চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

এ উদ্যোগ ছড়িয়ে পড়ুক দেশের সব নগরে

আগামী ১৭ ডিসেম্বর থেকে সচিবালয়ের চারপাশের এলাকাকে হর্ন বিহীন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। সচিবালয়ের চারপাশ অর্থাৎ জিরো পয়েন্ট, পল্টন মোড় ও সচিবালয় লিংক রোড হয়ে জিরো পয়েন্ট এলাকাকে নীরব জোন বা হর্ন বিহীন এলাকা হিসেবে কার্যকর করা হবে। ওই এলাকায় চলাচলকালে যানবাহনে কোন প্রকার হর্ন বাজানোর অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে প্রথম অপরাধের জন্য অনধিক ১ মাস কারাদণ্ডে বা অনধিক ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য অনধিক ৬ মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. মো. বিল্লাল হোসেনের সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এবিষয়ে করণীয় নির্ধারণী এক এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিষয়টি খুবই ইতিবাচক বলে আমরা মনে করি।

হর্ন শব্দদূষণের এবং স্বাস্থ্যহানির অন্যতম কারণ। চিকিৎসকদের মতে বিকট শব্দে হর্ন সুস্থ মানুষের জন্য বিশেষ করে শিশু, শিক্ষার্থী এবং রোগীদের জন্য ভয়ানক। এর কারণে মানুষ বধিরতার মতো রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ ছাড়া হঠাৎ হর্ন বাজানোর ফলে মানুষের মনে আচমকা ভীতির সৃষ্টি হয়, এই ভীতি মানসিক রোগের কারণ হতে পারে। সাম্প্রতিক বছগুলোতে শব্দ দূষণ ও অযথা হর্ন বাজানো নিয়ে নানা সচেতনতা ও কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।

উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, একজন সুস্থ মানুষ ২০ থেকে ২০,০০০ স্পন্দনের শব্দ শুনতে পারে। মানুষের শব্দ গ্রহণের স্বাভাবিক মাত্রা ৪০-৫০ ডিবি পর্যন্ত। এমন অনেক হর্ন রয়েছে, যে হর্নগুলো ৬০ ডিবি থেকে শুরু করে ১২০ ডিবি পর্যন্ত শব্দ উৎপন্ন করে। সাধারণত ৬০ ডিবি শব্দ মানুষকে সাময়িকভাবে এবং ১০০ ডিবি শব্দ সম্পূর্ণ বধিরতা সৃষ্টি করতে পারে।

মোটরসাইকেলে যে হর্ন বাজানো হয়, তা অপেক্ষাকৃতভাবে গাড়ির শব্দের চেয়ে কম ডেসিবেল (ডিবি) সমৃদ্ধ। তবে বেশির ভাগ গাড়িতে দ্বৈত হর্ন ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া বাণিজ্যিক গাড়িগুলোতে (বাস, ট্রাক, টেম্পো) প্রাইভেট গাড়ির চেয়ে বেশি ডিবির হর্ন সংযুক্ত করে দেয় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারের ওপর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সেগুলো মনিটর করার মতো যথা সংখ্যক জনবলের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। তারপরেও বিভিন্নসময় সপ্তাহ ও পাক্ষিক ভিত্তিতে অভিযান নয়তো কর্মসূচির মাধ্যমে এ বিষয়ে কাজ করতে দেখা যায়। যা চালক ও যানবাহন মালিকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সভায় এই হর্ন বিরোধী এই নিয়ম ধীরে ধীরে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানানো হয়েছে, যা আশাজাগানিয়া। শুধু সরকারি নিয়মের কারণে বা দণ্ডের ভয়ে হর্ন বিষয়ে নিয়ম মানলে চলবে না, যানবাহন মালিক ও চালক সবাইকে বিষয়টি ভালভাবে অনুধাবন করে কার্যকর করতে হবে। আন্ত:মন্ত্রণালয়, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের যথাযথ কর্মসূচির মাধ্যমে হর্ন বিহীন এই ইতিবাচক বিষয়টির চর্চা সারাদেশের সব যানবাহনবহুল নগরে ছড়িয়ে পড়ুক, এই আমাদের প্রত্যাশা।