আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত করা হয়েছে জয়নাল হাজারীকে। তিনি ফেনীর আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ২২-২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত দলের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তাকে এ পদে মনোনয়ন দিয়েছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ সংক্রান্ত একটি চিঠি জয়নাল হাজারীর হাতে তুলে দেন।
জয়নাল হাজারী ১৯৮৪ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ফেনী জেলাআওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ফেনী-২ সদর আসন থেকে ১৯৮৬, ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালেটানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০১ সালের ১৭ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান জয়নাল হাজারী। সংসদ সদস্য হিসেবে তার শেষ মেয়াদে নানা বিতর্কে জড়ান জয়নাল হাজারী। কথিত আছে- এ কারণে ২০০৪ সালে দল থেকে বহিষ্কৃত হন। এরপর দীর্ঘদিন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিলেন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে ফেরেন তিনি। পাঁচটি মামলায়৬০ বছরের সাজা হয় তার। এরপর ওই বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করলে আট সপ্তাহের জামিন পান হাজারী।
পরে ১৫ এপ্রিল নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করলেতাকে পাঠানো হয় কারাগারে। চার মাস কারাভোগের পরে ২০০৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্ত হন। শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় সম্প্রতি জয়নাল হাজারীকে চিকিৎসার জন্য ৪০ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ওই অনুদানের চেক গ্রহণ করতেহাজারী গণভবনে গেলে তার সঙ্গে রাজনীতি নিয়েও অনেক কথা হয় দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার। এসময় প্রধানমন্ত্রী তার স্বাস্থ্যের খোঁজ নেন এবং তার সুস্থতা কামনা করেন।
উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগপত্র পাওয়ার পর জাহিদ নেওয়াজ খানের পরিকল্পনা ও সোমা ইসলামের উপস্থাপনায় চ্যানেল আইয়ের ‘টু দ্য পয়েন্ট’ অনুষ্ঠানে নানা প্রসঙ্গে কথা বলেন তিনি।
প্রশ্ন: আপনি কেমন আছেন?
জয়নাল হাজারী : শরীরটা ভাল যাচ্ছে না। আরআজকে আমি একটু ক্লান্ত। ক্লান্ত এই কারণে-
কালকে আমি নিয়োগ পেয়েছি এডভাইজার হিসেবে এবং তার অফিসিয়াল চিঠি পেয়েছি।
প্রশ্ন: আপনাকে অভিনন্দন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর উপদেষ্টা হওয়ার জন্য।
জয়নাল হাজারী: বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল এবং পত্রিকা থেকে মানুষের ভিড়। ঠিকমতো খাওয়া দাওয়াও করতে পারিনি। এর ফলে একটু অসুস্থ।তাছাড়া বয়স, অসুস্থতা ও ব্যস্ততার কারণে সব মিলিয়ে ক্লান্ত। সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ অফিস থেকে চিঠি নিয়ে আমার গাড়িতে উঠতে সময় লেগেছে এক ঘণ্টা। তাই একটু ক্লান্ত।
প্রশ্ন: অসুস্থতা আছে?
জয়নাল হাজারী: আমি দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস এর রোগী। হাইপ্রেশার আছে। হাইপ্রেশার নিয়ন্ত্রণে আছে কিন্তু ডায়াবেটিস তো কখনোই ভাল হয় না। নানা কারণে শারীরিকভাবে ভাল নেই। গতমাসেই সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা করে এলাম। তার আগে তো আমি ঠিকমতো হাঁটতেও পারতাম না? এখন সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা করে আসার পরে কিছুটা ভাল।
প্রশ্ন: আপনি সত্যিই তো জয়নাল হাজারী?
জয়নাল হাজারী: হা-হা-হা। আপনার অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে? হ্যাঁ- এই রকম একটা স্মৃতি ও ঘটনা আছে। আমি একবার লন্ডন থেকে বাংলাদেশে আসার জন্যে টিকিট পাচ্ছিলাম না। তখন বাংলাদেশ বিমানের অফিসে গেলাম টিকিটের জন্যে। একজন বুদ্ধি দিলেন- আপনি নিজে যান নিজে গেলে টিকেট পেতে পারেন। যাওয়ার পরে আমি আমার পরিচয় দিলাম। তারা অনেক
কম্পিউটার ঘাটাঘাটি করে বললো- টিকেট নাই। তখন আমি রাস্তার পাশে চলে এসেছি ট্যাক্সির
জন্যে। এমন সময় আরেকজন স্টাফ দৌড়ে এসে বললো- আপনি আসলেই জয়নাল হাজারী? আমি বললাম- কেন তোমার কোন সন্দেহ আছে? আমার পাসপোর্ট আছে। তখন তারা আবার আমাকে ডেকে নিয়ে টিকেট দিলো।
প্রশ্ন: যারা টিকেট দিলো- তারা কি ভয়ে দিলো নাকি ভালবেসে?
