চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ওসির নাম না আসায় মাদকের সেই মামলা অধিকতর তদন্তের নির্দেশ

দুই পুলিশ সদস্যের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ওসি কামরুল ইসলামের নাম আসার পরেও অভিযোগপত্রে তাকে অন্তর্ভূক্ত না করায় ৪৯ হাজার পিস ইয়াবার উদ্ধারের মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আগামী দুই মাসের মধ্যে ওই তদন্ত সম্পন্নের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারোয়ার হোসেন বাপ্পী। আর আসামি আসাদুজ্জামানের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফরহাদ আহমেদ।

আজ আদেশে আদালত বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আসামির জবানবন্দিতে নাম আসার পরেও ওসিকে অভিযোগপত্রে অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। আমরা মনে করি, এই অভিযোগপত্র ডিফেকটিভ (ত্রুটিযুক্ত)। এ কারণে মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হলো।’

আইনজীবী ফরহাদ আহমেদ পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আসাদুজ্জামানকে আদালত আজ জামিন দেননি। আর আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তৎকালীন ওসির নাম উঠে এসেছে। কিন্তু অভিযোগপত্রে তার নাম আসেনি। তাই দুই মাসের মধ্যে পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।’

এর আগে গত বছরের ৭ মার্চ নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার রুপালি আবাসিক এলাকা থেকে সদর মডেল থানার এএসআই সরোয়ার্দি ও মাদকবহনকারী সাবিনা আক্তার রুনুকে ইয়াবা ও টাকাসহ গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মো. মাসুদ রানা।

সরোয়ার্দির বাসা থেকে মাদক উদ্ধারের পরদিনই বন্দর থানায় চারজনকে আসামি করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়।

এ মামলার আসামি আলম সরোয়ার্দি জবানবন্দিতে বলেন: ইয়াবাসহ আটকের পর ওসি কামরুল ইসলামকে ফোন করি। উনি আমাকে নিরাপদ স্থানে যেতে বলেন। এরপর ঘাটের কাছেই বাসা হওয়ায় আমি আসামিসহ আমার বাসায় চলে যাই। পরে ওসি আলামত (৪৯ হাজার পিস ইয়াবা) ও টাকা রেখে রুনুসহ দু’জনকে মোর্শেদের কাছে দিতে বলে। মোর্শেদ রুনুকে নিয়ে বাসার নিচে যাওয়ার পর আমাকে ফোন দিয়ে অপর আসামিকে ছেড়ে দিতে বলে। আসামি ছেড়ে দেওয়ার আগে আমি আলামত ও টাকা রেখে দেই। ওই আলামত থেকে ৫ হাজার পিস ইয়াবা এনে ওসির কথামত জনি নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসি। রাতে ডিবি অভিযান চালিয়ে আলামত ও টাকা জব্দ করে।

আসামি কনস্টেবল মো. আসাদুজ্জামান জবানবন্দিতে বলেন: সরোয়ার্দির বাসায় গিয়ে দেখি রুনু ও আ. রহমানকে দেখতে পাই। সে দুজনকে ইয়াবাসহ ধরেছে। মাদকগুলো থানায় না এনে বাসায় আনার কারণ জিজ্ঞাসা করলে সরোয়ার্দি বলেন, ওসি কামরুল স্যার আমাকে আসামিসহ মাদকগুলো বাসায় রাখতে বলেছেন।

এই দুই আসামির জবানবন্দিতে ওসির নাম আসার পরেও তাকে বাদ দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজিমউদ্দিন আল আজাদ।

পরে এই মামলায় জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন কনস্টেবল আসাদুজ্জামান। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি তার জামিন প্রশ্নে জারি করা রুল শুনানিতে ওসিকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আসে। ওসিকে কেন এ মামলায় আসামি করা হয়নি এবং কেন এখন পর‌্যন্ত তদন্ত শেষ হয়নি, সে ব্যাখ্যা জানতে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির মেহেদি মাকসুদকে ২৬ ফেব্রুয়ারি তলব করা হয়।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি মেহেদি মাকসুদ হাজির হয়ে হাইকোর্টকে বলেন, এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজিম উদ্দিন আজাদকে।

পরে হাইকোর্ট অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে ৪ মার্চ হাজির হতে নির্দেশ দেয়। সে অনুযায়ী গত ৪ মার্চ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজিম উদ্দিন আজাদ হাইকোর্টে হাজির হন।

আদালত শুনানি নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তাকে মামলাটির তদন্ত এক মাসে শেষ করতে ও ওসি কামরুল ইসলামকে সদর থানা থেকে প্রত্যাহারের আদেশ দেয়। আর আসামি পুলিশ সদস্য আসাদুজ্জামানকে জামিন না দিয়ে তার আবেদনটি নিষ্পত্তি করে দেয়।

সেদিন আদালত আসাদুজ্জামানের জামিন নিষ্পত্তি করলেও মামলাটির অভিযোগপত্রে ওসিকে অন্তর্ভূক্ত না করার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের দুই জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর মতামত নেয়। এরপর আজ বৃহস্পতিবার মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।