ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী ও পূর্ণ ভূমিমন্ত্রী হয়ে গত ক’ বছরে ভূমি ব্যবস্থাপনা ও সেবায় দারুণ পরিবর্তন এনে সবার নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছেন চট্টগ্রামের সন্তান সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ এমপি।
ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান তিনি। রাজনীতিতে এসেছেন উত্তরাধিকার সূত্রেই। কিন্তু এমপি’র পর মন্ত্রী হয়ে ভূমি ন্ত্রণালয়ের মতো একটি জটিল জায়গা সামলাবেন এটি কখনোই তার কল্পনাতে ছিল না। দিনশেষে নিজেকে তিনি প্রমাণ করেছেন- যোগ্য এবং সৎ ও ডায়নামিক মন্ত্রী হিসেবে।
ভূমিকেন্দ্রিক নানান ধরনের সেবাকে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জনগণের দোরগোড়ায় নিতে পেরেছেন। এখন যে কেউ ঘরে বসেই জমির খতিয়ান, নামজারি দেখতে পারেন। ঘরে বসেই জমা-জমির ট্যাক্স দিতে পারেন। আবার খাসজমি বন্দোবস্ত, বন্দোবস্ত নবায়ন ফরম, আমমোক্তার দলিল গ্রহণের অনুমতি, জরীপ ফরম, খতিয়ান ফরম, ফ্লাট হস্তান্তর ফরম, হলফ নামাসহ বিভিন্ন ধরনের আবেদন ঘরে বসেই অনলাইনে করা যায়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূমি সেবা পোর্টালে গিয়ে এ সব ধরনের সেবা মুহূর্তেই নেওয়া সম্ভব। ভূমি মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল ভূমিসেবায় অভ্যস্ত হয়ে উঠছে সাধারণ মানুষ। একই সাথে তাই কমছে জনদুর্ভোগ ও দুর্নীতি।
দিনের পর দিন ভূমি অফিসের দ্বারে দ্বারে ঘুরার দিনও ফুরিয়ে আসছে। ডিজিটাল ভূমিসেবা বিস্তৃত হওয়ায় জনগণের অর্থ এবং সময়ের সাশ্রয়ও হচ্ছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল সেবা যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তার প্রমাণ হিসেবে দেখা যায় আজ ২২ শে মার্চ পর্যন্ত ৯০৬০৫৪৯ জন ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূমিসেবার ওয়েবসাইট ভিজিট করেছেন। ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক আজ অব্দি ১৮১৬৮০৭ জন সেবা গ্রহণ করেছেন। প্রতিদিন গড়ে সেবা গ্রহণ করছেন অন্তত তিন হাজারের মতো সেবাগ্রহীতা। ভূমিসেবা এখন অনেকটা হাতের মুঠোয়। আর এসব কারণেই ভূমি মন্ত্রণালয় পেয়েছে জাতিসংঘ পাবলিক সার্ভিস পদক ২০২০।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাইজেশনের পাশাপাশি জনদুর্ভোগ এবং ভূমিকেন্দ্রীক দুর্নীতি, ভূমিবিরোধ, ভূমিমামলা, জবর দখল এসব কমিয়ে আনতে অগ্রণী ভূমিকা পালন এবং নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ এমপি। অথচ একসময় তিনি এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিতে চাননি। হতাশ হয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথেও দেখা করেছিলেন। কয়েকদিন আগে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহায়তা ন্যাশনাল চর অ্যালায়েন্স আয়োজিত ‘ভূমি আইন ও নীতি: চরাঞ্চলের বাস্তবতা’ শীর্ষক এক জাতীয় সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদানকালে অকপটে এসব কথা বলেন। দশম সংসদে প্রথমবারের মতো ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্ত হন সাইফুজ্জামান চৌধুরী। এরপর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করলে তিনি পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। সে দিন ২৪ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী এবং ৩ জন উপমন্ত্রী শপথ গ্রহণ করেন। সাইফুজ্জামান চৌধুরী পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী চট্টগ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর সন্তান। আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। নবম জাতীয় সংসদে তিনি ছিলেন পাট ও বস্ত্রমন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। ২০১২ সালের ৪ মে তিনি প্রয়াত হন। বাবা আখতারুজ্জামান প্রয়াত হওয়ার পর উপনির্বাচনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ব্যবসায়ী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, যিনি তিন তিনবার চট্টগ্রাম চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। সাইফুজ্জামান চৌধুরী দশম জাতীয় সংসদেও ফের নির্বাচিত হন।