জয়নাল হাজারী: সেই কথা তো তাদেরকে জিজ্ঞেস করতে হবে? এটা তো আমি বলতে পারবো না?
প্রশ্ন: আমরা ধরে নিচ্ছি- ভীষণ জনপ্রিয় আপনি। মানুষ ভালবেসে টিকেট দিয়ে দিলো। যে জয়নাল হাজারীর এতো জনপ্রিয়তা তার সাথে সমালোচনা ও বিতর্ক তো আছেই? এতো আলোচিত আপনি কিন্তু কেন দীর্ঘসময় রাজনীতি থেকে দূরে গিয়ে নির্বাসিত জীবন কাটিয়েছেন?
জয়নাল হাজারী: কেন দীর্ঘদিন নির্বাসিত ছিলাম? রাজনীতি ছাড়া অন্য কিছুতে আমার কোন অভিজ্ঞতা নাই। কোন ব্যবসা বাণিজ্য বা অন্য কোন কিছু নাই। ছেলেবেলায় খেলাধুলা করতাম। কলেজ জীবন থেকে রাজনীতির সাথে এমনভাবে জড়িয়ে গেছি- রাজনীতি ছাড়া অন্য কিছু বুঝতাম না। সেই রাজনীতিতে এসে একটা পর্যায়ে হোচট খেলাম। হোচট খেলাম যখন ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ ৯৬ তে। তখন যেহেতু ক্ষমতাসীন তাই আলোচনা হতো এবং জনপ্রিয় হয়ে যেতো। আর তখন বিএনপি বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে প্রচার প্রপাগান্ডা করলো। ৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আমরা ক্ষমতায় ছিলাম। শেষের দিকে এস তত্ত্বাবধায় সরকার বিএনপি’র চাপে বা অন্য কোন কারণে আমার বাড়িতে বড় ধরণের অভিযান চালালো। আমি তাদের এই অভিযান সম্পর্কে আগেই জানতাম। আমার সেখানে কোন কিছু অবৈধ ছিল না। কোন অস্ত্বা মাদক ছিল না।কিন্তু তারা প্রায় ১৮০০ পুলিশ বিডিআর নিয়ে এমনকি এক পর্যায়ে আর্মিও গেছে। তারা মনে করেছিল আমার বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করলে অবশ্যই যুদ্ধের মত হবে। গোলাগুলি হবে। কিন্তু আমি অত্যন্ত কৌশলে সেখান থেকে আত্ম গোপনে যেতে সক্ষম হই।
প্রশ্ন: বিএনপির কারণে আপনি আত্মগোপনে চলেগেলেন কিন্তু আপনার দল আওয়ামী লীগ তো ১১ বছর ক্ষমতায়। তাহলে আপনি কেন এখন নিজের এলাকায় যেতে পারছেন না? আপনাকে নির্বাসিত জীবন যাপন করতে হচ্ছে?
জয়নাল হাজারী: সেই ধারাবাহিকতার কথা বলছি। তখন বিএনপি’র ভয়ে চলে গেলাম। তারা সেদিন আমাকে পেলে মেরে ফেলতো- তার অনেক সিমটম আছে। যাই হোক, সেখান থেকে চলে গেলাম। সেই আত্মগোপন থেকে প্রকাশ্যে এসেছি। আবার যখন ২০০৮-৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে তখন ফিরে আসি। কোর্টে এর মধ্যে বিএনপি আমার বিরুদ্ধে কঠিন কঠিন মামলা দায়ের করে। সেই সব মামলায় আমি হাইকোর্টে আত্মসমর্পন করে জামিন নিয়েছি বা সব কেসগুলো শেষ করেছি। গেলাম ২০০১ সালে আবার এলাম ২০০৯ সালে। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে আমি এসেছি। তার কয়দিন পরেই বিডিআর এর ঝামেলা হলো। এর মধ্যে আমার কর্মী এবং পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে গ্যাপ হয়ে গেলো। আমার প্রতিপক্ষরা খানিকটা অবস্থান নিয়ে নিলো এবং তাই আমি ক্ষানিকটা অবস্থান হারিয়ে ফেললাম। এর মধ্যে একটি চক্র পুরোপুরি ফেনীর রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে উঠে পড়ে লেগে গেলো।
প্রশ্ন: সেই চক্র কারা?
