করোনা নিয়ে আতঙ্কের চেয়ে বাঙালির কৌতুহল বেশি। এর নানা ব্যাখ্যায় সামাজিক ও গণমাধ্যম সরগরম। কারো কাছে প্রকৃতির লীলা খেলা, আবার কারো মনে হচ্ছে বিশ্ব মোড়লদের কূটচাল। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অসহায়ত্ব সারা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে। আপনজনের মৃত্যুতে তার পাশে থাকার সুযোগ নেই এর চেয়ে যন্ত্রণার আর কিছু হতে পারে।
উন্নত বিশ্বের দেশগুলো অজানা এ ভাইরাসের কাছে পরাস্ত হয়ে লকডাউন হয়ে যাচ্ছে। দূর্যোগ কাটিয়ে ওঠার সার্মথ্য নিয়ে তারা চিন্তিত। আর সেখানে বাংলাদেশের প্রস্তুতি যে যথেষ্ট নয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। রোগ আর রোগীর পরীক্ষা নিয়েই চলছে হিমশিম অবস্থা। যদিও এখন পর্যন্ত সংখ্যা কম। এর ভয়াবহতা বাড়ার শঙ্কা যে রয়েছে তা অন্য দেশ থেকে অনুমেয়।
এ অবস্থায় বিধাতার হাতে নিজেকে সমর্পিত করার আগে একটু সাবধান হলে বাঁঁচবে দেশ আর দেশের মানুষ। বড় বড় বুলিতে বা বাণী দিয়ে করোনা ভাইরাসকে প্রতিরোধ করা যাবে না। পরিবার থেকে সচেতন হতে হবে। সার্বিকভাবে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর জন্য যে উন্নয়ন দরকার তা হচ্ছে না। স্বাস্থ্য খাতে জনগণ যথাযথ সেবা পায় না স্বাভাবিক সময়ে। আর বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে মহামারি প্রলয় ঘটবে সেবা ও অর্থনৈতিক খাতে।
এ দেশের দিন মজুর, গার্মেন্টস কর্মী, পরিবহন চালক, বেসরকারি খাতে কর্মরত মানুষদের অবস্থা কথাটা একবার চিন্তা করলে এর ভয়াবহতা অনুধাবন করা সম্ভব। একজন রিকশা চালকের পক্ষে বাড়তি চাল ডাল কিনে মজুদ করা সম্ভব নয়। আবার দেশের বাজারে খাবার মজুদের হিড়িক ইতোমধ্যে পড়েছে৷ যার ফলে বাড়ছে জিনিসের দাম। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে খাদ্য মজুদ আছে। আর বাজার নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু এ দেশে ব্যবসায়ীরা মানুষের অসহায়ত্বকে হাতিয়ার করে ফায়দা নেয় তা নতুন কিছু নয়। যারা সাবধানতার নামে ঘরে জিনিস মজুদ করেছে তাদের ও সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে। ব্যবসায়ীদের অসাধুতাকে প্রশয় না দিয়ে প্রতিবাদ করা উচিত। এ সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে সরকার ও জনগণকে বিপদগ্রস্ত করা অমানবিকতা।
লকডাউন কথাটা মনে হলে প্রথম দৃষ্টি যায় গার্মেন্টস সেক্টরের দিকে। কাজবিহীন অবস্থায় বেতন দিয়ে গার্মেন্টস মালিকরা কর্মীদের চাকরিতে রাখবে সে নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না। বিশ্ব বাজারের স্থবিরতার ধাক্কা প্রথমেই এ সেক্টরে আসে এ কথা ভুলে গেলে চলবে না।
পেটের অন্ন জোগাড়ের জন্য মানুষ বিপথগামী হয়। দেশে এখন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড যেমন ছিনতাই চুরি ডাকাতি অনেকাংশে কম। উচ্চবিত্তদের উহ্য রেখে বলতে হয় দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ করোনার চেয়ে ভয়ানক পরিস্থিতির স্বীকার হবে যদি লকডাউন হয়। তাই এখনই সন্দিহান হয়ে বাজার পরিস্থিতি অস্থির না করাই শ্রেয়। বরং পারিবারিক সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে করোনাকে প্রতিহত করতে সচেতন হতে হবে।
যে যার অবস্থান থেকে বিষয়টা ভাবতে হবে। করোনা নিয়ে শুধুমাত্র প্রবাসীদের বিষয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। সামাজিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কিছুই বন্ধ হয়নি। সরকারি পর্যায়ে স্কুল বন্ধের মত নাটকীয়তা চলছে স্থানীয় নির্বাচন স্থগিত করা নিয়ে। নেতা-নেত্রীরা এক সময় একটা কথা বলছে। প্রকৃতপক্ষে দেশের প্রস্তুতি কতটা আছে তা পরিষ্কার করে মানুষ জানে না। শহর বা গ্রামঞ্চলে এলাকাভিত্তিক মানুষকে পরীক্ষা করার মত কোন উদ্যোগ নাই কোথাও। সরকারি বেসরকারি হাসপাতালের সক্ষমতা অনেকটাই অজানা। যদিও বলা হচ্ছে সরকারের প্রস্তুতি আছে।
অন্নের সংস্থানে ঘর থেকে মানুষকে বের হতেই হবে। ডিজিটালভাবে অফিস আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা করার সক্ষমতা এ দেশের এখন পর্যন্ত হয়নি। তাই সর্দি জ্বর হলে ঘরে বসে কাজ করার নির্দেশ প্রতিষ্ঠান দিতে পারবে না ইউরোপ আমেরিকার মত।
বিশ্ব সংস্থার হিসাবে সারা বিশ্বে ৭ হাজার ৫১১ জনের মৃত্যু হয়েছে এ ভাইরাসের কারণে। আর সুস্থ হয়েছে ৮০ হাজার ৮৭৪ জন। আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ১,৮৮৬৩০ জন।
দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাস নিয়ে কোন ধরনের লুকোচুরি সরকার, ব্যক্তি কারো জন্য কল্যাণকর হবে না। প্রকৃতির কাছে মানুষ অসহায় এমন চিন্তা থেকে অসচেতন হয় চলাফেরা বন্ধ করতে হবে। ঘোষণা বা নিয়ম করে মানুষকে ঘর বন্দী করার ফল অন্তত বাংলাদেশের জন্য সুখকর হবে না। দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তখন করোনার চেয়ে নির্দয় ভাইরাস অর্থ কষ্টে পতিত হবে। আর সরকারের পক্ষে এ পরিস্থিতি সামাল দেয়া কতটা কষ্টকর হবে তা ভবিষ্যৎ জন্য প্রশ্ন হয়ে রইল।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)