‘এ দায় আমায়, আমি জনগণের জন্য কিছুই করতে পারিনি’, দায় মেনে নিয়ে কান্না ভেজা চোখে সাংবাদিকের উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলেছেন বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম।
তিনি বলেন, ‘‘হাজার কোটি টাকার অসৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের লড়াই, গাবতলীর গরু হাটের ইজারাদার অতিরিক্ত খাজনা আদায় বন্ধ, কিছু অসাধু মাংস ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধ সবকিছুতেই ব্যর্থ হয়েছি। তাই ৪০ বছরের সাংগঠনিক কার্যক্রম মহাসচিবের পদ থেকে পদত্যাগ করলাম।’’
শনিবার বেলা ১১.৩০ মিনিটে ঢাকার রিপোটার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ মাংস সমিতি ও ঢাকা মেট্রেপলিটন মাংস ব্যবসায়ী সমিতির যৌথ সংবাদ সম্মেলনে রবিউল আলম একথা বলেন।
তিনি বলেন, আগামী সাতদিনের মধ্যে মাংস সমিতির অফিসের তালা খুলে দেয়া না হলে, মাংস সমিতিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে।
বদিউল আলম বলেন, জনগণ অতিরিক্ত দামের কারণে গরুর মাংস খেতে পারছে না। তাদের কথা চিন্তা করে রমজান মাসে গরুর মাংস ৫০০ টাকার পরবর্তে ৪৭৫ টাকায় বিক্রি করার সিদান্ত নেওয়া হয়।দক্ষিণ সিটিতে দাম মানা হলেও উত্তরে এই দাম মানা হচ্ছে না। তবে কিছু কিছু জায়গায় অসাদু ব্যবসায়ীরা আগের দামে বিক্রি করছে। চাঁদাবাজি যদি বন্ধ করা যায় তাহলে প্রতি কেজি মাংসের ৪০০ টাকায় নিয়ে আসা সম্ভব বলেও জানান তিনি।
২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, দেশবাসীকে যেন অল্প দামে মাংস খাওয়ানো যায়। তার জন্য সিটি করপোরেশনের ইজারা নির্ধারণ করে দেয়া হয় ৫০ টাকা। ২০১৫ সালে এসে অনিয়ম ভঙ্গ করে গাবতলীর ইজারাদার তাদের মতো করে খাজনা নেওয়া শুরু করে। মাংস ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত খাজনা দেওয়ায় মাংসের দাম এতো বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ১৫ মাস ধরে মাংস ব্যবসায় সমিতি গাবতলী গরু হাটের ইজারাদার ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছি। চাদাঁবাজি বন্ধে প্রায় ৬০০ আবেদন করেও কোনো সাড়া পাইনি।সিটি করপোরেশন একটি অভিযোগও তদন্ত করেনি এবং ইজারাদারদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
ঢাকা-শহরের মাংসের দোকান বিলুপ্তির পথে এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ঢাকা শহরে পাঁচ হাজার মাংসের দোকান ছিল।মাংসের দাম বেড়ে যাওয়ায় এরই মধ্যে তিন হাজার মাংসের দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। সামনে আরও বন্ধ হয়ে যাবে।মাংসের দাম নিয়ন্ত্রণে যদি না আনা যায়, তাহলে ২৬ শে রমজানের পর মাংসের দাম কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে সেটি আমাদেরও জানা যায়। যেহেতু মাংস ব্যবসায়ীরা দামটি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না সেহেতু আমার এই পদত্যাগ।
গরুর মাংস দামের এই অনিয়মের বিরুদ্ধে মিডিয়াদের ভূমিকার ওপর জোড় দিয়ে পদত্যগ করা মহাসচিব বলেন, সমাজের ভালো কিছু প্রতিষ্ঠার জন্য মিডিয়া সবসময় হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছে। মিডিয়া ক্যামেরা দেখলে অসৎ মাংস ব্যবসায়ী ও গাবতলী গরু হাটের ইজারাদারও ভয়ে পালিয়ে যায়। মিডিয়া তাদের দুর্নীতিগুলো সঠিকভাবে দেখাতে পারেন তাহলে মাংসের বাজারের চিত্র ঘুরে যাবে।
প্রসঙ্গত: ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মতামত নিয়ে রমজান উপলক্ষে গরুর মাংসের দাম কেজি প্রতি ৪৭৫ টাকা নির্ধারণ করে দেন। এ ছাড়া বোল্ডার বা বিদেশি গরুর ক্ষেত্রে ৪৪০ টাকা, মহিষ ৪৪০ টাকা, খাসি ৭২৫ টাকা ও ভেড়া বা ছাগীর মাংস প্রতিকেজি ৬২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।