জয়নাল হাজারী: সেই চক্রের নামটা— এই মুহুর্তে—
প্রশ্ন: আজকে আমরা চাই অনেক সত্য এখানে ষ্পষ্ট উচ্চারণ করবেন। অনেক মিথ্যা ভেঙে দিবেন?
জয়নাল হাজারী: সেই সত্য উচ্চারণ করার সৎ সাহস আমার আছে এবং এটি সবাই জানে।
অনেকে অসন্তুষ্ট হন তবুও আমি সত্য কথা বলি। সব ভাষণেই আমি এই রকম অনেক সত্য কথা বলে অনেকের শত্রু হয়েছি। তাতে আমার কিছু আসে যায় না এবং আমি তাতে কিছু পরোয়াও করি না। সাত আট বছর আমি বাইরে থাকার কারণে এলাকায় আমার শত্রু পক্ষ তাদের অবস্থান নিয়ে ফেলে। তাদের সেই অবস্থান ভাঙতে গিয়ে আমি খানিকটা ব্যর্থ হয়েছি। সেই সময় তারা বলে বেড়ালো- জয়নাল হাজারীকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।
প্রশ্ন: কারা বলে বেড়ালো? তারা তো আপনার নিজ দলের মানুষ?
জয়নাল হাজারী: নিজ দলের মানুষ এরা শুধু বলে বেড়ালো না? কিছু কিছু পত্রিকার হেডলাইন হলো- যেমন, যুগান্তর। একেবারে লীড নিউজ ছিল যে, জয়নাল হাজারীকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং সেইটাকে তারা এমনভাবে সত্যে পরিণত করলো অথচ তা ছিল মিথ্যা। গতমাসেই জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষ্কার বললেন। আমি গেলাম দেখা করলাম- আমাকে ৪০ লক্ষ টাকা দিলেন চিকিৎসার জন্যে। সেখানে বড় বড় নেতারা এবং মন্ত্রীরা ছিল। আমি বললাম- দীর্ঘদিন হয়ে গেলো অনেক ধৈর্য্য ধরেছি। আমি মরার আগে যেন আওয়ামী লীগের নেতা বা লোক হিসেবে মরত পারি। প্রধানমন্ত্রী বললেন- আপনি কী বলেন? আপনি তো আওয়ামী লীগে ছিলেন, আওয়ামী লীগে আছেন এবং আপনাকে আমি কোন দিন বহিস্কার করিনি এবং আওয়ামী লীগও তা করেনি। কিন্তু ওই যে এক সময়ে পত্র পত্রিকায় বহিস্কার বলে প্রচার করেছে এবং সবাই জানতো বহিস্কার। কিন্তু শেখ হাসিনা নিজে মুখে বললেন আমাকে বহিস্কার করেননি। তাই মাঝে অনেক সময় চলে গেলো। তাই এখন প্রমাণ হয়ে গেলো আগের ওই সংবাদ বা প্রপাগান্ডা সবই মিথ্যা ছিল।
প্রশ্ন: আপনার তো অঢেল সম্পদ রয়েছে। তাহলে কেন আপনাকে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা নিতে হলো?
জয়নাল হাজারী: আমার অঢেল সম্পদ এবং বিত্তবৈভব আছে এটি কেউ মনে করে না এবং
এটি সত্য নয়। আমি তিনবারের এমপি এবং ২০ বছর জেলা আওয়ামী লগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। আমি আমার বাপের সম্পত্তি বিক্রি করেছি ২ কোটি টাকা মসজিদের কাছে- এটি সবাই জানে। আরও আমার পেট্টোবাংলা একটা জায়গা আছে শহরের কাছে। এটিও আমি বিক্রি করেছি। আমার বাপের ৫-৭ কোটি টাকার সম্পত্তি আমি বিক্রি করেছি।
প্রশ্ন: তার মানে আপনার কোন সম্পত্তি নেই? জয়নাল হাজারী নি:স্ব? তাহলে জয়নাল হাজারীকে কেন মানুষ ভয় পায়?
