জন্মদিনে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে রাবেয়া খাতুনকে নিয়ে আরও গবেষণা এবং তার সাহিত্যকর্ম সংরক্ষণের তাগিদ উঠে আসে।
সোমবার এই গুণী কথাসাহিত্যিকের জন্মদিনে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে শীতবস্ত্র ও খাদ্য বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘রাবেয়া খাতুন স্মৃতি পরিষদ’।
অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী বলেন: রাবেয়া খাতুনের কথাসাহিত্যে চমৎকার গভীরতা ছিল, সেটাকে স্মরণ করি। সাহিত্যের শক্তিশালী একটি বুনট তৈরি হয় তার হাতে। খুব সহজে তিনি মাইক্রোফোনের সামনে আসতেন না। তাকে নিয়ে দুলর্ভ একটি আলাপচারিতা রয়েছে। সেটিসহ অন্যান্য কর্মকে সংরক্ষণ করতে হবে।
বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক রাবেয়া খাতুনের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানানোর মধ্য দিয়ে তার বক্তব্য শুরু করেন। আনিসুল হক বলেন: গত বছরও তিনি আমাদের সাথে ছিলেন। এ বছর তিনি নেই। নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্রের মধ্যে তিনি অন্যতম একজন। ৫০ এর দশকে পুরুষ সাহিত্যিকদের সাথে সমান তালে সাহিত্য চর্চা করেছেন। তার লেখার উৎকর্ষতা এত বেশি যে, তাকে নিয়ে ভবিষ্যতে প্রচুর অভিসন্দর্ভ রচিত হবে ও গবেষণা হবে।
শুধু লেখালেখি নয়, লেখকদেরকে নিয়ে শহীদ মিনারে আন্দোলনেও রাবেয়া খাতুন সামিল ছিলেন বলে উল্লেখ করেন আনিসুল হক। তিনি বলেন: রাবেয়া খাতুন বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ লেখকদের একজন, তিনি আমাদের মা। সবচেয়ে বড় কথা তিনি সুন্দর একজন মানুষ ছিলেন। এমন মানুষ পৃথিবীতে কমই দেখা যায়।
রাবেয়া খাতুনের জামাতা এবং চ্যানেল আইয়ের পরিচালক জহিরউদ্দিন মাহমুদ মামুন বলেন: ত্রিশের দশকে জন্ম নেয়া মহান এ সাহিত্যিক তৎকালীন সামাজিক প্রেক্ষাপটে অসাধারণ সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে সাহিত্য চর্চা চালিয়ে গেছেন। সেসময় নিজের নামে লিখতেও পারতেন না নারীরা। আমার জানামতে, রাবেয়া খাতুন তার ভাইয়ের নামে একটি লেখা প্রকাশ করেছিলেন। তার কীর্তি, জীবনাদর্শ নিয়ে আমরা বেঁচে থাকতে চাই।
‘মহান এ কথাসাহিত্যিকের পদাঙ্ক অনুসরণের মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্যের চর্চার পথে অনেকেই অগ্রগামী হতে পারে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রাবেয়া খাতুনের জামাতা, চ্যানেল আইয়ের পরিচালক এবং প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু বলেন: রাবেয়া খাতুনকে খুব কাছে থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। সাহিত্যিক হিসেবে অসাধারণ তো বটেই, ব্যক্তি হিসেবেও তিনি অসাধারণ একজন মানুষ ছিলেন। তিনি তার লেখায় স্বকীয়তার ছাপ রেখে বাংলা সাহিত্যে অগ্রণী ভূমিকা রেখে গেছেন।
বক্তব্য রাখতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন সাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনের কন্যা, বিশিষ্ট রন্ধনশিল্পী কেকা ফেরদৌসী। তিনি বলেন: প্রতি বছর মায়ের সাথে জন্মদিন উদযাপনে অনেক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হতো, আনন্দ করতাম ওনার সাথে। এ বছর তিনি নেই। সবার কাছে রাবেয়া খাতুনের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া প্রার্থনা করছি।
বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক আমীরুল ইসলাম বলেন: রাবেয়া খাতুন লেখকদের লেখক। সাহিত্য চর্চার সাথে যারা জড়িত তারা জানেন তিনি দীর্ঘ ৬০ বছর সাহিত্য সাধনা করে গেছেন। আমাদের সৌভাগ্য যে, আমরা তার সাহিত্যের সুবাস গ্রহণ করতে পেরেছিলাম।
আনন্দ আলোর সম্পাদক রেজানুর রহমান কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনের কর্মময় জীবনের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করে সবার দোয়া কামনা করেন।