চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

করোনাভাইরাস: দেশে ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা কেন বেশি আক্রান্ত

বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসে প্রভাবে দেশে এখন পর্যন্ত ৪৮২ জনের দেহে কোভিড-১৯ এর ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে প্রোঅ্যাকটিভ গ্রুপ যাদের কাজে যেতেই হচ্ছে (বয়স ৩১-৪০) তারা ১০৮ জন শনাক্ত হয়েছে। এই প্রোঅ্যাকটিভ গ্রুপের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় একজন মারা গেছেন।

শনিবার বিকেলে মুঠোফোনে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে চ্যানেল আই অনলাইনকে এসব তথ্য জানান আইইডিসিআর এর পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

গত ৪৮ ঘণ্টায় ৩০-৪০ বয়সী ৪৬ জন এবং ৪১-৫০ বয়সী ৩১ জন কোভিড-১৯ এর নমুনা পরীক্ষায় আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। এরমধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩০-৪০ বয়সী ১৭ জন এবং ৪১-৪০ বয়সী ১৫ জন শনাক্ত হয়েছেন।

এই বয়সী (৩১-৪০) গ্রুপটি বাসার বাইরে বেশি যাওয়ার ফলে আক্রান্ত শনাক্ত হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন: এরা মূলত অ্যাকটিভ গ্রুপ, এরা প্রোডাক্টিভ গ্রুপ, যারা মোট কথা কাজে যায়। এই বয়সটা সেই রকমের মানুষকে কাভার করে। সেটা আক্রান্ত শনাক্তকরণের একটা কারণ হতে পারে।

তিনি বলেন: আমরা দেখেছি ৩১-৪০ বয়সীদের ২২ শতাংশ শনাক্তের সংখ্যার পাশাপাশি এর আগের গ্রুপ ২১-৩০ বয়সীদের ১৯ শতাংশ এবং পরের ৪১-৫০ বয়সীদেরও ১৯ শতাংশ শনাক্ত হয়েছে। মূলত আমরা যদি চিন্তা করি তাহলে কিন্তু ৬০ শতাংশের শনাক্তের গ্রুপটা এখানেই চলে যাচ্ছে। এই গ্রুপটাই বলতে গেলে অ্যাকটিভ গ্রুপ।

আইইডিসিআর পরিচালক বলেন: গত ২৪ ঘণ্টায় এই অ্যাকটিভ গ্রুপের একজন মারা গেছেন, তেমনি একজন সুস্থ হয়ে বাড়িও ফিরেছেন।

অ্যাকটিভ গ্রুপের ১০৮ জন এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ এ নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছেন জানিয়ে ডা. মীরজাদী সেব্রিনা বলেন: সর্বমোট ৪৮২ জন শনাক্তের মধ্যে বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায় দশ বছরের নীচে ১৪ জন, ১১-২০ বয়সী ৩৫ জন, ২০-৩০ বয়সী ৯২ জন, ৩১-৪০ বয়সী ১০৮ জন, ৪১-৫০ বয়সী ৯৫ জন, ৫১-৬০ বয়সী ৭৫ জন, ষাটোর্ধ্ব ৬৩ জন মানুষ শনাক্ত হয়েছেন।

তিনি বলেন:  মোট শনাক্তের মধ্যে ৩৩৮ জন পুরুষ ও ১৪৪ জন নারী। মানে শতকরা ৭০ ভাগ রয়েছে পুরুষ ও ৩০ ভাগ নারী।

আইইডিসিআর পরিচালক আরও বলেন: আমাদের মোট আক্রান্ত ৪৮২ জনের মধ্যে ৫২ শতাংশই ঢাকা মহানগরীর। মহানগরী বাদ দিয়ে ঢাকা বিভাগে আক্রান্ত ৩৫ শতাংশ। অবশিষ্ট ১৩ শতাংশ দেশের অন্যান্য বিভাগের।