জয়নাল হাজারী: হ্যাঁ। জয়নাল হাজারী নি:স্ব। সম্পত্তি থাকলে মানুষ ভয় পায় এটি তো কোনদিন শুনিনি?
প্রশ্ন: কেন গডফাদার বলা হয় আপনাকে?
জয়নাল হাজারী: মনে হচ্ছে মুখস্ত করে তুমি প্রশ্ন করো। আমি কোনো গডফাদার নই। আমাকে গডফাদার বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। আমার কোন সম্পত্তি নাই। আমার বাপের দিনের কিছু সম্পত্তি আছে। যা আমার ভাই ব্রাদার ও আত্মীয় স্বজনরাও পাবে। আমি নিজে এক ইঞ্জি জায়গা করিনি। আমার আলাদা কোন বাড়ী নাই। আমার বাবা যে বাড়ী দিয়ে গেছেন সেই বাড়ীতে আছি। সুতরাং তোমাদের যে ধারণা বা কিছু লোকের যে ধারণা তা ভুল।
প্রশ্ন: পরের প্রশ্নের উত্তর কী?
জয়নাল হাজারী: পরেরটা কোনটা?
প্রশ্ন: ওই যে জয়নাল হাজারী কেন আতঙ্কের নাম জনপদে?
জয়নাল হাজারী: এখন সেটা নাই।
প্রশ্ন: আপনি বদলে গেছেন? বয়স বেড়েছে বলে?
জয়নাল হাজারী: তোমরা খবর নাও। এখন আমাকে এডভাইজার করার পরে ফেনীর পরিস্থিতি কী? ফেনীর মানুষ কী ভাবছে? নিজের কথা নিজে বলা উচিৎ না। আমি তা বলিও না। কিন্তু এখন ফেনীর মানুষ চায়- আমি আবার ফেনীতে যাই। ফেনীতে এখন এতো খুন খারাবি, অনিয়ম, অত্যাচার নির্যাচন ও চাঁদাবাজি হচ্ছে। মানুষের উপরে জুলুম চলছে নুসরাতকে হত্যা করা হলো ফেনীতে। জ্বালিয়ে মেয়েটাকে মেরে ফেলেছে- এই ধরণের ঘটনা সারা দেশে কোথাও ঘটে নাই। আবার একরাম নামের এক চেয়ারম্যান তাকে গান পাউডার দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বারবার এই জাতীয় ঘটনা ঘটছে। কিন্তু আমার সময়ে এমন ঘটনা সেখানে ঘটেনি।
প্রশ্ন: আপনি বলছেন জয়নাল হাজারীর ফেনী ভাল ছিল কিন্তু নিজাম হাজারীর ফেনী ভাল
নেই। সাংবাদিক টিপু সুলতানকে পঙ্গু করে দেওয়া এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসের অভিযোগ আছে আপনার বিরুদ্ধে। আপনার স্টেয়ারিং বাহিনী ফেনীকে নিয়ন্ত্রণ করতো?
জয়নাল হাজারী: সেই সময়ে মিডিয়া যে কোন কারণে আমার বিরুদ্ধে যায়। মোটেও সাংবাদিক টিপু সুলতানকে হত্যার চেষ্টা করা হয়নি। এসব অভিযোগ তখন ছিল সুপরিকল্পিত এবং ইস্যু করা। একসময়ে বঙ্গবন্ধুর আমলে বাসন্তি নামের একটি মেয়েকে জাল পরিয়ে এটি মিডিয়াতে দিয়ে একটি ইস্যু করার চেষ্টা করা হয়েছিল। আমাকেও টিপু সুলতানকে নিয়ে ইস্যু করা হয়েছে। টিপু সুলতান কিছু লোকের মধ্যে ঝগড়া ও মারামারিতে আহত হয়। তখন কিন্তু সে এক সপ্তাহ পর্যন্ত ঢাকায় হসপিটালে ছিল। সেই সময়ে টিপু সুলতান ইনকিলাব পত্রিকায় বিরাট এক সাক্ষাতকার দেয়। সেখানে কোথাও সে আমার নাম বলেনি। কিন্তু হঠাৎ করে আমার শত্রু পক্ষ বা বিএনপি’র লোকের উস্কানিতে ও প্রলোভনে হঠাৎ আমার নাম বলে। কিন্তু টিপু সুলতানকে যদি আমি মেরে ফেলতে চাই তাহলে কী জন্য? কোন কারণ ছাড়া তো কোন ঘটনা ঘটে না? তখন বলা হলো যে, আমার বিরুদ্ধে সে তখন একটি ভয়াবহ খবর ছাপিয়েছে। সে কোন খবরটা