চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

করোনাভাইরাস: সামাজিক দূরত্বের অন্যরকম এক লড়াই

করোনাভাইরাস মহামারী নিয়ে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখছেন। ভালোই লাগে। তবে কিছু কিছু বিষয় আমাকে ভাবায়। আমি কেন এই মহামারীর সময় কিছু করতে পারিনি? এই ব্যর্থতা আমার। মাঝখানে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার সন্তোষপুর বনাঞ্চলের বানরদের খাবার করোনার সময় সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ হয়েছে। শুনে আনন্দিত হয়েছি। কারণ, প্রকৃতির এই বন্যপ্রাণীরাও প্রত্যেহ খাবার পাচ্ছে।

এছাড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গর্বিত সদস্যদের সবজি বাজার নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ দেখে ও পড়ে আনন্দিত হই। দেশের ক্রান্তিকালে সেনাবাহিনীর সদস্যরা যেভাবে মানুষের কল্যাণে কাজ করছেন, তাতে গর্ববোধ লাগে। আমার অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক বাবা মহান মুক্তিযোদ্ধে অংশ গ্রহণ করলেও সার্টিফিকেট নেননি। প্রশ্ন করতাম বাবাকে। কেন নেননি? উত্তর দিতেন, মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেটের স্বীকৃতি আমার দরকার নাই। কারণটা এই করোনার সময় বুঝলাম৷ একজন মানুষ। করোনাকালীন সময়ে অসহায় মানুষ যাতে সহায়তা পান, সে লক্ষে কাজ করছেন নিভৃতচারী থেকে। তিনি সরকারের একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। স্যালুট। এরকম অনেকেই আছেন কবি কাজী নজরুল ইসলামের মানুষ কবিতার: ‘গাহি সাম্যের গান- মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান।’ হ্যাঁ, মানবসেবা! নিভৃতচারী থেকে যারা মানুষের সেবা করছেন, তাদের স্যালুট জানাই।

করোনার প্রেক্ষাপটে আমার এই লেখাটি। হয়তোবা আমার এই অন্যরকম লড়াইয়ের সাথে কারও মিল থাকতে পারে নিশ্চয়। আবার নাও থাকতে পারে। সাদামাটা এই লেখনি। বিশ্বের করোনা মহামারীর প্রথম থেকেই সরকারের বিধিবিধান মেনে চলার চেষ্টা করেছি। একজন দেশের সচেতন জনগণের যা করা উচিত, তা করেছি। একেবারেই অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হইনি। একটা পরিবারের অনেক রকম চাহিদা থাকে সবার। আমারও আছে। আপনারও!

এসময়ে খুব কষ্ট করেই কোনরকম জীবনযাপন করে আসছি। এতদিন যে কয়েকবার ঘর থেকে বাইরে অতি প্রয়োজনে বের হয়েছি সেসব অভিজ্ঞতা বলে কী হবে? তবে শুধু আজকের অভিজ্ঞতা এবং অন্যরকম এক লড়াই! ৩ জুন ২০২০। দুপুরে বাসা থেকে বলা হলো কিছু জরুরি ওষুধ ও অল্প বাজার লাগছেই। কী করা। যেতে তো হবেই। মুখে মাস্ক ও প্যান্টের পকেটে ছোট হ্যাক্সিসল নিলাম। দুপুরে বের হয়ে প্রথমে বাজার শেষ করে ওষুধের একটি ফার্মেসিতে গেলাম! গিয়ে শুনলাম, ফার্মেসির কর্ণধার ও চার সহোদর করোনার সাথে বর্তমানে যুদ্ধ করছেন। ওষুধ ক্রয় করলাম।

মোবাইল নিয়ে বের হই না, মাঝে মাঝে মনে হলো, কি যেন ফেলে এসেছি বা হারিয়ে গেছে! মূলত আমি হেঁটে হেঁটেই চলাফেরা করি।
বাজারে গিয়ে বুঝলাম, ইচ্ছা করলে সামাজিক দূরত্ব সবাই মানতে পারেন। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ আমার মনে হয় ইচ্ছা করেই শরীরের ওপর এসে পড়েন! ভাবটা এরকম যে, আমি দূরে কেন? কারণটা জানি না। বুঝারও চেষ্টা করিনি। পণ্য ক্রয় করার পর টাকা হাতে না দিলে বা ফেরত হাতে না নিলে দোকানদার যেভাবে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন, মনে হয় আমি অনেক বড় অপরাধ করছি। সত্যিই কি অপরাধ করেছি?

