করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা শুরুর সাড়ে ৩ মাস পর ১ লাখের বেশি নমুনা পরীক্ষার মাইলফলক অতিক্রম করেছে বাংলাদেশ।
এরমধ্যে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা ১২ হাজার ৪’শ ২৫ জন। শুধু বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন ৭০৬ জন। এই সময়ে ১৩ জনের মৃত্যুসহ মোট মৃত্যু হয়েছে ১৯৯।
নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে জানানো হয়েছে, দেশে এখন ৩৪টি ল্যাবে করোনা শনাক্তের পরীক্ষা করা হচ্ছে।
সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘন্টায় ৫,৮৬৭ জনের কোভিড-১৯ পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে এবং ৭০৬ জন নতুন রোগী সহ মোট সনাক্ত ১২,৪২৫ জন। গত ২৪ ঘন্টায় ১৩ জন মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের মধ্যে পুরুষ-৮ জন ও মহিলা-৫ জন।
মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ঢাকার ভিতরে (শহরে) ৬ জন, ঢাকা বিভাগে ৩ জন এবং চট্টগ্রাম বিভাগে ৪ জন। ৬ জনের বয়স ষাটোর্ধ্ব, ৪ জন ৫১-৬০ বছরের মধ্যে, ২ জন ৪১-৫০ বছরের মধ্যে এবং ১ জনের বয়স ১১-২০ এর মধ্যে। ১১-২০ বছরের ব্যক্তিটি ক্যান্সার এ আক্রান্ত ছিলেন। এ পর্যন্ত মোট মৃত্যুবরণ করেছেন ১৯৯ জন।
গত ২১ জানুয়ারি বাংলাদেশে কোভিড-১৯ শনাক্তে পরীক্ষা শুরু করে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হন ৮ই মার্চ।
শুরুর দিন থেকে পরীক্ষা সংখ্যা ১ লাখ ছাড়াতে সময় লাগলো ১০৮ দিন। এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৫১৩ জনের, গড়ে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৫৩০ জনের মধ্যে ১ জন পরীক্ষার আওতায় এসেছেন। যে ১ লাখের বেশি মানুষকে পরীক্ষা করা হয়েছে, তাদের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ১২ হাজার ৪২৫ জন। শতকরা হিসাবে ১১.৭৭।
পরীক্ষা সংখ্যার তথ্যের পাশাপাশি স্বাস্থ্য বুলেটিনের শুরুতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি গণ নির্দেশনার কথা জানানো হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘হঠাৎ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৪টি হট লাইনে আসা ফোনকলের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। বুধবারের চেয়ে দ্বিগুণের বেশী হয়ে ২৪ ঘণ্টায় কল এসেছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৪শ ২২টি। এদের মধ্যে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৬ হাজার ৩৮২ জনের। পরীক্ষা হয়েছে ৫ হাজার ৮৬৭টি।’
‘‘করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ৭০৬ জনের শরীরে। ১ দিনে মারা গেছেন আগের দিনগুলোর চেয়ে অনেক বেশি ১৩ জন। বিপরীতে ২৪ ঘন্টায় ১৩০ জন হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।’’
তিনি বলেন, দেশে মোট আক্রান্ত ১২ হাজার ৪২৫, যাদের মধ্যে হাসপাতাল এবং বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১০ হাজার ৩১৬ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হওয়ার সংখ্যা ১ হাজার ৯১০। মারা গেছেন ১৯৯ জন। কোয়ারেনটাইনে আছেন ৪০ হাজার ৫০৩, আইসোলেশনে ১ হাজার ৭৭১।
২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন বর্ডার দিয়ে ৪১১ জন দেশে এসেছেন বলেও জানানো হয় বুলেটিনে।
চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে বিশ্বের ২১০টি দেশ ও অঞ্চলে এখন পর্যন্ত ৩৮ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে মারা গেছেন আড়াই লাখেরও বেশি মানুষ। তবে সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন তেরো লাখের বেশি মানুষ।
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে প্রথমে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। পরে এ ছুটি ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। পরে এ ছুটির মেয়াদ ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে চতুর্থবারের মতো ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। দেশবাসীকে নিজ বাড়িতে থাকার আহ্বান জানানো হয়। পরে সেটাও বাড়ানো হয় ৫ মে পর্যন্ত। পরে পঞ্চমবারের মতো করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ১৬ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার।
ছুটির সময়ে অফিস-আদালত থেকে গণপরিবহন, সব বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল, জরুরি সেবা এই বন্ধের বাইরে থাকছে। জনগণকে ঘরে রাখার জন্য মোতায়েন রয়েছে সশস্ত্র বাহিনীও।