‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য…’ বিখ্যাত শিল্পী ভূপেন হাজারিকার গানের এই কথাগুলো মানুষের হৃদয়কে স্ফিত করে মানবিকতাকে জাগিয়ে তোলো। অন্যের বিপদে যে নিজের হাতটি বাড়িয়ে দেয় সেই প্রকৃত মানুষ। নশ্বর এই পৃথিবীতে আমরা কেউ অবিনশ্বর নই।
তবে চাইলে আবার নিজেকে অবিনশ্বর করে রাখা যায়। এর অন্যতম সহজ উপায় হলো মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা। অন্যের বিপদে পাশে থাকা। যেমনটি করছে জাহাঙ্গীরনগর ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগ।
সারাবিশ্ব আজ করোনাভাইরাস নামক অদৃশ্য এক শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এই অদৃশ্য দৈত্য থাবা দিয়েছে সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের ওপর। বিশ্বের ২১০টি অঞ্চল ও দেশে আঘাত হেনেছে করোনাভাইরাস। বিভিন্ন দেশকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। অবরুদ্ধ অবস্থা চলমান থাকার কারণে সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষেরা হারিয়েছে তাদের রুজি রোজগারের পথ। মধ্যবিত্তরাও রয়েছে সমস্যায়। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অনেকেই নিবারণ করতে পারছে না ক্ষুধা।
ক্ষুধার জ্বালাই যে সবচেয়ে বড় জ্বালা তা বুঝিয়েছেন রফিক আজাদের ভাত দে হারামজাদা কবিতার মাধ্যমে। যেখানে তিনি লিখেছেন, ভাত দে হারামজাদা, তা না হলো মানচিত্র খাবো। ক্ষুধার জ্বালায় মৃত্যুকে উপেক্ষা করে মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছে। শিশুর দুধ কেনার জন্য মা তার মাথার চুল বিক্রি করছে। সরকারি ত্রাণের গাড়িতে হামলা করছে অনাহারে থাকা মানুষগুলো। জানিনা আরও কতো কী দেখতে হবে আমাদের। কেউ কেউ আবার মুখ ফুটিয়ে নিজের ক্ষুধার কথা বলতে পারছে না।
এই মানুষদের পাশে থাকার জন্য ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ দুটি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের উদ্যোগে গঠন করা হয়েছে ‘জেএমএস ফান্ড’। পুরো বিষয়টির সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছেন বিভাগের সভাপতি শেখ আদনান ফাহাদ।
তিনি জানিয়েছেন, বিভাগের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে অতি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের গোপনে সহায়তা প্রদান অব্যাহত রেখেছে। শিক্ষার্থীদের একটি দল নিজ নিজ ব্যাচের সাথে নিবিড় সম্পর্ক রেখে চলছে। নাম প্রকাশ না করেই বিভাগের যে সব শিক্ষার্থীদের পরিবার সংকটে রয়েছে তাদের কাছে বিভাগের পক্ষ থেকে পৌঁছে দেওয়া হবে ভালোবাসা।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা করোনার কারণে কর্মহীন ও অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে গঠন করেছে ‘এমসিজে চ্যারিটি ফান্ড’। বিভাগের শিক্ষক কাজী আনিছ জানিয়েছেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাই প্রথমে সাধ্যমতো অর্থ ফান্ডে জমা করেছে।
পরে প্রবাসী ও দেশের বেশ কয়েকজন হৃদয়বান ব্যক্তি তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। ইতোমধ্যে বিভাগটি ৫৯টি পরিবারকে সহায়তা দিয়েছে। এর মধ্যে সাভারের একজন মা, যিনি বাচ্চার দুধ কেনার জন্য চুল বিক্রি করেছেন, তিনিও আছেন। সার্বক্ষণিক ওই মা ও শিশুদের খোঁজখবর নিচ্ছেন তারা। এছাড়া বিভাগের যেসব শিক্ষার্থীর পরিবার সংকটে রয়েছে তাদেরকে গোপনে বিভাগের পক্ষ থেকে ভালোবাসা বা উপহার সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হবে।
জাহাঙ্গীরনগর ও কুমিল্লা বিশ্বদ্যিালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের মতো বাংলাদেশে বিভিন্ন স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা এই সংকটকালে এগিয়ে আসলে জয় হবে মানবতার। সৃষ্টি হবে এক অনন্য ভালোবাসা। মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে এই সোনার বাংলা। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পরাজিত হবে করোনাভাইরাস নামক এই বৈশ্বিক মহামারি।