দেশে দিন দিন বেড়েই চলেছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। এক দিনের ব্যবধানে ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ২৬৬ জন। এর আগে একদিনে শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৩৪১ জন। মৃত্যুর সংখ্যাও উর্ধ্বমুখী হচ্ছে। এরমধ্যে আইইডিসিআর-এ করোনা থাবা বসিয়েছে। মারা গেছেন চিকিৎসকও। এর ফলে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসক পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে।
চিকিৎসকদের আইসোলেশনে থাকার সংখ্যাটিও হু হু করে বাড়ছে। আইসোলেশনে থাকা চিকিৎসকদের অনেকেই মেসে বা আলাদা বাসা নিয়ে থাকেন। হাসপাতালে ডিউটি চিকিৎসক থাকলেও তারা রোগের লক্ষণ শুনে ‘চিকিৎসক নেই’ বলে বিদেয় করে দেয় বলে অভিযোগ আছে। এভাবে অনেককেই হাসপাতাল হতে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে দেখা যায়৷ করোনাকালে চরম সংকটে পড়েছে চিকিৎসা সেবা৷ বিভিন্ন ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, প্রাইভেট হাসপাতালে তালা ঝুলছে৷ খোলা থাকলেও ডাক্তার নেই৷ অথচ এসব হাসপাতালে নিয়মিত রুটিন ওয়ার্ক মেনে চিকিৎসক বসতো৷ তাদের আগমন ঘিরে প্রচারণাও চলতো৷ লিফলেট, মাইকিং, টিভি,প্রিন্ট মিডিয়া, অনলাইন মিডিয়া ও বাহারী রঙের পোস্টার কতো কি প্রচারণা ছিল রোগী আকর্ষন করতে৷ কিন্তু এখন রোগীরা হন্যে হয়ে খুঁজেও ডাক্তার পায় না৷ এজন্য প্রধানমন্ত্রীকেও কঠোরভাবে কথা বলতে হয়েছে।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ হাসপাতাল চত্বরে মারা গেল এক রোগী৷ কেন তাকে ভর্তি করা হলো না? কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের ৬ জন চিকিৎসকেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো দায়িত্বে অবহেলার দায়ে৷ তবে এই চিকিৎসকদের সাময়িক বরখাস্ত আদেশের সমালোচনা করে একে হঠকারী ও অনভিপ্রেত বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ৷ এই হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সদের খাবার না দেয়ার কথাও আসছে৷ এটাকে কী বলা যায়? এত এত বাজেটের মাঝে চিকিৎসক-নার্সরা কেন থাকবেন খাদ্য সংকটে?এছাড়াও স্বাস্থ্যকর্মীদের পিপিই ও করোনা টেস্ট সংকট বিষয়ে কী বলবে স্বাস্থ্য প্রশাসন? কী বলবে চিকিৎসকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার অভাবকে?
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসকের মৃত্যুর পর প্রশ্নে উঠেছে, তারাই যদি এভাবে মারা যান, তাহলে রোগীর কী হতে পারে? জেলা ও উপজেলা শহরের হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত সুরক্ষা যন্ত্রপাতি নেই। তাই করোনা আতঙ্কে সর্দি কাশির রোগীরাও বঞ্চিত হচ্ছে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সুবিধা হতে৷ কিছু কিছু জায়গায় বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে মানুষ৷ প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্স করে এসবের সমাধান করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তিনি একা কী করবেন?
নেত্রকোনায় মারা যাওয়া নরোত্তমের তো নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টেও করোনা নেগেটিভ এসেছে৷ সুতরাং তার কি এখানে চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার ছিলো না? এ বিষয়ে প্রতিবাদ ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের বিচারের দাবীতে অবস্থান কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই বিশৃংখলার জবাব দেবে কে?
অন্যদিকে করোনা কেড়ে নিচ্ছে মানুষের পারিবারিক হৃদ্যতাও৷ চিকিৎসার প্রতি নির্ভর করতে না পেরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এমন সন্দেহে স্ত্রীকে রাতের অন্ধকারে বনের জঙ্গলে ফেলে চলে গেছে স্বামী ও তার সন্তান। টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ইছাদিঘী গ্রামে এই হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটে। গভীর রাতে ওই নারীর কান্নার শব্দ শুনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেন ইউপি চেয়ারম্যান৷ এগুলো মানুষের মানবিকতার চরম অবক্ষয় নয় কি? এমন অমানবিকতা বন্ধ করতে প্রধানমন্ত্রীও নির্দেশ দিয়েছেন।
এখন মূল বিষয় হলো- চিকিৎসকদের সুরক্ষা দিতে হবে৷ হাসপাতালগুলোকেও চালু করতে হবে৷ করোনা ভীতিতে অন্যরোগের চিকিৎসা না দেয়ার রীতি বন্ধ করতে হবে৷ পিপিই বিহীন চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে মারা যায় ডাক্তার৷ স্বাস্থ্যকর্মীদের ভাড়া বাড়ি ছেড়ে দিতে বলে বাড়িওয়ালা৷ এ বিষয়ে যে অ্যাকশন ইতোমধ্যে শুরুর কথা বলা হয়েছে, তা অব্যাহত রাখতে হবে। করোনাকালে ঘোষিত এত এত বাজেটগুলো কোথায় যায়, তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে হবে।
করোনা পরীক্ষার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ পিসিআর ল্যাব ও এন-৯৫ মাস্ক চাইলেন নারায়ণগঞ্জের খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মো. শামসুদ্দোহা সঞ্জয়। ওই জেলায় কোনো গবেষণাগার নেই কিংবা এন-৯৫ মাস্ক নেই শুনে অবাক হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ সব কাজ যদি প্রধানমন্ত্রীকেই করতে হয়, তাহলে দায়িত্বপ্রাপ্তরা কী করছে? জানি এসব বলার সময় এখন না। তবুও বলতে হচ্ছে, যাতে পেছনের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া যায়। করোনা নির্মূলে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কেরালা রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ভূমিকা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হচ্ছে। সেই রাজ্যে তো মুখ্যমন্ত্রীও রয়েছেন৷ এরপরও কেন প্রশংসিত হলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী? আন্তরিকতার সাথে যার যার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করলে আর সমস্যা হয় না। বিষয়টা এদেশের মন্ত্রীগণ এবং দায়িত্বশীলরা একটু ভাববেন কি?
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)