জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগদানের বিষযে সোমবার সিদ্ধান্ত জানাবে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ৷ এজন্য ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের কাছে এক দিন সময় চেয়েছেন কাদের সিদ্দিকী।
শনিবার রাজধানীতে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের আয়োজনে জেলহত্যা দিবসের আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমি জনগণের মতের বিপক্ষে কখনো যাইনি, যাবো না৷ আমাকে কালকের দিনটি দেন। আপনার কাছে অনুরোধ৷ আগামী ৫ তারিখ আমি আমার মত জানিয়ে দেব৷
তিনি বলেন, যদি আমি আপনাদের সাথে কাজ করতে পারি তা বলবো৷ তবে একটি কথা বলি, আপনাদের বিজয় হয়ে গেছে যেদিন সরকার আপনাদের সাথে বৈঠক বসেছে, সেদিন বিজয় হয়ে গেছে আপনাদের৷ আমি যেখানে থাকি না কেন, আপনাদের জন্য শুভকামনা জানাবো৷
কাদের সিদ্দিকী বলেন, গত পরশু আমি ড. কামাল হোসেনের বাসায় গিয়েছিলাম। গত ৩ দিন ধরে আমার দলের নেতারা বারবার বলেছেন ঐক্যফ্রন্টে যোগদানের কথা৷ আমি চিন্তা করছিলাম৷ ড. কামাল হোসেন, আপনাকে আমি পিতার মতো সম্মান করি৷
ড. কামালকে রাজাকার বলে কটাক্ষ করা নিয়ে তিনি বলেন, ওরা আপনাকে অনেক অপমান করেছে। আপনাকে রাজাকার বলেছে৷ বলেছে, খুনিদের সাথে আপনি এক হয়েছেন৷ আপনি এসব মাথায় নেবেন না৷ হাতি রাস্তায় হেঁটে যাওয়ার সময় অনেক প্রাণি ঘেউ ঘেউ করে৷ আপনারা ঐক্য করেছেন মানুষের জন্য৷ আপনাদের বিজয় হয়ে গেছে।
কাদের সিদ্দিকী আরো বলেন, ড. কামাল হোসেনকে আজকে এখানে পেয়ে ধন্য হয়েছি। তিনি শুধু কামাল হোসেন নন, তিনি ঐক্য ফ্রন্টের প্রধান, তিনি সমগ্র জাতির প্রধান। কামাল হোসেন এমন অবস্থানে আছেন, এখন তিনি যেখানে নির্বাচনে দাঁড়াবেন, সেখানে বিজয়ী হবেন। এমনকি টুঙ্গিপাড়ায় শেখ হাসিনার আসনেও তিনি বিজয়ী হবেন৷ মানুষের পরিবর্তন হতে সময় লাগে না।
তিনি বলেন, সারাজীবন আমি স্রোতের উজানে চলেছি৷ আজকেও চলেছি। আজকের আওয়ামী লীগ আমার পেছনে গুণ্ডা লেলিয়ে দিয়েছিল। আমার কর্মীরা আহত হয়েছিল, পঙ্গু হয়ে গিয়েছিল, অন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমার ভাই আব্দুল লতিফ বলেন ‘‘বাংলাদেশ বলতে শেখ হাসিনা৷ স্বাধীনতা বলতে শেখ হাসিনা।’’ কিন্তু তা আমি মানি না। আমি বলি, বাংলাদেশ বলতে বঙ্গবন্ধু। স্বাধীনতা বলতে বঙ্গবন্ধু। শেখ হাসিনা যদি হেরে যান, কি হবে? এখন তো তিনি হেরে যাচ্ছেন। এতদিন দেখতাম আওয়ামী লীগ ২০ সিট পাবে। এখন তো দেখি ১৯ সিটও পাবে না।
একই মঞ্চে বক্তব্য রাখেন কাদের সিদ্দিকীর সহধর্মিনী বেগম নাসরিন সিদ্দিকী। তিনি বলেন, দেশের কঠিন পরিস্থিতে আমার স্বামী আপনাদের সাথে থাকবে৷ দেশের মানুষের জন্য আপনারা আমাদের পাশে থাকুন। আমরা আপনাদের পাশে থাকবো। দেশের যেকোনো ক্রান্তিলগ্নে আমরা আছি আপনাদের সাথে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন কাদের সিদ্দিকীর সুনাম করে বলেন, আজকে একটি স্মরণসভা হচ্ছে। কিন্তু আমি মনে করি, এটি একটি স্মরণীয় সভা৷ একাত্তরের ঐতিহ্য যারা ধরে রেখেছেন তার মধ্যে অন্যতম কাদের সিদ্দিকী৷ বঙ্গবীর সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। আজকের সভা প্রেরণা যোগানোর একটি সভা। এটি ১৬ কোটি মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে। আজকের সভা থেকে যে ভরসা পাবো, সাহস পাবো, তা দেশের জন্য কাজে লাগবে।