দশম সংসদের সদস্য থাককালীন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তাকে শপথ পড়ানো হয়। কিন্তু শপথ নেওয়ার পর জানতে পারেন তিনি ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়েছেন। এমন মন্ত্রণালয় পেয়ে সেদিন খুশির বিপরীতে তিনি অতৃপ্তিতে ডুবে যান। অতৃপ্তির কারণ ছিল ভূমির মতো জটিল বিষয়ে তার প্রয়োজনীয় জানা-শোনা না থাকা। তাই ভেবেছিলেন এমন মন্ত্রণালয়ে বসলে শুধুই আমলা নির্ভর হয়ে থাকতে হবে। দেশের মানুষের জন্য সৃজনশীল কিছুই করতে পারবেন না। সরকারের সিদ্ধান্ত তার মানতে কষ্ট হচ্ছিলো। অতঃপর প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করেও বলেন, এমন মন্ত্রণালয়ে কাজ করা তার পক্ষে দূরুহ। তাকে অন্য মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হোক। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেছিলেন, এই মন্ত্রণালয়ে কাজ করতে হবে। এখানে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। চরের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। ভূমিসেবা মানুষের হাতের নাগালে নিয়ে যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর অভয়ে এরপর সাইফুজ্জামান চৌধুরী এমপি ভূমি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে পূর্ণ উদ্যোমে কাজ শুরু করেন।
ভূমি বরাবরই এক জটিল বিষয়। এই মন্ত্রণালয়ে যিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত হন তিনি কূলকিনারা পান না। এছাড়া এই মন্ত্রণালয় সম্পর্কে মানুষের মাঝে নেতিবাচক ধারণাও বিদ্যমান। মানুষ মনে করে এই মন্ত্রণালয়ের চেয়ার-টেবিলও ঘুষ খায়। এ রকম প্রেক্ষিতেই এই মন্ত্রণালয় নিয়ে রাজ্যের সন্দিহানা ছিলেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী। কিন্তু এখন অনেকটাই নিজেকে জয় করতে পেরেছেন। সাইফুজ্জামান চৌধুরী জানান, তিনি মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব প্রাপ্ত হওয়ার পর ভূমিসেবার অনেককিছুই ধীরে ধীরে দৃশ্যমান করতে পেরেছেন।
আগে যে সীমাহীন জটিলতা ছিল তা থেকে আস্তে আস্তে অনেককিছুই বের করতে সক্ষম হয়েছেন। প্রতিটি পদে পদে যে টাকার খেলা ছিল তা তিনি কমিয়ে আনতে পেরেছেন। তার মতে, মানুষের চেয়ে যন্ত্রের ব্যবহার যত বেশি বাড়ানো যাবে তত ভূমি ব্যবস্থাপনায় ঘুষ, দুর্নীতি, দুরবস্থা কমে আসেব। এ কারনেই তিনি তথ্যপ্রযুক্তি কে প্রাধান্য দিয়ে ‘ম্যান টু ম্যান’-এর ব্যবহার কমিয়ে নিয়ে আসছেন। মন্ত্রী ভূমি ব্যবস্থাপনায় অনেক ধরনের পরিবর্তন আনতে স্বচেষ্ট রয়েছেন। ১৯৯৭ সাল থেকে ১ টাকা সেলামী দিয়ে খাস জমি বন্দোবস্তের প্রচলন আছে। কিন্তু নামাজারি বাবদ ১১৭০ টাকা প্রদানের যে নিয়ম আছে সেটি ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে প্রদানের চিন্তা ভাবনা করছেন তিনি। দিয়ারা জরিপ নিয়ে তার বক্তব্য বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভের অধীনে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ডিজিটাল (ইমেইজ) সার্ভে সম্পন্ন করা হবে।
ফলে দিয়ারা জরিপের আর প্রয়োজন হবে না। ‘ল্যান্ড জোনিং’ এখন তার অন্যতম প্রায়োরিটি ইস্যু। মন্ত্রীর মতে, এর মাধ্যমে চর জেগে ওঠা তথ্য এবং সাথে সাথে এই কেন্দ্রিক পরিকল্পনা করা সম্ভব হবে। প্রধানমন্ত্রীর রেফারেন্স টেনে তিনি প্রায়শই বলেন, ‘তিন ফসলা জমিতে শিল্প কারখানা করা হবে না। এর সাথে দুই ফসলা জমিতেও শিল্প কারখানা স্থাপন না করার নীতিগত চিন্তা আছে।’ ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে তিনি নানা উদ্যাগের কথা জানাচ্ছেন। তার উদ্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে- চরসহ সমস্ত জমি ডিজিটাল সার্ভে করা;আর কোনো দিয়ারা জরিপ হবে না,‘দলিল যার জমি তার’-এটিই হবে এখণ মুখ্য বিচেনার বিষয়।
পাওয়ার অফ এটর্নি প্রথা/নিয়ম তুলে দেওয়ার কথা ভাবছেন তিনি। ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি বন্ধ করার বিষয়ে তিনি অঙ্গীকারবদ্ধ। আবার যার জমি সে যেনো তার ন্যায্য মালিকানা বুঝে পায় সেজন্য ‘ল্যান্ড ক্রাইম এক্ট নীতিমালা’ গ্রহণের উদ্যাগ নিয়েছেন। ‘ভূমি তথ্য ব্যাংক’ তৈরির কাজও শুরু করেছেন তিনি। ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এমপি ভূমির নিয়ম-কানুন ও প্রয়োগকে সহজ করতে চান। প্রায়শই তিনি বলেন,‘ ভুয়া কাগজ দেখিয়ে ভূমিহীন কৃষকের পসল কোনো জোতদার কেটে নিয়ে যাক এটি আর হতে দেওয়া যাবে না।’
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)