চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘এসি আশফাককে পেয়ে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ টিম গর্বিত, আমি মুগ্ধ’

গেল মাসের ৬ তারিখে মুক্তি পাওয়া ‘ঢাকা অ্যাটাক’ এর উন্মাদনা যেন থামছেই না। দেশের প্রেক্ষাগৃহ ছাড়াও বিশ্বের বেশকিছু দেশের সিনেপ্লেক্সে স্বগৌরবে চলছে ছবিটি। দীপঙ্কর দীপনের পরিচালনায়, আরেফিন শুভ, মাহিয়া মাহি, এ বি এম সুমন, কাজী নওশাবা কিংবা তাসকিনের প্রশংসা এখনও সবার মুখে। কিন্তু পুরো চলচ্চিত্রের নেপথ্যের যে কারিগরের নাম উল্লেখ না থাকলে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ অসম্পূর্ণ থেকে যায়, তিনি সানী সানোয়ার।

‘ঢাকা অ্যাটাক’ এর বিভিন্ন চরিত্র এবং এর অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে লেখা শুরু করেছেন ‘ঢাকা অ্যাটাক’ চলচ্চিত্রের কাহিনীকার এবং বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (কাউন্টার টেররিজম ইউনিট) সানী সানোয়ার। প্রথমে তিনি সিরিজ লেখা শুরু করছিলেন এসি আবিদ কে দিয়ে। গল্প বলেছিলেন ছবিতে বোম্ব ডিজপোজাল ইউনিটের ইনচার্জ এসি আবিদ চরিত্রের জন্য আরেফিন শুভকে প্রস্তাব দেয়ার গল্প, আবিদ চরিত্রে নিজেকে ফুটিয়ে তুলতে শুভ’র নিরন্তর প্রচেষ্টার গল্প। আর এবার সেই ধারাবাহিকতায় তিনি লিখলেন এসি আশফাকের গল্প।

এসি আশফাককে নিয়ে সানী সানোয়ারের বিশ্লেষণধর্মী লেখাটি হুবুহু তুলে ধরা হল-
‘এসি আবিদ চরিত্রে আরেফিন শুভকে কাস্ট করে আমরা স্বস্তি পেলেও এসি আশফাক চরিত্রে কাউকে কাস্ট করতে বেশ কাঠখড় পুড়াতে হয়েছে। এই চরিত্রটি ছিল একেবারেই ভিন্ন রকমের একটি চরিত্র যার ডায়ালগ খুব কম কিন্তু অভিব্যক্তি অনেক বেশী। এই চরিত্রটি ছাড়াও গল্প এগিয়ে যেতে পারত, কিন্তু এটা ছিল রাজমুকুটের একটি টুকরা হীরক যার দ্যোতি থেকে দৃষ্টি এড়ানো দায়। এসি আবিদ এবং এডিসি আশফাক কাণ্ডারির হয়ে সিনেমার কাহিনী এগিয়ে নিয়ে গেছে, কিন্তু এসি আশফাক অ্যাকশন এবং পারিবারিক আবেগের আধার হয়ে পুরো কাহিনী জুড়ে দীপ্তিমান। আমার কল্পনার আশফাক ছিল স্বল্পভাষী, সুঠামদেহী এবং একান্ত বাধ্যগত। এই আশফাকের রূপ ধারণ করতে পারবে এমন কাউকে খুঁজে পাওয়াও দায় হয়ে গিয়েছিল।

আরেফিন শুভকে কাস্ট করার পর এদেশের আর কাউকেই এই চরিত্রের জন্য যুৎসই মনে হচ্ছিল না। দু’টি চরিত্রের জন্যই শুভ ছিল পারফেক্ট। যাহোক, পরে নেট ঘেটে দেশীয় সুদর্শন বডি বিল্ডারের খোঁজে নেমে গেলাম – এসি আশফাক চরিত্রে কাউকে কাস্ট করার জন্য। এক দেখাতে পেয়েও গেলাম। কল্পনার এসি আশফাকের সাথে বাস্তবের এবিএম সুমনের অসম্ভব মিল খুঁজে পেলাম। তার সাথে প্রথম মিটিং হয়েছিল (মিন্টু রোডে) আমার অফিসে। সুদর্শন, নম্র, সদালাপী এবং অত্যন্ত পেশাদার অভিনেতা হিসেবে প্রথম দিনেই তাকে মনে ধরে গেল। ফলে তিনি টিমে ঢুকে গেলেন। তাকে পেয়ে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ টিমের কাস্টিং-এর ভিত্তি আরও মজবুত হয়ে গেল।

স্বল্প সময়ের গ্রোমিং আপ প্রোগ্রাম বা প্র‍্যাক্টিসের মাধ্যমে এবিএম সুমন পুরোদস্তুর পুলিশ হয়ে উঠল। অস্ত্র ধরার কৌশল, স্টেপিং, দলগত মুভমেন্ট কৌশল প্রভৃতি বিষয়ে তাকে প্রশিক্ষিত করা হল। সত্যিকারের সোয়াট টিম লিডার এবং সোয়াট সদস্যদের সাথে তাকে বেশ কিছু সময় কাটানোর বন্দোবস্ত করা হল। এতে আকাঙ্ক্ষিত সময়ের আগেই তিনি একজন পরিপূর্ণ এসি আশফাক হয়ে উঠল। এরপর যা হল তা এক কথায় ইতিহাস।

এসি আশফাক চরিত্রটি যে মানুষের এতটা মনে ধরবে তা আমি আগে কখনও কল্পনা করিনি। তবে, এই জনপ্রিয়তার ভিত্তি সুমনের অক্লান্ত শ্রম এবং পেশাদারিত্ব। প্রতিটি দৃশ্য স্যুট করার আগে এবং পরে সে আমার চোখের দিকে তাকাতো, আর জানতে চাইত –‘সানী ভাই, হয়েছে? আপনি হ্যাপী?” কাজের মান ভাল করার লক্ষ্যে তার এই একাগ্রতাই ‘এসি আশফাক’ চরিত্রটিকে এতটা উপরে পৌছে দিয়েছে। এছাড়াও পরিচালকের মুন্সিয়ানা, সকলের টিম ওয়ার্ক আর দর্শকের রুচিবোধের বদৌলতে ‘এসি আশফাক’ চরিত্রটি দীর্ঘদিন দর্শকের মনে লেগে থাকবে।

ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির প্রতি ভালবাসা, দেশপ্রেম, পরিশ্রম করার মানসিকতা, পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ আর আনুগত্য বজায় রেখে কাজ করেন এবিএম সুমন। তাই সামনে তার এই ইতিহাস গড়ার কাজ অব্যাহত থাকবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। ঢাকা অ্যাটাক টিম তাকে পেয়ে গর্বিত। আর আমি মুগ্ধ।’