পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠানের সময় কমিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শের পর এ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছে শিক্ষামন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ বলছেন- অনেকদিন ধরে পরীক্ষা নিলে শিক্ষাবর্ষের অনেকটা সময় নষ্ট হয়। সময় কমিয়ে আনা গেলে তা শিক্ষার্থীদের জন্য ইতিবাচক ফল আনবে।
পরীক্ষার সময় কমিয়ে আনতে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড। কর্তৃপক্ষ বলছে, আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কম সময়ে পাবলিক পরীক্ষাগুলো নেয়ার চেষ্টা করছি।
গত বৃহস্পতিবার গণভবনে উচ্চমাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এখন পরীক্ষা শেষ করতে প্রায় দুই মাস সময় লেগে যায়, তা কমিয়ে আনতে পারলে শিক্ষার্থীদের যেমন আরও বেশি মনোযোগী করা যাবে, পরীক্ষা নিয়ে ‘গুজব আর অপপ্রচারের’ হাত থেকেও মুক্তি মিলবে।
একটা সময়ে প্রতিদিন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, কখনো কখনো পরীক্ষা নেওয়া হতো সকাল-বিকাল।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যেভাবে বলছেন, এখন কি সেভাবে পরীক্ষা শেষ করা সম্ভব? অনেকে বলছেন, সেই সময়ে পড়ার বিষয় কম ছিল, ফলে সকাল-বিকাল পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব ছিল। কিন্তু এই সময়ে এতগুলো বিষয়ে স্বল্প সময়ে পরীক্ষা নিতে গেলে তা বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব হবে?
শিক্ষাবিদ মো: গোলাম রহমান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আমরা সকাল-বিকাল দুই বেলাতেও পরীক্ষা দিয়েছি। তবে এখন সেভাবে পরীক্ষা নেওয়াটা কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করবে। এটা ঠিক যে, পরীক্ষা দিতেই যদি দুই মাস চলে যায়। তাহলে শিক্ষাবর্ষের অনেকটা সময় নষ্ট হয়। তাই সেটা কমিয়ে আনা গেলে ভালো।
‘তবে আমাদের ছেলেমেয়েরাও গ্যাপে গ্যাপে পরীক্ষা দেওয়াতে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘসূত্রতা দূর করতে পারলে ও দ্রুত ফলাফল প্রকাশ করলে ছেলেমেয়েরা সময়টাকে ব্যবহার করতে পারতো। আবার ছেলেমেয়েরা দীর্ঘসময় ধরে পরীক্ষা দিতে দিতে মনোযোগও হারিয়ে ফেলে।’
শিক্ষার্থীরা ৩-৪ দিন বিরতি থাকলে, শুধু শেষের ১-২ দিন পড়াশোনা করে উল্লেখ তিনি আরো বলেন, স্বল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টা তাদের উপর চাপিয়ে দিলে হবে না। তাদের মোটিভেশনেরও দরকার আছে। প্রতিদিন পরীক্ষা নেওয়া হলে তাদের উপর চাপ পড়বে, সেটা কিভাবে তারা ম্যানেজ করবে সেটা ভাবতে হবে। এগুলো আরো কিভাবে সিস্টেমেটিক করা যায়, সেটা ভাবতে হবে।
‘কিভাবে চলতে পারে, সেটা আরো চিন্তাভাবনা করে দেখতে হবে। ভাবনাগুলো সব পাবলিক পরীক্ষার ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য। মূল দেখার বিষয় কিভাবে সেটা ম্যানেজমেন্ট করা হবে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।’
এই বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়্যারম্যান মু: জিয়াউল হক।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কম সময়ে পাবলিক পরীক্ষাগুলো নেয়ার চেষ্টা করছি। সেই অনুযায়ী আমরা চেষ্টা করবো গ্যাপগুলো কমিয়ে নেওয়ার। তার মানে দুটি পরীক্ষার মধ্যে সময় কম থাকবে।
‘তবে সকাল-বিকাল পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে আরো ভাবতে হবে। এক সপ্তাহের মধ্যেই চেষ্টা করবো এই বিষয়ে স্থির সিদ্ধান্ত নিতে। এসএসসি, এইচএসসি ও জেএসসিতে চেষ্টা করা হবে যেন আরো অন্তত ২০ দিন পরীক্ষার সময় কমিয়ে আনা যায়। সেই চেষ্টাই আমরা চালিয়ে যাচ্ছি।’