জানি না। জানার চেষ্টা করেই বা কী হবে।

যাহোক, রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসা বা যাওয়ার সময় একজন (অনুর্ধ্ব আঠার!) খুব কাছে এসে শরীরে ঘেঁষে পড়েন৷ বয়স্করাও কেউ কেউ। দীর্ঘদিন পর আজকেই শুধু কৌতুহলী হয়ে কয়েক তরুণকে জিজ্ঞেস করলাম এরকম করার মানে কী? কোনো সমস্যা কিনা?
উত্তর পেলাম, এত নিয়ম মানলে আপনি ঘরেই থাকেন! বাসায় ফিরে এ নিয়ে লেখার সময় ভাবছি, হ্যাঁ আমি ঘরেই থাকতে চাই! কিন্তু নিয়ম না মানা কেউ কি আছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার, বাজার ও ওষুধ একটু দিয়ে যাবেন? না, তাদের কাউকে এমন কাজে পাওয়া যাবে না।

আমার সংসার, আমার দেশ, আমার পৃথিবী। সুস্থ থাকতে চাই, পরিবারের সদস্যদের সুস্থ রাখতে চাই, প্রতিবেশীকেও! কিন্তু কিভাবে?

যাক, তারপর বাজার থেকে শৈশবের খেলা দাড়িয়াবান্দার (আমার জেলা ময়মনসিংহের ভাষা) মতো বাসায় আসা হলো অন্যরকম এক লড়াই করে। কিন্তু সম্ভব হলো কি?

ঘরে ফিরে আগে গোসল করলাম৷ তারপর বাজার থেকে আনা পণ্য রাখার কাজ শেষ। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা কয়েকদিনের। যা বুঝলাম। সাদামাটা উত্তর হলো: ইচ্ছা করেই বেশিরভাগ মানুষ সামাজিক দূরত্ব মানেন না। এটা একেবারেই স্বচ্ছ গ্লাসের মতো পরিষ্কার। শুধু তাই নয়, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে চাইলেও বিরক্ত করেন অনেকেই।

বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, গণমাধ্যম, মাইকিং ছাড়াও আমার মনে হয় প্রত্যেক ঘরে ঘরে এই বার্তা নিশ্চয় সবাই জানি যে, ঘরের বাইরে গেলে কিভাবে চলতে হবে। কিন্তু ইচ্ছা করেই আমরা কেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছি না। প্রিয় জন্মভূমির নিয়ম না মানা এসব মানুষদেরকে কিছু কি বলার আছে?

এদেরই অনেকে আবার সরকারের সমালোচনা করেন খুব সহজেই। তাই না? কারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখতে আর কত সময়! একটু পজিটিভ ভাবুন, দেখুন চারপাশে, মানুষ কেন একটু দূরত্ব রাখছেন না। এছাড়া ঘরে থাকুন প্রোফাইল দিয়েছেন যারা, ফেইসবুকে লাইভ করে ঘরে থাকা ও সামাজিক দূরত্ব মানার সচেতন করার কথা বলছেন, এটা ভালো দিক! কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বাস্তবে কি বাইরে গিয়ে পারছেন মানতে বা কাউকে মানাতে? এবার আসুন নিজেও মেনে চলি, অন্যদের মেনে চলতে বলি। আমার ও আপনার অনেক ভুল! সরকারের গঠনমূলক সমালোচনার পাশাপাশি আসুন আমাদের নিজেদের দোষের সমালোচনাও করি।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)