আমার বিরুদ্ধে ছেপেছে তা আজও সে বলতে পারে না। টিপু সুলতানের ব্যাপারটি আমার বিরুদ্ধে ইস্যু করা হয়েছিল এবং সেই কাজে তারা সফল হয়েছিল। তবে কিছুটা আমাকে ভয় করে বলতে- এটা বললেই হবে, তখন চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও ফেনী ছিল বিএনপি অধ্যুষিত। সেই বিএনপি অধ্যুষিত লোকেরা ভয় করতো। যখন ৯৬ তে আমি নির্বাচন করি সেই কক্সবাজার থেকে সাভার পর্যন্ত কেউ এমপি হতে পারেনি। আমি এমপি। ৯১ তেও কক্সবাজার থেকে সাভার পর্যন্ত মেইন রোডে আওয়ামী লীগের কোন এমপি ছিল না। শুধু আমি এমপি ছিলাম। আমার এলাকা ছিল বিএনপি অধ্যুষিত- এটার কারণ তখন বিএনপি আমাদের অনেক লোককে হত্যা করে মোট ৪৭ জন- রাজ্জাক চেয়ারম্যানকে হত্যা করে, আমার চাচাতো ভাই যুবলীগের সভাপতি ভেন্ডু হাজারীকে হত্যা করে, রতন কমিশনারকে হত্যা করে। তখন তাদের সাথে আমি লড়াই করেছি। জাফর ইমাম মন্ত্রী ছিলেন জাতীয় পার্টির আমি তাদের সাথে লড়াই করেছি রাজনৈতিক কারণে। আমার লড়াই করেছি আমার দলের জন্যে। তখন মানুষের মধ্যে কিছুটা ভীতি এবং আতঙ্ক কাজ করেছে। কিন্তু আমি স্ব ইচ্ছায় ও বিনা কারণে কোন মানুষকে হত্যা করিনি। কখনো কোন মানুষের উপরে অত্যাচার ও নির্যাতন করিনি। সেখানে আপনি এখন প্রতিনিধি পাঠান সেখানে দেখবেন আমার অবস্থান কী এবং অন্যদের অবস্থা কী?
প্রশ্ন: ওয়ান ইলেভেনের সময়ে জয়নাল হাজারী নির্বাসিত হয়ে গেলো। আবার এখন মানুষ বলছে যে, সরকারের শুদ্ধি অভিযান ও ধর পাকড়ে ওয়ান ইলেভেনের মতো পরিস্থিতি চলছে। আবারএই পরিস্থিতিতে জয়নাল হাজারীর উত্থান হলো?
জয়নাল হাজারী: আবার উত্থান হলো এই জন্যে যে, সমস্ত তদন্ত সংস্থা যারা আছেন তারা রিপোর্ট
দিয়েছে- তারা জানে এই জাতীয় কোন ঘটনারসাথে আমি জড়িত নই। এছাড়া ইতিমধ্যে জননেত্রী বেশ কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছেন তাতে তার জনপ্রিয়তা বেড়ে যাচ্ছে। তাই আমাকে আবার এনে এই পদ দিলে তার জনপ্রিয়তা বাড়বে কি কমবে তিনি নিশ্চয়ই ভালো ভাবে অনুধারণ করেছেন? তিনি বুঝতে পেরেছেনে এখন যদি জয়নাল হাজারীকে স্বীকৃতি দেই- সে মুক্তিযোদ্ধা, নির্যাতিত এবং ত্যাগী। শুধু এই সবই নয়- আমি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতি করি এবং ফেনী কলেজের জিএস ছিলাম। বৃহত্তর নোয়াখালি জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পরে একটানা ৫ বছর জেল খেটেছি। এছাড়া তার মৃত্যুর পরে আর্মি আমাকে গ্রেফতার করে ১ মাস ১০দিন ক্যান্টনমেন্টে রেখেছিল। এই রকম অসংখ্য নির্যাতন সহ্য করেছি। এই সব কিছুকে স্বীকৃতিদেওয়ার জন্যে এবং এখন তিনি বুঝতে পেরেছেনজয়নাল হাজারীকে যদি এডভাইজার করি তাহলে আমার কোন সমালোচনা হবে না এবং হয়ও নাই।তাই এডভাইজার ডিক্লিয়ার করেছে কিন্তু ১ মাস আগে।
প্রশ্ন: কিন্তু ১ মাস দেরী হলো কেন কাগজ পেতে- সেই ধোঁয়াশা কি ছিল?
