নিখোঁজ সাংবাদিক ও শিক্ষক মোবাশ্বার হাসান সিজার’র একমাত্র মেয়ে অারিয়ানার জন্মদিন আগামী ২৭ নভেম্বর। মেয়ের জন্মদিন তার পিতাকে ফিরিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেছেন সাংবাদিক শরিফুল হাসান।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুতি জানিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে তিনি লিখেছেন: শুভ সকাল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। অাশা করি অাপনি ভালো অাছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অামি টানা ১৫ বছর সাংবাদিকতা করেছি। সাংবাদিক হিসেবে কতোজনকে রাষ্ট্র থেকে প্লট, বিদেশ সফর অারও কতো কতো সুবিধা নিতে দেখেছি। অামি কোনদিন কোথাও কারও কাছে কিছু চাইনি। তবে অাজ অাপনার কাছে চাইছি। ছয় বছরে পা দিতে যাওয়া একটা শিশু কন্যার জন্মদিনে তার বাবাকে চাইছি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বজনহারার অাকুতি, সন্তানের জন্মদিনে বাবার জেলে থাকার বা নিখোঁজ থাকার অনুভূতি অাপনার চেয়ে বেশি অার কে জানে?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত ৭ নভেম্বর থেকে নিখোঁজ বিডিনিউজের অামার সাবেক সহকর্মী মোবাশ্বার হাসান সিজার যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতক করে বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে দেশে ফিরে শিক্ষকতা করছিলেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অাজ ১৮ দিন ধরে সিজার ভাই নিখোঁজ। তার শিশুকন্যা অারিয়ানাকে অামরা কী জবাব দেবো বুঝতে পারি না। বুঝতে পারে না তার মা, নানু দাদু ফুপুরা।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অারিয়ানাকে তার মা অার দাদু ফুপুরা বলেছেন, তার বাবা সিজার অাবার বাইরে গেছে পড়াশুনা করতে। ওর বাবা যেহেতু প্রায়ই বাইরে যায় তাই সে বেশি প্রশ্ন করেনি। কিন্তু প্রচন্ড অভিমান করেছে। কারণ এমন কখনো হয়নি যে ওর বাবা ওকে না জানিয়ে কোথাও গেছে। ও খুব অবাক হয়ে বলেছে “কই, বাবা তো আমাকে বলে গেলো না”।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অারিয়ানা জানতো তার বাবা শুক্রবার তাকে খেলনা কিনতে নিয়ে যাবে। বাবা তাকে না জানিয়ে বিদেশ যাবে এটা সে কিছুতেই মানতে পারছে না। ফুফুর সাথেও তার বেশ ভালো খাতির। বাবার উপর অভিমান করে সে ফুফুর সাথেও কথা বলেনা এখন। তবে অারিয়ানা বিশ্বাস করে অাছে ২৭ তারিখের অাগে একবার দেখতে হলেও তার বাবা অাসবে। কারণ ওইদিন তার জন্মদিন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অারিয়ানা বিশ্বাস করে বসে অাছে তাকে না বলে বিদেশে গেলেও প্রতিবারের মতো তার বাবা বাইরে থেকে খেলনা নিয়ে আসবে। জন্মদিনে সারাদিন তাকে নিয়ে থাকবে। মেয়েটা তার মাকে তাই বারবার জিজ্ঞাসা করেছে, জন্মদিনে নিশ্চয়ই বাবা অাসবে?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সিজার ভাইয়ের স্ত্রী কয়েকদিন অাগে লিখেছেন, “আমি শুধু চাই আমার ছোট্ট মেয়েটার বাবা মেয়ের কাছে ফিরে আসুক। ও শুধু একবার ফিরে আসুক, আমি কথা দিচ্ছি ও আর জীবনেও কোনো কিছু লিখবে না, ওর ফেইসবুক প্রোফাইল থাকবে না। ওর ব্লগ থাকবে না। প্লিজ বিশ্বাস করেন।”
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সিজার ভাইয়ের অবসরপ্রাপ্ত বাবার গোটা দুনিয়া জুড়ে ছিল শুধু উনার ছেলে। গত ১৮ দিনে উনি বুড়িয়ে গেছেন। প্রথম সন্তানের জন্মদিনে তিনি তাকে অাশা করতেই পারেন। তবে তিনি হয়তো কষ্ট সহ্য করে দিনটা কাটাবেন তবে শিশু অারিয়ানার শৈশবটাকে কী অাপনি রাঙিয়ে দিতে পারেন না? অাপনি কী ওর জন্মদিনে ওকে উপহার হিসেবে ওর বাবাকে দিতে পারেন না? অামি খুব করে চাইছি অাপনি জন্মদিনে একটা শিশুর জীবন রাঙিয়ে দিক ওর বাবাকে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অাপনি চাইলে অামার সম্পর্কে খোঁজ নিতে পারেন। দেশটাকে প্রচণ্ড ভালোবাসি। সবসময় দেশটাকে দেয়ার চেষ্টা করেছি। অামার বাবা দাদারাও তাই। অামি অাপনাকে নিশ্চিত করে বলছি সিজার ভাই জঙ্গি নয়। দেশকে প্রচণ্ড ভালোবাসতেন। এই দেশের টানেই অস্ট্রেলিয়া ইংল্যাণ্ডের জীবন ছেড়ে তিনি ঢাকায় এসেছেন। তাকে এভাবে নিখোঁজ করা মানে মুক্তচর্চাকে গুম করা, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চাকে গুম করা।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অামার ছেলেটার বয়স ১১ মাস। অামি অামার ছেলেটাকে প্রচণ্ড ভালোবাসি। ১৮ ডিসেম্বর ওর জন্মদিন। অামাকে যদি কেউ ধরে নিয়ে যেতো অামি খুব করে চাইতাম জন্মদিনটায় অন্তত যেন অামি অামার ছেলের মুখটা দেখতে পারি। সিজার ভাইও নিশ্চয়ই তাই চাইছে। ছোট্ট রাসেলও নিশ্চয়ই চাইতো তার বাবা বঙ্গবন্ধুকে জন্মদিনে তার সাথে পেতে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অাপনার কাছে তাই বিনীত অনুরোধ প্লিজ এই রাষ্ট্রের এক শিশুর, তার বাবার, তার দাদার জীবনটা রঙিন করে দিন। অাপনার কাছে এই অামার চরম অাকুতি। অামার মতো লাখো বাবার অাকুতি। অাপনি নিশ্চয়ই অাগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সেই অাকুতিতে সাড়া দেবেন। নিশ্চয়ই ছয় বছরের একটা শিশু তার জন্মদিনে বাবাকে জড়িয়ে ধরতে পারবে। নিশ্চয়ই অানন্দে চোখ ভিজে যাবে তার, অামাদের এই বাংলাদেশের।