রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদক, ক্যাসিনো, স্পা সেন্টারে র্যাবের অভিযানে ক্ষমতাসীন দলের বড় বড় নেতাদের জড়িত থাকার খবর প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন, ‘দুর্নীতিবাজ এবং অসৎ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে। আমরা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি এবং মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছি। অনিয়ম বা অসৎ উপায় ধরা পড়লে আমার দলের হলেও তাকে ছাড় দেয়া হবে না।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর কথার বাস্তবায়ন শুরু হয়ে গেছে। সম্প্রতি বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার পর চিহ্নিতদের অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন। কিন্তু পালিয়ে গিয়েও তারা রক্ষা পাবেন না বলে জানিয়েছেন সরকারের একাধিক মন্ত্রী।
সরকার প্রধানের কাছ থেকে এমন কঠোর বার্তা পেয়ে সাধারণ জনগণ আশায় বুক বেঁধেছে। তাদের বিশ্বাস, সমাজে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়া অনিয়ম, দুর্নীতিকে থামাতে হলে কঠোর হওয়া ছাড়া আর কোনো পথ নেই। এ জন্যই সরকারের এমন উদ্যোগে সমর্থন জানিয়েছে সাধারণ মানুষ। তাদের সমর্থন থাকলে যে কোনো অসম্ভব কাজ সম্ভবে পরিণত করা যায়।
আমরা মনে করি, সরকারের জন্য এই জনসমর্থন অপরাধীদের দমনে মূল শক্তি হিসেবে কাজ করবে। আবার এটা সরকারের কাছে বড় সুযোগও। কেননা সম্মিলিতভাবে খুব কম ইস্যুতেই জনগণকে সমর্থন করতে দেখা যায়। কিন্তু এখন সবচেয়ে একটা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তাদের মধ্যে। এত বড় বড় অনিয়ম, বেআইনী কাজ দিনের পর দিন প্রশাসনের নাকের ডগায় চললো কিভাবে?
এই প্রশ্ন শুধু সাধারণ মানুষের না, কোনো মন্ত্রীও প্রশ্ন তুলে বলেছেন, প্রশাসন বিশেষ করে পুলিশের সামনে দিনের পর দিন এই সব ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুলিশ সহযোগিতাও করেছে। তাদের বিরুদ্ধে কি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? আইনের লোক হয়ে যারা বেআইনী কাজের সহযোগী হয়েছে; তাদেরকেও শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
পুলিশকে নিয়ে এমন সমালোচনার মধ্যে মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ১১টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বদলি করা হয়েছে। যদিও সরাসরি বলা হয়নি তাদের বদলির কারণ। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ক্যাসিনোসহ নানা অনিয়মে নাম আসায় তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
রাজধানীতে যখন একযোগে ১১ থানার ওসি বদলি নিয়ে আলোচনা চলছে, তার মধ্যে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে খুলনায় চাঁদাবাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই), তিনজন সহকারী উপ-পরিদর্শকসহ (এএসআই) সাত পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করার ঘটনা। অভিযোগ ওঠার পরই তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এর আগের দিন ভয় দেখিয়ে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে পল্টন থানার ওসি মাহমুদুল হককে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেওয়ার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। এসব ঘটনায় মনে হচ্ছে পুলিশ প্রশাসনেও শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে। তার মানে সরকারের কঠোর অবস্থান শুধু মুখের কথাতেই সীমাবদ্ধ নেই, কাজেও তা দেখা যাচ্ছে।
আমরা মনে করি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা সঠিক থাকলে অনেকের পক্ষেই অনিয়ম-দুর্নীতি করা সম্ভব না।