বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত অতিমারীর ছোবলে আক্রান্ত হয়েছে উন্নত দেশ থেকে শুরু করে উন্নয়নশীল ও দরিদ্র প্রতিটি দেশই। শুরুতে প্রয়োজনীয় টিকা ও চিকিৎসা আবিস্কৃত না হওয়ার কারনে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী, এই ভয়াবহ ভাইরাস কোভিড-১৯ থেকে নিজেদের সুরক্ষা রাখার জন্য বিশ্বের অনেক দেশ লক ডাউন ও নিরাপদ দূরত্ব মেনে চলার মত নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে।
দেশ-বিদেশের অনেক আইটি ও টেলিকম কোম্পানীসহ অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের বাসায় থেকে কাজ করতে উৎসাহী করতে “ওয়র্ক ফ্রম হোম” চালু করে। সরকারী – বেসরকারী, স্বায়ত্ব শাষিত সব প্রতিষ্ঠান তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রমে ডিজিটাল ও অনলাইন সেবা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে তাদের কর্মী, গ্রাহক ও পার্টনারদের ঘরে থাকতে উৎসাহ দেয়া শুরু করে।
এর ফলে ২০২০ সালের মার্চ থেকে আমাদের দেশের রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম থেকে শুরু করে-রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, বিনোদন ও ব্যবসা ও ব্যাংকিংসহ আমাদের জাতীয় জীবনের প্রায় প্রতিটি খাাতে অনলাইন সেবা ও ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
সরকারি অফিস থেকে শুরু করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংকিং, শপিং, স্কুল -কলেজ – বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম সবকিছুতেই অনলাইন প্লাটফর্মের ব্যবহার ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনলাইনে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ মিটিংগুলো করছেন, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন। এছাড়াও তিনি মুজিববর্ষ সহ এরকম সকল উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধনও করছেন অনলাইনে।
গত এক বছরে আমদের দেশ সহ বিশ্বব্যাপী ব্যাপক মাত্রায় বেড়েছে অনলাইন শপিংয়ের কার্যক্রম। এতে অনেক নতুন উদ্যোক্তা তৈরী হয়েছে এবং বেকার জনগোষ্ঠির কর্ম সংস্থানেক সুযোগ সৃষ্ঠি হয়েছে। অনলাইন ভিত্তিক ডেলিভারী কোম্পানীগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে করোনাকালীন সময়ে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে চালু রেখেছে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম-ক্লাস, এসাইনমেন্ট ও পরীক্ষা সবই হচ্ছে অনলাইনে।
এই করোনাকালীন সময়ে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে ব্যাংকিং সেক্টেরেও। আমাদের দেশের ব্যাংকগুলো অনলাইন ব্যাংকিংসহ মোবাইল এয়ারের মাধ্যমে প্রায় সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা প্রদানের মাধ্যমে জনগনকে সুরক্ষা প্রদান করতে অনেক বড় ভূমিকা পালন করেছে।
বিনোদন খাতে তথ্য প্রযুক্তির নতুন ইনোভেশন হিসেবে সংযোজন হয়েছে ডিজিটাল ফটোশুট, নাটকের ডিজিটাল রেকর্ডিং, অনলাইন টক-শো, জুমের মাধ্যমে করা ইন্টারভিউ। ফলে, এখন খুব সহজেই স্বল্প খরচ ও স্বল্প সময়ে যে কোন তারকা বা অতিথীকে বিভিন্ন টিভি প্রোগ্রাম বা ওয়েবিনারে সংযোগ করা যাচ্ছে ঢাকার বা দেশের বাইরে থেকে।
করোনার রাহুগ্রাসে জনজীবনের নানা দিক পর্যবসিত হলেও, তথ্য প্রযুক্তির ইতিবাচক ও সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের সার্বিক জীবনযাত্রায় অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। করোনাকালীন সময়ে, অনলাইন প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায়, সাসরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে লক্ষ্য ও অঙ্গীকার, তা দ্রুততর হতে সাহায্য করছে।
লেখক, কানতা কানিজ, আইসিটি ও টেলিকম বিশেষজ্ঞ