চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ঐক্যফ্রন্ট গড়ে কামাল করলো বিএনপি

দেশের রাজনীতিতে এখন নির্বাচনী উত্তাপ। সেই উত্তাপটা আরো খানিকটা বাড়িয়ে দিলো জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তবে বিভক্তি রেখা টেনেই নতুন এই জোটের আত্মপ্রকাশ। ঐক্যপ্রক্রিয়ার শুরুর দিককার কারিগর সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডক্টর বদরুদ্দোজা চৌধুরী আউট অফ সিন।

বিশিষ্ট আইনজীবী আওয়ামী লীগের এক সময়কার প্রেসিডিয়াম সদস্য আর এখন ছোটো দল গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল বেশ কিছুদিন ধরেই জাতীয় ঐক্যের কথা বলে আসছিলেন। ঐক্য গড়তে এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগ বিরোধীরা (এক সময় আওয়ামী লীগে থাকা অথবা আওয়ামী লীগের সুবিধা নেওয়ারা) বেশ কিছুদিন ধরেই নিজেদের মধ্যে আলোচনা চালিয়ে আসছিলেন।

জাতীয় ঐক্য গড়তেই কিছুদিন আগে মহানগর নাট্যমঞ্চে ড. কামাল, বি. চৌধুরীরা একমঞ্চে বসেছিলেন। সেখানে অতিথি হিসেবে হাজির হন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ওই সমাবেশের পর থেকেই নড়ে চড়ে বসে বিএনপি। জোটে যেতে এবং জোটের নেতৃত্ব হাতে রাখতে নানান অঙ্ক কষতে থাকে দলটি।

অঙ্ক- ১: দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে। অসুস্থতার পাশাপাশি বয়সও হয়েছে। শিগগিরই কারামুক্ত হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। তাই আন্দোলন ও নির্বাচনের মাঠে বিএনপির একজন হেভিওয়েট নেতা দরকার।

অঙ্ক-২: ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান লন্ডনে। তার বিরুদ্ধে আছে দুর্নীতি ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ। আবার ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় যাবজ্জীবন সাজা হওয়ার পর তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎও ধোঁয়াশার মধ্যে পড়েছে। এই মুহূর্তে তারেকের ঘাড়ে সওয়ার হতে চায় না বিএনপি। এক্ষেত্রে হিসেবটা আগেরটার মতোই। দরকার হেভিওয়েট কাউকে।

অঙ্ক-৩: ঐক্য প্রক্রিয়ায় যারা এক জোট হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই একসময় আওয়ামী লীগ করা অথবা আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী। সরকারের বিরোধিতায় তাদেরকে কাজে লাগিয়ে ফায়দা লোটার সুযোগটা একেবারেই হাতছাড়া করতে চায়না দলটি।

অঙ্ক-৪: নির্বাচনী জোট হলে খুব বেশি আসন তাদের ছাড়তে হচ্ছে না। মাহমুদুর রহমান মান্না, আ স ম রব, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, মোস্তফা মহসীন মন্টু, আব্দুল মালেক রতনসহ ৭ থেকে ৮টি আসন হয়তো ছাড়তে হবে। অর্থাৎ কম বিনিয়োগে বেশি লাভ।

অঙ্ক-৫: এক সময়ের বিএনপি মহাসচিব, সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে শুরু থেকেই ঐক্যের নেতৃত্বে দেখতে চায়নি বিএনপি। তাই তাকে ছেঁটে ফেলে ড. কামালকেই বেছে নেয় ফখরুল-মোশাররফরা। বি. চৌধুরীকে সরিয়ে দেয়া গেলে ঐক্য ফ্রন্টের নেতৃত্ব বিএনপির হাতেই থাকবে বলে বিশ্বাস করে দলটি।

এসব অঙ্ক মিলিয়েও ফেলে বিএনপি। আর ঐক্য ফ্রন্ট গঠনের সময়টাও দারুণ বেছে নেয় বিএনপি। ১০ অক্টোবর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে যাজ্জীবন সাজা হয় তারেক রহমানের। রায়ে বিএনপির কয়েকজন নেতা এবং বিএনপি-জামাত জোটের মন্ত্রী-প্রতিমমন্ত্রীদেরও সাজা হয়। রায় ঘোষণার পর থেকে রাজনীতির মাঠে বেশ বেকায়দায় পড়ে বিএনপি।

এ অবস্থায় রাজনীতির মাঠে এই আলোচনাটা বেশি দিন চলতে দিতে চায়নি তারা। তাই তড়িঘড়ি করে সব হিসেবে মিলিয়ে ডক্টর কামালকে দিয়ে ঐক্যফ্রন্টের ঘোষণা দেয়ার কাজটাও সেরে ফেললো। সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ও খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ৭ দফা দাবি ও ১৩টি লক্ষ্যের কথা জানালো ঐক্য ফ্রন্ট।

বিএনপি তাদের পুরোনো দাবিগুলোই তুলে ধরলো ঐক্যফ্রন্টকে দিয়ে। এ অবস্থায় গত কয়েক বছর ধরে খড়কুটোর মতো ভেসে বেড়ানো বিএনপি ড. কামালকে দিয়ে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট গড়ে রাজনীতির মাঠে আপাতত কামাল করে দিলো।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)