ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান ওয়াসার পানি শতভাগ সুপেয় দাবি করলেও তারই স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে ঢাকার ১০টি জোনের ৫৯টি এলাকায় ময়লা পানির তথ্য উঠে এসেছে।
গত তিন মাসে ২৯২ জন গ্রাহকের অভিযোগের মধ্যে ঢকার ১০টি জোনের ৫৯টি এলাকার পানি সবচেয়ে দূষিত বলে ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার আদালতে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
এছাড়া হাইকোর্টের আদেশে মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, এই ১০টি জোনের প্রত্যেক এলাকা থেকে ৩৫৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হবে। ফলে মোট নমুনার সংখ্যা দাঁড়াবে ১০৬৫টি। এই ১০৬৫ টি নমুনা করে তিনটি ল্যাবরেটরিতে রোগজীবাণু ও ভোৗত রাসায়নিক সংক্রান্ত পরীক্ষা করতে খরচ হবে ৭৫ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ টাকা।
তবে আরো কম নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার খরচটা কমানো যায় কিনা সেজন্য একজন এক্সপার্টের মতামত দরকার মনে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাবিতা রিজওয়ানা রহমানের মতামত জনাতে তাকে ২১ মে সাড়ে ১০ দশটায় আদালতে আসতে বলেন হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আজ আদালতে স্থানীয় সরকারের পক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। রিটকারী পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী তানভীর আহমেদ। আর ওয়াসার পক্ষে শুনানি করেন এম মাসুম।
এর আগে গত বছর ৬ নভেম্বর হাইকোর্টের দেওয়া এক নির্দেশে ঢাকা ওয়াসার পানি পরীক্ষার জন্য চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে গত ১৮ এপ্রিল চার সদস্যের কমিটি গঠন করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।
ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী মনিরুল আলম, বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম বদরুজ্জামান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান সাবিতা রিজওয়ানা রহমানকে সদস্য হিসেবে নেওয়া হয় কমিটিতে।
এ কমিটির দেওয়া এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘নমুনা সংগ্রহ করে তার নির্দিষ্ট পরীক্ষার পর বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করতে একটি তহবিলের পাশাপাশি ল্যাবরেটরিসহ ঢাকা ওয়াসার সামগ্রিক প্রচেষ্টা দরকার। এসব কাজের জন্য যদি তহবিল গঠনও করা হয় এবং বিরতিহীনভাবে ওয়াসার তিনটি ল্যাবরেটরিতে একযোগে কাজ করলে এ প্রতিবেদন তৈরি করতে কমপক্ষে চার মাস সময় প্রয়োজন।’
বাংলাদেশের পানি সরবরাহ, পয়োনিষ্কাশন, স্বাস্থ্যবিধি ও দরিদ্রতা নিয়ে সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক একটি প্রতিবেদন দেয়।
বাংলাদেশ নিয়ে তৈরি করা প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘দেশের প্রায় সাড়ে সাত কোটি মানুষ অপরিচ্ছন্ন এবং অনিরাপদ উৎসের পানি পান করছে। পানির নিরাপদ উৎসগুলোর ৪১ শতাংশই ক্ষতিকারক ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়াযুক্ত এবং ১৩ শতাংশে রয়েছে আর্সেনিক।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পাইপলাইনের পানির ৮২ শতাংশেই রয়েছে ই-কোলাই। ৩৮ শতাংশ টিউবওয়েলের পানিতে পাওয়া গেছে এই ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া। পাকস্থলী ও অন্ত্রের প্রদাহের জন্য ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়াকে দায়ী করা হয়।’ ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘নিম্নমানের পানি এবং পয়োনিষ্কাশন–ব্যবস্থা দেশের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। এ দুটি বিষয় শিশুর পুষ্টির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাংলাদেশের প্রায় ৩৫ শতাংশ শিশু বয়সের তুলনায় উচ্চতায় কম। নিরাপদ ও মানসম্মত পানি এবং পয়োনিষ্কাশন–ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হলে শিশুদের বেড়ে ওঠা এবং দেশের উন্নতি ত্বরান্বিত হবে। দেশের পানি সরবরাহ, পয়োব্যবস্থাপনা–সংক্রান্ত ব্যবস্থার উন্নয়নে জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ চাহিদার তুলনায় কম। গত এক দশকে এই খাতে বাজেটে বরাদ্দ প্রায় অর্ধেক কমেছে।’
বিশ্বব্যাংকের এ প্রতিবেদন নিয়ে প্রকাশিত খবর যুক্ত করে গত বছর ১৪ অক্টোবর হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন তানভীর আহমেদ। সে রিটের শুনানি নিয়ে আদালত পানি পরীক্ষার নির্দেশনার পাশাপাশি রুল জারি করেন।