জয়নাল হাজারী: ইতিমধ্যে এর উত্তর অন্তত ২০/৩০ জায়গায় দিতে হয়েছে। আজ বঙ্গবন্ধুর
প্রতিকৃতিতে যখন মালা দিতে গেলাম- তখনও এই প্রশ্ন করেছে? সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আমাকে এই পদে চাননি। চান নাই তার কারণ কী? তিনি মনে করেছেন, আমি উপদেষ্টা হলেই আবার ফেনী যাব। আর ফেনী গেলেই আমি আবার সেখানকার রাজনীতি করায়ত্ত করবো। রাজনীতি আমার দখলে চলে আসতে পারে। এইগুলো শুধু তার ধারণা আসলে বাস্তব নয়। ওবায়দুল কাদের মনে করেন, আমি যদি ফেনী যাই তাহলে তিনি আর ফেনী যেতে পারবেন না। অথচ ফেনী তার প্রিয় জায়গা। তিনি কুমিল্লা গেলেও ফেনী সার্কিট হাউজে থাকেন। নোয়াখালি গেলেও ফেনী সার্কিট হাউজে থাকেন। চট্টগ্রাম গেলেও ফেনী সার্কিট হাউজে থাকেন। ফেনী সার্কিট হাউজে থাকতে তিনি খুব স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এর সাথে আরও কিছু বিষয় আছে তা বলা যাবে না।
প্রশ্ন: খুব কি অভ্যন্তরীণ বিষয়?
জয়নাল হাজারী: খুব ব্যক্তিগত ব্যাপার। যা বললে নেত্রী আমার উপরে ক্ষিপ্ত হবেন। যে নেত্রী এতো কিছু উপেক্ষা করে আবার আমাকে এই পদ দিলেন সেই নেত্রী কিন্তু ক্ষিপ্ত হবেন। মনে করবেন- আমার দলের সাধারণ সম্পাদক তার ইমেজ নষ্টের জন্যে এই কথা বলে ফেলেছেন।
প্রশ্ন: কিন্তু নেত্রী সেই বিষয়ে জানেন তো?
জয়নাল হাজারী: একটা বিষয় মনে হয় এখনো তার কাছে পরিস্কার নয়। তবে অনেক কিছু
জানেন।
প্রশ্ন: ওবায়দুল কাদের চাননি আপনি উপদেষ্টা হন, কিন্তু আপনি হলেন। কিন্তু সেই ওবায়দুল
কাদেরই আপনার হাতে চিঠি দিলেন?
জয়নাল হাজারী: তিনি চাননি- তার একটা কারণ আমি যদি ফেনীতে অবস্থান নেই তাহলে তিনি ফেনীতে আর যেতে পারবেন না এবং স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে ফেনী সার্কিট হাউজে থাকতে পারবেন না।
প্রশ্ন: সেই ওবায়দুল কাদেরই আপনার হাতে নিজে চিঠি দিলে আপনাকে সম্মানীত করলেন?
জয়নাল হাজারী: সেটা না। ২ তারিখে আমাকে এডভাইজার করা হয়েছে। ওবায়দুল কাদের ২টা সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন একটা ২ তারিখে পরিকল্পিতভাবে। সেখানে একজন সাংবাদিককে দিয়ে প্রশ্ন করানো হয়েছে- জয়নাল হাজারীকে উপদেষ্টা করা হয়েছে- এই বিষয়ে জানতে চাই? তিনি উত্তর দিলেন- আমি এর কিছুই জানি না। নেত্রীর সাথে যে কথা হয়েছে তাতে উনাকে উপদেষ্টা করার কথা ছিল না। এরপরে ২৬ তারিখে ফেনী জেলা সম্মেলন হয়েছে। সেখানেও জেলা সম্মেলনের আগে তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করলেন যেটা কখনো কোন জেলা সম্মেলনের আগে হয় না। সেখানেও একজন সাংবাদিককে দিয়ে প্রশ্ন করা হলো- জয়নাল হাজারীর ব্যাপারে বিতর্ক তৈরী হয়েছে- ব্যাপারটা ক্লিয়ার করেন? সেখানেও তিনি একই কথা বললেন- আমি জানি না। অথচ তিনিই কালকে আমার সামনে সিগনেচার করে আমার হাতে সেটা দিলেন।