বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য দেশ জুড়ে আলোচিত হচ্ছে। যেমন,মৈাসুমী পাখিদের দলে ঠাঁই হবেনা, টাউট বাটপাড়দের হটাতে হবে, হাইব্রিড মুক্ত করতে হবে, সংশোধন না হলে কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা, প্রভৃতি।
তার এইসব বক্তব্যের যথার্থতা প্রমানিত হবে দলের অভ্যন্তরে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনার সফলতায়। দল ক্ষমতায় এলেই মৌসুমী পাখি,টাউট বাটপাড়,হাইব্রিড ও সুবিধাভোগীদের তৎপরতা বেড়ে যায়। ইতোমধ্যেই দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কমিটিতে এরা নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের জায়গা দখল করে ফেলেছে। বিএনপি জামাতের চারদলীয় শাসনে যখন আওয়ামী লীগ সহ ১৪ দলীয় জোটের অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনীতি প্রতিষ্ঠায় যারা রাজপথে লাঠিপেটার শিকার হয়েছিল,আর যারা লাঠিপেটা করেছিল অনেক ক্ষেত্রে উভয়েই এখন একই দলীয় ব্যানারে মিশে গেছে।
হাইব্রিড নেতা,মৌসুমী নেতা,টাউট বাটপার এমন কি যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার আলবদরের সন্তানরাও ক্ষমতা,সুবিধা , ও নেতৃত্ব কর্তৃত্বের হালুয়া রুটির ভাগ পেতে দলে ঢুকে গেছে। কিন্তু কেন তাদের দলে নেয়া হল?আওয়ামী লীগে কি নেতাকর্মীর অভাব ছিল?তাদের দলে না ভিড়ালে কি দলের মিছিল মিটিং,সভা সমাবেশ করতে অসুবিধা হত?সরকার টিকে থাকতোনা?যারা দলে ভিড়িয়েছেন, কেন ভিড়িয়েছেন?তাদের ব্যাখ্যা কী? মৌসুমী পাখিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে মৌসুমী পাখিদের যোগদানকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।
আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত কমিটি ও তার সাধারন সম্পাদক কি সে চ্যালেঞ্জ নিতে পারবেন?২০তম কাউন্সিলে কাউন্সিলর ও পর্যবেক্ষকদের রাজনৈতিক তথা ব্যক্তিগত বিবরন লিপিবদ্ধ করা হয়েছে কিনা জানিনা।লিপিবদ্ধ হলে প্রক্রিয়ার শুরু বলা যায়।পত্রিকায় ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য শিরোনাম হয়েছে,টাউট বাটপাড়দের দল হতে হটাতে হবে।কিন্তু কিভাবে হটাবেন।এব্যাপারে কি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নিবেন।তা সুস্পষ্ঠ করতে হবে।নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক তার বক্তব্য,বিবৃতি ও ব্যতিক্রমী কার্যক্রমে দেশব্যাপী আগে থেকেই আলোচিত।কেউ কেউ উনাকে ভারতীয় প্রতিবাদী নায়ক ফাটাকেস্ট হিসেবেও অভিহিত করে থাকেন।নায়ক মিঠুনের মতো সর্বমহলে হানা দেয়া দুঃসাহসী ফাটাকেস্ট নয় তিনি কি পারবেন আওয়ামী লীগ দলীয় আগাছা পরগাছা নির্মূলে একজন রাজনৈতিক ফাটাকেস্ট হতে?
