গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে হাইকোর্টে দেখা গিয়েছিল। আগাম জামিনের আবেদন কার্যতালিকায় আনতে তিনি রোববার হাইকোর্টে এসেছিলেন বলে জানা গেছে। তবে নিজেকে লুকাতে কৌশলের আশ্রয় নেন তিনি।
মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দি ইন্টারনেটে ছড়ানোর দায়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর ‘লাপাত্তা’ হয়ে যায় ওসি মোয়াজ্জেম।
মোয়াজ্জেম হোসেনের আইনজীবী সালমা সুলতানা চ্যানেল আই অনলাইন-কে বলেন: ‘আজ বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চে ওসি মোয়াজ্জেমের আগাম জামিনের একটি আবেদন কার্যতালিকায় আনার জন্য উপস্থাপন করেছিলাম। তখন আদালত বলেছিলেন আগামীকাল বিষয়টি আদালতের কার্যতালিকায় থাকবে। তবে এরপর উনি যেহেতু গ্রেপ্তার হয়েছেন সেহেতু আগাম জমিনের আবেদনটি আগামীকাল শুনানির আর সুযোগ নেই।’
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট বেঞ্চের সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল গাজী মো. মামুনুর রশিদ চ্যানেল আই অনলাইন-কে বলেন: ‘আজ দুপুর ১টার দিকে কোর্ট মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার ঠিক আগে ওসি মোয়াজ্জেমের আগাম জামিনের আবেদন সম্পূরক কার্যতালিকায় শুনানির আরজি জানান তার আইনজীবী। তখন আদালত বলেন বিষয়টি আগামীকাল শুনানির কার্যতালিকায় থাকবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুপ্রিম কোর্টে কর্মরত একজন কর্মকর্তা চ্যানেল আই অনলাইন-কে জানান: আজ সকালের পর থেকেই সুপ্রিম কোর্টের টেলিফোনে এক্সেঞ্জ সংলগ্ন ( মূল ভবন) এলাকায় ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে দেখা যায়। তবে তাকে সহজেই চেনা যায়নি। তার মুখে দাড়ি ছিল। আর তার পায়ে স্যান্ডেল এবং পরনে টি শার্ট।
বিকাল ৩টার পর হাইকোর্ট এলাকার বাইরে থেলে তাকে গ্রেপ্তার করে শাহবাগ থানায় নেয়া হয়। রমনা জোনের উপ-কমিশনার মারুফ হাসান সরদার বিষয়টি চ্যানেল আই অনলাইনকে নিশ্চিত করেন।
মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার পর ওসি মোয়াজ্জেমকে প্রথমে সোনাগাজী থানা থেকে প্রত্যাহার করে রংপুর রেঞ্জে পাঠান হয়। পরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় পুলিশ বাহিনী থেকে।
পুলিশ কর্মকর্তারা ওসি মোয়াজ্জেমের কোনো খোঁজ দিতে না পারলেও আইনজীবীর মাধ্যমে মোয়াজ্জেমের করা একটি আগাম জামিনের আবেদন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা পড়ে গত ২৯ মে।
এর আগে নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দী ইন্টারনেটে ছড়ানোর বিষয়ে পিবিআইয়ের করা তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মাদ আস সামছ জগলুল হোসেন গত ২৭ মে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন।
গত মার্চ মাসে নুসরাত তার মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করার পর তার তদন্তে তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম থানায় ডেকে নিয়ে এই মাদ্রাসাছাত্রীর জবানবন্দী নিয়েছিলেন।
এর কয়েক দিনের মাথায় নুসরাতের গায়ে অগ্নিসংযোগ করা হলে তা নিয়ে সারাদেশে আলোচনার মধ্যে ওই জবানবন্দীর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
অগ্নিদগ্ধ নুসরাতের মৃত্যুর পর গত ১৫ এপ্রিল ওই ভিডিও ছড়ানোর জন্য ওসি মোয়াজ্জেমকে আসামি করে ঢাকায় সাইবার ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
এরপর ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মাদ আস সামছ জগলুল হোসেন ওই অভিযোগ তদন্ত করে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)। এরপর পিবিআই যে তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়, সেখানে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়।
পিবিআইর এই প্রতিবেদন সাইবার ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হলে গত ২৭ মে ট্রাইব্যুনালের বিচারক পুলিশ কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারির আদেশ দেন।
মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানির অভিযোগে রাফির মা বাদী হয়ে মাদ্রসা অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সোনাগাজী থানা পুলিশ অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌল্লাকে গ্রেপ্তার করে।
এ মামলা প্রত্যাহারের জন্য রাফি ও তার পরিবারের উপর চাপ প্রয়োগ করে অধ্যক্ষের লোকজন। এতে ব্যর্থ হয়ে গত ৬ এপ্রিল রাফি আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে তাকে কৌশলে মাদ্রসার ছাদে ডেকে নিয়ে মামলা প্রত্যাহারের জন্য আসামিরা চাপ দেয়। পরে পরিকল্পিতভাবে রাফির হাত পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে রাফি অগ্নিদগ্ধ হয়। তাকে প্রথমে ফেনী সদর হাসপাতালে এবং পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১০ এপ্রিল রাতে রাফি মারা যায়।