করোনাভাইরাস মহামারীর মাঝেই বছর ঘুরে এসেছে পবিত্র রমজান। সারাবিশ্বের মতো কানাডায় রমজান মাস ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। তবে এ বছরটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এবারের ইফতারে নেই আগের সেই আমেজ। একের পর এক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি ও মৃত্যুতে ম্লান করে দিয়েছে সবকিছু।
প্রতিবারের মতো এবার নেই কেনাকাটার আমেজ, নেই মসজিদে নামাজ ও তারাবির সুযোগ। সবকিছু মিলিয়ে তাই বিষণ্ণ এক রমজান শুরু করেছে বরফাচ্ছন্ন দেশ কানাডায় প্রবাসী বাঙালিরা।
লকডাউনের কারণে বেশিরভাগ মানুষ কোয়ারেন্টাইনে থাকার ফলে দিন শেষে পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে ইফতার করছেন রোজাদারেরা। সাধারণত বাংলাদেশের মত কানাডাতেও বাঙালি মুসলমানরা ইফতার সামনে রেখে মুয়াজ্জিনের আজানের ধ্বনির অপেক্ষায় থাকেন। ইফতারের এ আয়োজনে আরও থাকে ছোলা, মুড়ি, পেয়াজি, কলা, আলুর চপ, জিলাপী, খেজুর, চিকেন হালিম আর শরবত। বিশেষ খাবার হিসেবে কমলা, আঙুর, আপেল সহ নানা দেশের বৈচিত্র্যময় ফল থাকে।
কানাডায় বাংলাদেশি হোটেলগুলোতেও সীমিত আকারে বেচাকেনা চলছে। আগের সেই জমজমাট ইফতারির কেনাবেচা চোখে পড়ছে না। রেস্টুরেন্ট গুলো নিচ্ছে হোম ডেলিভারি অর্ডার।
ক্যালগেরিতে ইসলামিক সোসাইটি অব ক্যালগেরি কোভিড-১৯ এর এই সময়ে শনিবার ও মঙ্গলবার কিছুসংখ্যক পরিবারকে ইফতারি ডেলিভারি দেওয়ার পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছে। কানাডার ক্যালগেরিতে বিএমআইসিসি এর নিজস্ব একটি মসজিদও রয়েছে। প্রতি বছরের মতো প্রবাসী বাঙালিরা মসজিদটিতে এবার আর আয়োজন করেনি ইফতারের। নারী-পুরুষের পদচারণায় হবে না ইফতার আর তারাবি নামাজ।
প্রকৃতপক্ষে প্রবাসের যান্ত্রিক জীবনের দিনগুলোতে ইফতার আর তারাবি নামাজ শেষে প্রবাসী বাঙালিরা মিলিত হতো একে অপরের সাথে, পরিণত হতো মিলনমেলার। এশিয়ান এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশে সবাই মিলে যখন ইফতার করে, তখন মনে হয় যেন একখণ্ড বাংলাদেশ। কিন্তু এবার করোনাভাইরাস সবকিছু স্তব্ধ করে দিয়েছে।
কানাডার ক্যালগেরিতে বসবাসরত প্রবাসী প্রকৌশলী মোহাম্মদ কাদির বললেন, পবিত্র রমজান মাস অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। এই মাসে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন নাযিল হয়। সংযম আর আত্মশুদ্ধির মধ্যে দিয়ে আমরা মাসটি পালন করি। কিন্তু জীবনে এই প্রথম এই মাসটিতে আমরা একত্রে ইফতার করতে পারছি না।
ক্যালগেরির আবদুল্লা রফিক বলেন, রমজান মাস এমন একটা মাস, যে মাসে গুনাহ মাফ হয়। আর ইফতারির আগে দোয়া কবুল হয়। আল্লাহ আমাদের এই মহামারীর থেকে মুক্তি দিবে- পবিত্র এই মাসে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে এটাই আমাদের প্রার্থনা।
ক্যালগেরির টমবেকার ক্যানসার সেন্টারের এর ক্লিনিক্যাল রিসার্চ কো-অর্ডিনেটর আহমেদ শাহিন বললেন, আমরা প্রবাসী বাঙ্গালীরা দেশকে ভীষণ মিস্ করি রমজানের ইফতার এর এই সময়টাতে। ছোটবেলায় বাবা-মা-ভাই-বোন আর পরিবারের আত্মীয় স্বজনকে নিয়ে খুবই উপভোগ করতাম রমজানের ইফতার। আজ সবই শুধু স্মৃতি। মহান রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে মহামারী এই করোনা থেকে মুক্তি দিবেন, আমাদের গুনাহ মাফ করবেন এটাই তার কাছে আমাদের প্রার্থনা।
রোজা শুরু একদিন আগে কানাডার মুসলমানদের উদ্দেশে রমজানের অগ্রিম শুভেচ্ছা বার্তা দিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।
তিনি মুসলমানদের পবিত্র মাসকে স্বাগত জানিয়ে ঘরে থেকে রোজা, ইফতার ও তারাবি আদায় করার আহবান জানান। একই সাথে রোজারদারদের ঘরে ঘরে সরকারের পক্ষ থেকে ইফতার পৌঁছে দেবেন বলে জানান।