এর আগে তিনি দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে যুক্ত হয়ে জানান: গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৯৫৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৮ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে ৪৮২। আমরা আক্রান্তদের মধ্যে আরও তিনজনকে হারিয়েছি। ফলে এ রোগে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০ জনে।

তিনি বলেন: যে ৫৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে পুরুষ ৪৮ জন, নারী ১০ জন। সর্বোচ্চ ১৪ জনই ঢাকার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮ জন নারায়ণগঞ্জের। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় আরও তিনজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এ নিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৩৬ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। সুস্থ হওয়ার তিনজনের মধ্যে দুজন পুরুষ এবং একজন নারী। তাদের বয়স যথাক্রমে ২৬, ৫৭ ও ৫৫ বছর। যে তিনজন মারা গেছেন তাদের মধ্যে দু’জন ঢাকার বাইরে একজন ঢাকায়। তাদের বয়স ৩৮, ৫৪ এবং ৭৫ বছর।

আইইডিসিআর সূত্রে জানা যায়: ঢাকায় ২৫১ জন কোভিড-১৯ এর নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে টোলারবাগে সর্বোচ্চ ১৯ জন। এছাড়া উত্তরা ও ধানমন্ডিতে ১৫ জন।

রাজধানীর কোথায় কতোজন আক্রান্ত শনাক্ত
আদাবর ১, আগারগাঁও ২, আশকোনা ১, আজিমপুর ২, বাবুবাজার ২,  বাড্ডা ৩, বেইলি রোড ৩, বনানী ৭, বংশাল ৭, বাসাবো ১২, বসুন্ধরা ৪, বেগুনবাড়ি ১, বেরিবাধ ২, বসিলা ১,  বুয়েট অঞ্চল ১, সেন্ট্রাল রোড ১, চক বাজার ৪, ঢাকেশ্বরী ২, ধানমন্ডি ১৫, ধোলাইখাল ২, দয়াগঞ্জ ১, ইস্কাটন ১, গেন্ডারিয়া ২, গ্রিন রোড ৬, গুলিস্তান ২, গুলশান ৪, হাতিরঝিল ১, হাতিরপুল ২, হাজারীবাগ ৪, ইসলামপুর ৩, যাত্রাবাড়ী ১২, জিগাতলা ৪, কামরঙ্গীর চর ১, কাজী পাড়া ১, কোতয়ালী ৩, লালবাগ ১১, লক্ষ্মীবাজার ২, মালিবাগ ২, মানিকদী ১, মিরহাজারীবাগ ২, মিরপুর১- ৫, মিরপুর৬-২, মিরপুর১০-৪,  মিরপুর১১-১০, মিরপুর১২-৪, মিরপুর১৩-২, মিটফোর্ড ১, মগবাজার ২, মহাখালী ৩, মোহাম্মদপুর ১০, মুগদা ১, নারিন্দা ১, নিকুঞ্জ ১, পীরেরবাগ ২, পুরান পল্টন ২, রাজারবাগ ২, রামপুরা ১, সায়েদাবাদ ১, শাহবাগ ২, শান্তিনগর ২, সোয়ারীঘাট ৩, শনির আখড়া ২, তেজগাঁও ২, টোলারবাগ ১৯, উর্দু রোড ১, উত্তরা ১৫, ওয়ারী ১৩।

চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে বিশ্বের ২১০টি দেশ ও অঞ্চলে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১৬ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে মারা গেছেন প্রায় এক লাখ এক হাজার ৪৮৩ জন। তবে সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন ৩ লাখ ৭১ হাজারের বেশি মানুষ।

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে প্রথমে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। পরে এই ছুটি ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। রোববার এ ছুটির মেয়াদ ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে পরে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার।

ছুটির সময়ে অফিস-আদালত থেকে গণপরিবহন, সব বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল, জরুরি সেবা এই বন্ধের বাইরে থাকছে। জনগণকে ঘরে রাখার জন্য মোতায়েন রয়েছে সশস্ত্র বাহিনীও।