সেটা বিরোধী দল দমনের জন্য নয় তা দলের ভেতরে নেতৃত্ব,কর্তৃত্বের জবর দখলকারী মৈাসুমী পাখি,টাউট বাটপাড় ও যুদ্ধাপরাধী,রাজাকার আলবদরদের উত্তর সূরীদের হটানোর জন্য।তিনি কি পারবেন চাটুকার,তোষামোদকারীদের বাদ দিয়ে সমালোচকদের প্রাধান্য দিতে?ইতোমধ্যেই তিনি বলেছেন, সমালোচনা সহ্য করা উচিত।সমালোচনা মানুষকে শুদ্ধ করে।
ওবায়দুল কাদেরের এইসব বক্তৃতা,বিবৃতি কেবলই বক্তৃতা বিবৃতি হিসাবে আমরা দেখতে চাইনা।এগুলোর বাস্তব প্রয়োগ দেখতে চাই। বেশী কিছু দরকার নেই।ওবায়দুল কাদের সাধারন সম্পাদক হয়ে এপর্যন্ত যা বলেছেন সেগুলো বাস্তবায়িত হলেই তিনি বাংলার জনগনের কাছে রাজনৈতিক ফাটাকেস্ট বিশেষনে বিশেষায়িত হবেন।আওয়ামী রাজনীতিতে তিনি হবেন ব্যতিক্রমী,প্রশংসনীয় ও এক ঐতিহাসিক সাধারন সম্পাদক।যে ইতিহাস দলকে কন্টক মুক্ত করে মজবুত ভিত প্রতিষ্ঠায় উজ্জ্বল ভবিয্যতের দিকে এগিয়ে নেবে।
জিল্লুর রহমান,আব্দুল জলিল ও সৈয়দ আশরাফ(২০০৮ এর আগে)কে তটস্থ থাকতে হয়েছে দল বহির্ভূত শক্তির মোকাবেলায়।তখন ছিল প্রবল প্রতিপক্ষ বিএনপি জামাত ও ওয়ান ইলেভেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের মুখোমুখি প্রবল কোন প্রতিপক্ষ নেই। দলে যে আবর্জনা ও জঞ্জাল ঢুকে গেছে ওবায়দুল কাদের তা জানেন।তিনি এও বলেছেন,এজন্য দলে সমস্যা হচ্ছে। সুতরাং সমস্যা সাফ করতে বর্তমানে দলকে জঞ্জাল মুক্ত করাই হবে তার প্রধান কাজ।তিনি এও বলেছেন,দলীয় নেতাকর্মীদের অতীতের ইতিহাস দেখে তারপরে মূল্যায়ন করা হবে।এটা খুবই গুরুত্বপূর্ন কথা।
দলীয় নেতা,কর্মীদের আমলনামা নিয়ে দলকে গুছিয়ে নেয়া,সুবিধাবাদী,হাই ব্রিড,টাউট,বাটপাড় ও মৌসুমি পাখিদের বিতারন করে ত্যাগী নেতা কর্মীদের প্রতিষ্ঠাই আজকের সময়ের দাবী।কে কত সালে, সরকার দলে না বিরোধী দলে যোগদান করেছে।যোগদানের আগে কোন দল করতো। কোন দল দিয়ে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু।দল বিরোধী দলে থাকার সময় কার কি ভূমিকা এগুলোর মূল্যায়ন করতে হবে।আরও বলা হচ্ছে যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধুর খুনীর উত্তরসূরিরা কোন প্রকার দলীয় নেতৃত্ব ও সদস্য পদে থাকতে পারবেনা।
এই ক্যাটাগরিতে কারা পড়বে?যাদের নামে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে মামলা হয়েছে তারা?নাকি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের তালিকায় থাকা রাজাকার আলবদরের সন্তানরাও?বঙ্গবন্ধুর খুনীর উত্তরসূরি কারা?পলাতক কিংবা ফাৃঁসিতে মৃত্যুবরন কারীর সন্তানরা?নাকি খুনী মোশতাক ও তার মন্ত্রীসভার সদস্যদের সন্তান অথবা উত্তরাধিকাররাও।
জাতির সামনে এর পরিস্কার ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা দরকার।দেশ জুড়ে হাইব্রিড, মৌসুমী পাখি ও টাউট বাটপাড় হটানোর ঘোষনা সর্বত্র আলোচিত হচ্ছে।মানুষ এই ঘোষনাকে প্রত্যাশিত হিসেবেই দেখছে।এই প্রত্যাশা পূরনে ওবায়দুল কাদের কি পারবেন রাজনৈতিক ফাটাকেস্টর ভূমিকায় অবতীর্ন হতে?দেখা যাক সময়ের আয়না কী দৃশ্য দেখায় মানুষকে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)