দিল্লিতে কৃষক আন্দোলন নিয়ে বিক্ষুব্ধ ভারত। দেশটির কেন্দ্রে এ আন্দোলন আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। মার্কিন পপ তারকা রিহানা থেকে তরুণী পরিবেশবাদী গ্রেটা থুনবার্গের সমর্থন পাচ্ছে কৃষকরা, বিপক্ষেও আছে মত। দেশি আন্দোলনে বিদেশীদের হস্তক্ষেপ বন্ধে পাল্টা টুইট করেছেন শচীন টেন্ডুলকার, বিরাট কোহলিদের মতো তারকা ক্রিকেটাররা।
তারকাখ্যাতি কাজে লাগাতে মঙ্গলবার ভারতের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে হ্যাশট্যাগ ‘ইন্ডিয়াএগেনেস্টপ্রোপাগান্ডা’ ও ‘ইন্ডিয়াটুগেদার’ ব্যানারে টুইট করেছিলেন কিংবদন্তি শচীন। শুধু তিনিই নন, অক্ষয় কুমার থেকে শুরু করে বলিউড ও ক্রিকেটের অনেক তারকা টুইট করেছেন। তবে সব ক্ষোভ যেন গিয়ে পড়েছে শচীনের ঘাড়ে। কেউ কেউ তার শেষ টেস্টের টিকিট ছিঁড়ে পাল্টা টুইট করেছেন, কেউবা লিটল মাস্টারকে গালি দিয়েছেন বিজেপির দালাল বলে।
টুইটারে শচীনের বক্তব্য ছিল, ‘ভারতের সার্বভৌমত্ব নিয়ে কোনো আপোষ নয়। বাইরের অপশক্তিরা কেবল দর্শকই থাকবে, অংশ নেবে না। ভারতীয়রাই কেবল ভারতকে জানে, তাই সিদ্ধান্ত নেবে কেবল ভারত। চলুন সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকি।’
পরে তার টুইট রি-টুইট করেন বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট সৌরভ গাঙ্গুলি।
কিংবদন্তি ব্যাটসম্যানের সেই টুইট ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তৈরি হয় হট্টগোল। তার শেষ টেস্টের ছেঁড়া টিকিটের ছবি পোস্ট করে একজন লিখেছেন, ‘আমি আগে শচীনের ভক্ত ছিলাম। আজ থেকে সব শ্রদ্ধা হারালাম।’
আরেকজন লিখেছেন, ‘আপনি আগে কথা বললে রিহানাদের বলতে হতো না।’ কেউ আবার নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ওয়াশিংটনের ঘটনার সম্পর্ক টেনে টুইটে তুলে ধরেছেন, ‘এই সময়ে বাইরের লোক কথা বলেনি, অন্য দেশের বিষয়ে?’
কোনো ভক্ত শচীনকে জিজ্ঞেস করেছেন, বিজেপির হয়ে কথা বলার জন্য ছেলে অর্জুন টেন্ডুলকার ভারতীয় দলে জায়গা পাবেন কি না?
কেউ কেউ শচীনকে মনে করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন যে, এই কৃষকদের অনেকেই তার খেলা দেখতেন। তার করা প্রতিটা রান তাদের মুখে হাসি এনে দিত। সেই কৃষকদের নিয়ে কথা না বলে নীরব দর্শক হয়ে থাকার জন্যও শচীনকে ব্যঙ্গ করেছেন অনেকে।
মারিয়া শারাপোভা একবার বলেছিলেন যে তিনি শচীনকে চেনেন না। সেই ছবি পোস্ট করে এক নেট-নাগরিক সমর্থন করেছেন টেনিস তারকাকে। অনেকে লিখেছেন, বিজেপির হয়ে ব্যাট করতে নেমেছেন শচীন।
অটল বিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়ের একটি ঘটনাও তুলে ধরেছেন এইসব বিক্ষুব্ধ সমর্থকরা। সেসময় শচীন তার প্রিয় ফেরারি গাড়িটি কিনেছিলেন। যার কর মৌকুফ করে দিয়েছিল ভারত সরকার। সমালোচনাকারীদের মতে বাজপেয়ীর দলের প্রতি সেজন্য আনুগত্য প্রকাশ করছেন শচীন।
শচীনকে চুপ থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন অনেক ভক্ত। অনেকে তাদেরকে কৃষকদের কথা ভেবে দেখার উপদেশ দিয়েছেন। অনেক শচীন অনুরাগী জানিয়েছেন, এই টুইটের পর আর তারা শচীনভক্ত নন।
শুধু শচীনই নন, কোহলির টুইটের নিচেও দেখা যাচ্ছে একই ক্ষোভ। ভারত অধিনায়ক লিখেছেন, ‘আসুন আমরা সকলে মতবিরোধের এই মুহূর্তে ঐক্যবদ্ধ থাকি। কৃষকরা আমাদের দেশের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, এবং আমি নিশ্চিত যে শান্তি বজায় রাখতে এবং একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সব পক্ষের সঠিক সিদ্ধান্তই নেয়া হবে।’
বাদ যাননি রোহিত শর্মাও। লিখেছেন, ‘ভারত যখন এক হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখনই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। এখন প্রয়োজন সমাধান খুঁজে পাওয়া। আমাদের কৃষকরা আমাদের দেশের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, এবং আমি নিশ্চিত সবাই মিলে সমাধানের জন্য তাদের ভূমিকা পালন করবে।’