ড. কামাল বলেন, স্বাধীনতার জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম। পাকিস্তানিরা বলেছিল, বাঙালির ঐক্যবদ্ধ হওয়া অসম্ভব। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলো বাঙালি এবং স্বাধীনতা পেয়েছিল। একাত্তরের স্মৃতি ধরেই আমরা সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারি৷ জনগণের ক্ষমতায়ন করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়েছেন৷ জাতির পিতা দেখিয়ে গেছেন, মন্ত্রী হওয়া, প্রধানমন্ত্রী হওয়া বড় কিছু না। আসল কথা হলো, মানুষকে গুরুত্ব দেয়া। বঙ্গবন্ধু সেটা দেখিয়েছেন। বাঙালি জাতিকে দাবিয়ে রাখতে পারে সেই শক্তি কারা নেই। সবাই দেশের মালিক। মালিকের অধিকার যেমন, দায়িত্বও থাকে। এখানে দলীয় স্বার্থে, ব্যক্তি স্বার্থে কাজ করা যাবে না। মানুষের স্বার্থকে বাঁচিয়ে রাখতে আমরা জাতীয় ঐক্য করেছি৷ আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছরকে সামনে রেখে আসুন ঐক্যবদ্ধ হই। এখনো যারা আসেননি আসুন সকল মুক্তিযোদ্ধা আমাদের সঙ্গে আসুন৷
কাদের সিদ্দিকীর ঐক্যফ্রন্টে যোগদানের সম্ভাবনা নিয়ে আ স ম আব্দুর রব বলেন, কাদের সিদ্দিকী আলাদা থাকবেন কেন? মুক্তিযোদ্ধারা আলাদা থাকতে পারেন না। একসাথেই থাকেন। এই দেশের মানুষের জন্য আমরা এক হবো, গণতন্ত্রের জন্য আমরা এক হবো। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার এই লড়াই চলবে। জনগণের জন্য, দেশ রক্ষার জন্য এই লড়াই চলবে।
রব বলেন, আজকে ৪৬ বছর পরেও দেশের এই অবস্থার জন্য দায়ী কে তা উপলব্ধি করতে হবে। জেলহত্যার দায় তো আওয়ামী লীগকেই নিতে হবে। কারণ, খন্দকার মোস্তাকের আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল। এখনো আশপাশে মোস্তাকের প্রেতাত্মারা আছে, যাদের নিয়ে নির্বাচন না দিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চান শেখ হাসিনা। নির্বাচন না হলে তার সব দায় দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী আপনাকে নিতে হবে। ৭ দফা দাবি না মানলে যদি কোনো সংকট তৈরি হলে, এই দায় আপনাকে নিতে হবে।
তিনি বলেন, জনগণ মাঠে নামলে দাবি না নিয়ে ফিরে যাবে না। শুধু দুটি সমাবেশ করেছি৷ পথে পথে সভা হবে, রোডমার্চ হবে, লংমার্চ হবে, দাবি আদায়ের জন্য যা যা করার সব করা হবে। এই লড়াই গণতন্ত্রের উদ্ধারের লড়াই, শান্তি প্রতিষ্ঠার লড়াই। ড. কামালের নেতৃত্বে আমরা দাবি আদায় না করে ঘরে ফিরে যাবো না।
আ স ম রব আরো বলেন, এখনো গ্রেপ্তার হচ্ছে, গায়েবী মামলা হচ্ছে। আপনার সরকার যদি ফাঁসির আসামীকে বিদেশে পাঠাতে পারে তাহলে রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে পারবে না কেন?
আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন গণফোরামের মহাসচিব মোস্তফা মহসিন মন্টু, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী, কলামিস্ট আবুল মকসুদ, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ।