদে পড়েছি তখন তারা আমাদের নক করেছে। বলার সাথে সাথে তারা কতো কিট ও মাস্ক লাগবে এবং সেই সাথে ড্রেসটা।
যেহেতু ডাক্তাররা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ৯০ হাজার ডাক্তার ও নার্স তারা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ডাক্তার এবং নার্সরা নিরাপদ না হলে তো কিছুই হবে না। তাই যে ড্রেস একেবারে পরীক্ষিত এবং যা দিয়ে কোন জীবানু ঢুকবে না সেই ড্রেস অলরেডি ১০ হাজারের মত আমি নিয়ে এসেছি।
এই ড্রেস আজকেও আসবে আগামীকালও আসবে। গাজীপুর তো আমি অবশ্যই দেখবো এবং প্রয়োজনে বাইরেও যদি দরকার হয় আমি চেষ্টা করবো তাদেরকে এই ড্রেস দিতে। একজন ডাক্তার এবং নার্সের যা যা প্রয়োজন সব ব্যাপারেই আমরা সহযোগিতা করবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনুরোধ করেছেন বিত্তশালীদেরকে এগিয়ে আসতে। আমি মনে করি নিজে চলে যাদের অতিরিক্ত থাকে তারাই বিত্তশালী। কারণ এই অবস্থার ভেতরে আমরা খেয়ে পড়ে যদি আমাদের পাশের লোকেদের খবরটা না নেই তাহলে সেই বিত্তশালীদের সমাজে প্রয়োজন কি? কারণ মানুষে২ টা ড্রেস এবং তিনবেলা খেলেই চলে।
সেই জন্যে আমরা চেষ্টা করছি এবং সিটি কর্পোরেশন থেকে উদ্যোগ নিয়েছি প্রথম পর্যায় থেকে ন্যূনতম ৫০ হাজার পরিবারকে খাবার দেব। ’ যে ৩০ হাজার কিট এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এসেছেন তার বিতরণের ব্যাপারে তিনি জানান- ‘এটা মূলত আমাদের সদরের যে হাসপাতাল আছে বিশেষ করে আমাদের গাজীপুরে যে সব হাসপাতাল আছে। গাজীপুরে ৭টা সরকারী হাসপাতাল আছে। আর বেসরকারী প্রায় ২০০ এর মতো আছে। মূলত গাজীপুর সিটি এবং জেলাকেই প্রাধান্য দিচ্ছি। তারপরেও অন্যান্য হাসপাতালের সাথে কথা হয়েছে জেলার সাথে কথা হচ্ছে এবং সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথেও কথা হয়েছে।
গাজীপুরের বাইরে সাহায্যের ব্যাপারে এক প্রশ্নের উত্তরে মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন: ‘আগে নিজের ঘর নিরাপদ রাখতে হবে। আমি বলেছি- নিজে নিরাপদ থাকবো, নিজের পরিবারকে নিরাপদ রাখবো ও দেশবাসীকে নিরাপদ করবো। সেই হিসাবে আমরা শুরু করেছি এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করছি কার দ্রুত প্রয়োজন। সেখানে আমরা সাপোর্ট দিতে চাই। আগে যা হয়ে গেছে কিন্তু এখন থেকে আর একটা মানুষও করোনায় যেনো ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সবাইকে সচেতন হতে হবে। আমাদের চ্যালেঞ্জ হলো- আমরা যদি খেয়ে পড়ে থাকি তাহলে আমাদের প্রতিটি নাগরিককেও থাকতে হবে। গাজীপুর একটু আলাদা কারণ এখানে গার্মেন্টস সেক্টর আছে। প্রায় ২২ লাখের মতো ওয়ার্কার আছে এই এলাকায়। দেশী বিদেশী সবাই এই এলাকায় অবস্থান করছে। সেই জন্যে তাদের নিরাপত্তা এবং গার্মেন্টস এর উপরে আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে আমরা জড়িত তাই এই সেক্টরের উপরে আঘাত এলে আমাদের অর্থনীতির উপরে চাপ পড়বে। এই জন্যে অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনের তুলনায় আমার সিটি কর্পোরেশন ভিন্ন ধরণের। তাই আমরা মনে করি। গাজীপুরের শতভাগ মানুষ নিরাপদ থাকতে হবে।
সরকারি হোক বা বেসরকারি হোক- আমরা বলেছি; একটা মানুষও যেনো অ্যাফেক্টেড না হয়। ’ খাদ্য সংকট এবং খাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ব্যাপারে জাহাঙ্গীর আলম বলেন- ‘ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ১০ টা টিম করে দিয়েছি। দোকানদার যেনো কোন ভাবেই দাম বাড়াতে না পারে। আর আঞ্চলিক ৬৫টা কমিটি করে দিয়েছি তারা যেনো আলোচনা করে। ব্যবসায়ীরা ডাবল লাভের জন্যে যে অনিয়ম করে তা যেনো তারা কোনভাবেই না করতে পারে। আর আমরা নিজেরাই বাজারে যাচ্ছি এবং অনুরোধ করছি সবাইকে। মানুষ বিপদে পড়েছে সেই হিসাবে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। আর আমরা নিজেরা খাদ্য কিনে গরীরব মানুষদের দেওয়ার চেষ্টা করছি। যদি দুই পক্ষ মিলে এইভাবে করি তাহলে দাম ইনশাল্লাহ বৃদ্ধি পাবে না। ’ অনুষ্ঠানে সমাজের বিত্তবানদের উদ্দেশ্যে মেয়র জাহাঙ্গীর আলম আহ্বান জানান- ‘যে টাকায় নিজের মানুষ না খেয়ে থাকবে সেই টাকার আমি মনে করি কোন প্রয়োজন নাই। তাই বিত্তবানদের বলবো আপনার এলাকায় পাড়ায় মহল্লায় কেউ যেনো বলতে না পারে আমি খাদ্যের অভাবে ছিলাম।’